মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডের রামপাশা গ্রামের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত ধলাই নদীর ভাঙ্গনে দীর্ঘদিন থেকে ঝুঁকিতে আছেন নদী পারের পরিবারগুলো। প্রতি বছরের বর্ষা মৌসুমী ভাঙ্গনের ফলে ভিটা মাটি হারিয়ে অনেক পরিবার নিঃস্ব হয়েছে। বর্তমানেও এ গ্রামের বেশ কয়েকটি পরিবার ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে।
এলাকাবাসীদের সাথে আলাপ ও সরেজমিন পরিদর্শনে জানা যায়, বøক দ্বারা বাঁধ নির্মাণ তাদের দীর্ঘদিনের দাবী। কিন্তু আজও তাদের এ দাবী পূরণ হয়নি। বছর বছর নদী থেকে ২০-৩০ ফুট সরিয়ে বাঁধ দেওয়া হয়। আবার তা ভেঙ্গে বসত বাড়ীর সাথে লেগে যায়, ফলে বসত বাড়ী ও সহায় সম্পদ হারাতে হয় অনেক গ্রামবাসীর। বর্তমানে নিখিল চন্দ্র মালাকারের বাড়ী ভায়া রফিক বখতের বাড়ী পর্যন্ত অংশটুকু বেশি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। স্থানীয়দের দাবি, রামপাশা গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া নদী ধলাই নদীর ভাঙনে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে সাধারণ মানুষের। এটি রোধে স্থায়ী কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। ফলে মানুষের বাড়ি-ঘর, ভিটে-মাটি নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
বিগত দশকে এ নদী ভাঙ্গনে এ গ্রামের বাসিন্দা মোঃ আব্দুর রব, আব্দুর রাজ্জাক চৌধুরী, আব্দুর রহিম মিয়া, প্রানেশ পাল, বিক্রম পাল, হারিছ মিয়া, এম,এ, ওয়াহিদ রুলু, মোঃ তুফা মিয়া, সুনীল মালাকার, নিখিল চন্দ্র মালাকার, যোগীন্দ্র মালাকার, মনিন্দ্র মালাকার, জয়ধন মালাকার, নারদ দেবনাথ, নিধু দেবনাথ, সরোজিনী রানী দেবী, জমির উদ্দিন, করিম মিয়া, হক আলী, রফিক বক্ত, খুশি শব্দকর, অনিল শব্দকর, রাকেশ শব্দকর, দীনেশ শব্দকর, হাছন মিয়া, মটর শব্দকর, গিরীশ শব্দকর, উমেশ মালাকার, মুজিদ মিয়া প্রমুখ বসত বাড়ী ও ভূ-সম্পত্তি হারিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। বর্তমানে নদী পার দিয়ে পৌরসভা কর্তৃক পানির পাইপ লাইন স্থাপন করা হয়েছে। নদীপার ভাঙ্গলে পানির পাইপ লাইনও ক্ষতিগ্রস্থ হবে।
ধলাই নদী পারের বাসিন্দা নিখিল মালাকার বলেন, এ পর্যন্ত ৭-৮ বার নদীর পাশ থেকে সরিয়ে ঘর নির্মান করে বসবাস করছি। বর্তমানে আর সরানোর জায়গা নেই। আমার বসতবাড়ী রক্ষায় স্থায়ী ব্যবস্থা নিতে সরকারের প্রতি আকুল আবেদন জানাই। মনির মিয়া বলেন, একদম নদীর পার ঘেঁষে আমার বসত ঘর। ভেঙ্গে নিলে আর যাওয়ার জায়গা নেই। সুশীল দেবনাথ বলেন, ভিটা বাড়ী অনেক আগেই হারিয়েছি। বর্তমানে যেখানে আছি তাও অন্যের জায়গা, এটা ভেঙ্গে নিলে আর যাওয়ার জায়গা নেই। মিন্টু মালাকার বলেন, আমি শৈশব থেকে দেখছি নদী ভাঙ্গছে আর আমার পরিবারও বসতবাড়ী সরিয়ে বসবাস করার চেষ্টা করছে। এখন আর সরানোর জায়গা নেই। রফিক বক্ত বলেন, আমারও অনেক জমি জমা নদী ভাঙ্গনে হারিয়েছি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পানি উন্নয়ন বোর্ড, মৌলভীবাজার এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো: জাবেদ ইকবাল বলেন, ধলাই নদীর ১৪ কি:মি: এলাকায় ব্লক নির্ম্মাণের জন্য একটি প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে রামপাশা এলাকাও অন্তর্ভূক্ত আছে। প্রস্তাবটি অনুমোদন হলে টেন্ডার আহবান করে কাজ শুরু হবে।
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের বাগান থেকে চোরাইকৃত এক পিকআপ বাঁশ(প্রায় ছয় হাজার বাঁশ) ও দুটি ব্যাটারি চালিত অটোরিকশাসহ ৩জনকে র্যাব-৯ এর একটি অভিযানিক টিম আটক করে। সোমবার(১১ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত ৩টার দিকে উপজেলার ভানুগাছ বাজারের ১০নং মোড়ে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-৯, সিপিসি-২(শ্রীমঙ্গল ক্যাম্প) এর একটি আভিযানিক দল আটক করে। আটককৃতরা হলেন- কমলগঞ্জ সদর ইউনিয়নের বাগমারা গ্রামের রূপালী, শাহাবুদ্দিন ও করিম মিয়া।
শ্রীমঙ্গল র্যাব ক্যাম্পের কমান্ডার সিনিয়র এএসপি গোলাম কিবরিয়া বলেন, লাউছড়া জাতীয় উদ্যানের বাগান বাংলাদেশের দ্বিতীয় অক্সিজেন ফ্যাক্টরি হিসাবে পরিচিত। এই অক্সিজেন ফ্যাক্টরিকে বনদস্যুরা ধ্বংস করে ফেলছে। যাহার ফলে বাগান উজাড়ের পাশাপাশি বাগানে বসবাসরত বিভিন্ন প্রজাতির জীবজন্তু পশুপাখি বিলুপ্ত হওয়ার পথে। তাই তাদের বিরুদ্ধে আমরা সর্বত্র সজাগ থাকবো এবং এ ধরনের অভিযান অব্যাহত রাখব। আটককৃত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কমলগঞ্জ থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
জীববৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানটি বিভিন্ন প্রজাতির বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল ও প্রজনন ক্ষেত্র। এই বনের মধ্য দিয়ে ঢাকা-সিলেট রেলপথ ও সড়ক পথ চালু রয়েছে। অধিক রেল ও যানবাহন চলাচলের কারণে সড়কপথে ও ট্রেনের চাকায় পিষ্ট হয়ে বন্যপ্রাণী মারা যাচ্ছে ও আহত হচ্ছে। পাশাপাশি সড়ক দুর্ঘটনা রোধে ট্রাফিক সিগনাল মেনে চলুন, সর্ব্বোচ্চ গতিসীমা জাতীয় উদ্যানের ভেতর দিয়ে ২০ কিলোমিটার গতিতে চলাচল করার জন্য সাইনবোর্ড স্থাপন করেছেন মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার মো: মনজুর রহমান পিপিএম(বার)।
গত শুক্রবার (৮ সেপ্টেম্বর) বিকালে কমলগঞ্জের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের প্রধান ফটকের সামনে ‘সড়ক দুর্ঘটনা রোধে ট্রাফিক সিগনাল মেনে চলুন, সর্ব্বোচ্চ গতিসীমা ২০ কিলোমিটার’ এমন লেখা জনসচেতনতামূলক বিলবোর্ড স্থাপনের আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন পুলিশ সুপার মো: মনজুর রহমান পিপিএম(বার)। পরে ওই দিন বিকাল ৬টার দিকে শ্রীমঙ্গল বাইক্কাবিল হাইলহাওরে পাখিশিকার বন্ধে জনসচেতনতামূলক কয়েকটি বিলবোর্ড স্থাপন করা হয়। সচেতনতামূলক কার্যক্রমে উপস্থিত ছিলেন মৌলভীবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার
(প্রশাসন ও অর্থ) সুদর্শন কুমার রায়, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) মোহসিন, কমলগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ সঞ্জয় চক্রবর্তী, শ্রীমঙ্গল থানার অফিসার ইনচার্জ জাহাঙ্গীর হোসেন সরদারসহ বন্যপ্রাণী ও পরিবেশ রক্ষায় সেচ্ছাসেবী সংগঠনের নেতবৃন্দ এবং জেলা ও থানা পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এ ব্যাপারে মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার মো: মনজুর রহমান পিপিএম (বার) বলেন, লাউয়াছড়া বন ও বাইক্কাবিল বন্যপ্রাণী এবং পাখিদের অভায়শ্রম। বনের ভেতর বেপরোয়া গতিতে গাড়ী চালালে বন্যপ্রাণীর জীবন ঝুঁকির সম্ভবনা রয়েছে এবং দুর্ঘটনাও ঘটবে। এসব বিবেচনায় সচেতনতার জন্য বিলবোর্ড স্থাপন করা হয়েছে। তিনি সবাইকে ট্রাফিক আইন মেনে চলার নির্দেশনা দেন।