এখন কি আমরা কোন বড় যুদ্ধের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছি?
লন্ডনে হাজার হাজার মানুষের মিছিল
গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি এবং মধ্যপ্রাচ্যে ক্রমবর্ধমান সংঘাতের অবসানের আহ্বান জানিয়ে ফিলিস্তিনিপন্থী বিক্ষোভকারীরা লন্ডনে মিছিল করেছে।
গত শনিবার, ৫ অক্টোবর, হাজার হাজার মানুষ রাসেল স্কোয়ার থেকে হোয়াইটহল পর্যন্ত হেঁটে ডাউনিং স্ট্রিটের সামনে সমাবেশে যোগদান করে। ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের গণহত্যার এক বছর পূর্তি উপলক্ষে প্যালেস্টাইন সলিডারিটি ক্যাম্পেইনসহ বিভিন্ন গ্রুপের মাধ্যমে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়, যাতে অংশ নিতে সারা দেশ থেকে বিভিন্ন পরিচয়ের মানুষ আসেন।
“এখনই যুদ্ধবিরতি” এবং “এখন বোমাবর্ষণ বন্ধ করুন”-এর মতো বার্তা সম্বলিত ফিলিস্তিনি পতাকা এবং প্ল্যাকার্ড বহন করতে লোকজনকে দেখা যায়।
মিছিলকারীদের মধ্যে ‘বেঙ্গলিজ ফর প্যালেস্টাইন’ ব্যানারে পূর্ব লন্ডনের বাঙালিদের একটি দল ছিল। দলের সভাপতি নুরুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘গত ১২ মাস ধরে, ফিলিস্তিনিরা তাদের স্বাধীনতার সংগ্রামে সবচেয়ে অন্ধকার মুহূর্তের মুখোমুখি হয়েছে, কারণ ইসরায়েল তাদের বিরুদ্ধে নজিরবিহীন নৃশংসতা চালিয়েছে, গাজায় ফিলিস্তিনিদের ওপর গণহত্যামূলক হামলা চালিয়েছে।’
বাঙালির মিছিলে ছিলেন টাওয়ার হ্যামলেটসের প্রাক্তন কাউন্সিলর শহীদ আলী, বর্ণবাদ বিরোধী এক্টিভিস্ট রফিক উল্লাহ, টাওয়ার হ্যামলেটস্ প্রাক্তন কাউন্সিলর জয়নাল উদ্দিন, কমিউনিটি অ্যাক্টিভিস্ট তৈমুস আলী, লুকমান উদ্দিন, আলা মিয়া আজাদ, জামাল আহমেদ খান, আনসার আহমেদ উল্লাহ, মোহাম্মদ সিদ্দিক, শফিক আহমেদ, মজিবুল হক মনি, সৈয়দ গুলাব আলী প্রমুখরা। সমাবেশে তারা বলেন যে ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক ইসরায়েলের সাথে সমস্ত অস্ত্র ব্যবসা বন্ধ করার দাবিতে তারা মিছিল করছেন। আরও ফিলিস্তিনি জনগণের স্বাধীনতা ও ন্যায়বিচারের দাবিতে তাদের এ মিছিল।
প্যালেস্টাইন সলিডারিটি ক্যাম্পেইনের বেন জামাল বলেছেন-‘শনিবার হাজার হাজার ফিলিস্তিনি জনগণের উপর ইসরায়েলের গণহত্যার এক বছর উপলক্ষে তারা এ মিছিল করেছেন। ইসরাইলের এ পশুসুলভ আচরণ গণহত্যা তো বটেই তারও উপরের স্তরের কোন এক উচ্চারণ যা কমপক্ষে ৪১,০০০ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে। এ গণহত্যাযজ্ঞ গাজার সামাজিক অবকাঠামো ধ্বংস করেছে এবং ২ মিলিয়নেরও বেশি মানুষকে বাস্তুচ্যুত করেছে। কয়েক মাস ধরে, আমরা সতর্ক করে আসছি যে ইসরায়েলকে তার অপরাধের জন্য দায়মুক্তি প্রদান করলে তা হাজার হাজার ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিককে শুধু হত্যার ঝুঁকির মধ্যেই রাখবে না বরং একটি বিস্তৃত অগ্নিসংযোগের ঝুঁকি তৈরি করবে।
তিনি আরও বলেন যে গত সপ্তাহে, আমরা এই বাস্তবতাকে উন্মোচিত হতে দেখেছি, ইসরায়েল লেবানন এবং অন্যান্য প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলিতে হামলা চালিয়েছে যা শত শত বেসামরিক নাগরিক সহ ১,০০০ জনেরও বেশি লোককে হত্যা করেছে, যাদের মধ্যে অনেক শিশু ছিল। এখন, আমরা একটি বড় যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছি।
সম্প্রতি সেপ্টেম্বর মাসে নন্দন আর্টসের আয়োজনে লন্ডন বাংলা ফেস্টিভ্যাল ২০২৪ অনুষ্টান হয়ে গেলো পূর্ব লন্ডনের অট্রিয়াম হলে। অনুষ্টানের শুরুতে একটা সেমিনারের আলোচ্য বিষয় ছিল ‘সংস্কৃতির সংযোগ: ব্রিটিশ বাংলাদেশী এবং যুক্তরাজ্য বাংলাদেশ সম্পর্কের বিবর্তন’।
গত ৮ সেপ্টেম্বর লন্ডনের দ্য অ্যাট্রিয়াম ইভেন্ট শুরু হওয়া এই ইভেন্টে ব্রিটিশ বাংলাদেশি প্রবাসীদের যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক, ঐতিহাসিক এবং রাজনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলায় তাদের অবদান নিয়ে সমৃদ্ধ আলোচনা হয়। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, যাদের মধ্যে ছিলেন, সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. জাকের উল্লাহ, শেফিল্ড ইউনিভার্সিটির শিক্ষক ড. বিদিত দে, সাবেক বিবিসি সাংবাদিক শামীম চৌধুরী, মাহমুদ হাসান এমবিই, বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের নেতা জালাল উদ্দিন রাজন, রেডব্রিজ উইমেন চ্যাম্পিয়ন কাউন্সিলর সায়মা আহমেদ, বাংলাদেশ ক্যাটারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ওলি খান এমবিই, কমিউনিটি এক্টিভিস্ট ডা. আনসার আহমদ উল্লাহ ও সঙ্গীতশিল্পী এবং সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব হিমাংশু গোস্বামী।
এই প্যানেল আলোচনা ব্রিটিশ বাংলাদেশিদের ক্রমবর্ধমান ভূমিকা এবং কীভাবে তারা উভয় দেশের সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করছে, সেই বিষয়ে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করেছে। আলোচনায় বক্তারা ব্রিটিশ বাংলাদেশি সম্প্রদায়ের বিভিন্ন ক্ষেত্রের অবদান এবং তাদের সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক ভূমিকাকে বিশেষভাবে তুলে ধরেন।
নন্দন আর্টস এই সফল ইভেন্টের মাধ্যমে যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশের মধ্যকার সম্পর্ককে আরও গভীর করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। আয়োজকরা জানান, ভবিষ্যতে এমন আরও গুরুত্বপূর্ণ ইভেন্ট আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে।
লন্ডন বাংলা ফেস্টিভ্যালের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ ও বিলেতের বরেণ্য সাংস্কৃতিক এবং কমিউনিটি ব্যক্তিবর্গদের সম্মাননা প্রদান করা হয়। তারা হলেন ১. বিদিত লাল দাস, জন্ম ১৯৩৬, মৃত্যু ২০১২, লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট মিউজিক অ্যাওয়ার্ড। ২. হিমাংশু গোস্বামী, লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট মিউজিক অ্যাওয়ার্ড। ৩. মাহমুদ হাসান এম বি ই, লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট কন্ট্রিবিউশন টু কমিউনিটি ইন কেয়ার সেক্টর। ৪. ড: জিয়াউদ্দিন আহমেদ, কন্ট্রিবিউশন টু কমিউনিটি ইন এডুকেশন এন্ড মেডিকেল সেক্টর এবং ৫. বিমলেন্দু দাস, জন্ম ১৯২১, মৃত্যু ২০১১, লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট কান্ট্রিবিউশন টু কমিউনিটি ইন সোশ্যাল ওয়ার্ক। অতিথিদের সম্মাননা প্রদান করেন সংসদ সদস্য রুশনারা আলী।
বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে উপমহাদেশের প্রখ্যাত শিল্পী শ্রীকান্ত আচার্য্য সঙ্গীত পরিবেশন করেন। নন্দন আর্টসের কর্ণধার রাজীব দাস পুরো অনুষ্টানটি পরিচালনা করেন।