আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বাংলাদেশি জলবায়ু বিশেষজ্ঞ, ‘ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেইঞ্জ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট’এর পরিচালক অধ্যাপক ড. সালিমুল হকের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মোঃ শাহাব উদ্দিন, উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পরিবেশ ও জলবায়ু বিষয়ক বিশেষ দূত ও এ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী এবং মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ।
আজ পৃথক পৃথক শোকবার্তায় তাঁরা মরহুমের রুহের মাগফেরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
শোকবার্তায় পরিবেশমন্ত্রী জানান, বিশ্বের শীর্ষ জলবায়ু বিশেষজ্ঞদের মধ্যে অন্যতম অধ্যাপক সালিমুল হক দীর্ঘকাল ধরে পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে জাতিসংঘের ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন ক্লাইমেট চেঞ্জ ও গ্লোবাল সেন্টার অন অ্যাডাপটেশনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে কাজ করে এ বিষয়ে অসামান্য অবদান রেখেছেন। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় তিনি শুধুমাত্র বাংলাদেশের পক্ষেই ছিলেন না, বরং সমগ্র বিশ্ব সম্প্রদায়ের কল্যাণে কাজ করেছেন। জাতিসংঘের সকল জলবায়ু সম্মেলনে অংশগ্রহণ করা তাঁর মতো একজন অভিজ্ঞ জলবায়ু বিশেষজ্ঞের মৃত্যু বিশ্বের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি।
উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক জলবায়ু বিশেষজ্ঞ সালিমুল হক শনিবার রাতে ৭১ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন। মৃত্যকালে তিনি স্ত্রী, এক ছেলে, এক মেয়ে এবং অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে আন্তর্জাতিক কন্যা দিবস উপলক্ষে উপজেলঅ মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেছে সুবিধাবঞ্চিত শব্দকর সম্প্রদায়ের মেয়ে ইতি রানী কর। সে দয়াময় সিংহ উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থী ও তিলকপুর এনসিটিএফ এর চাইল্ড জার্নালিষ্ট। প্রতীকী দায়িত্ব নিয়েই উপজেলার শিশু-কিশোর ও নারীদের জন্য সর্বক্ষেত্রে নিরাপদ পরিবেশ সুনিশ্চিত করতে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অনুরোধ জানায় ইতি রানী কর। এ সময় বাল্যবিয়ে, নারী নির্যাতন ও নিপীড়ন বন্ধ ও মাদকদ্রব্যের নিয়ন্ত্রণ রোধে আলোচনা করা হয়।
মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় কমলগঞ্জ উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মোছা: হোসনে আরা তালুকদারের কাছ থেকে প্রতীকী দায়িত্ব গ্রহণ করে ইতি রানী কর। এক ঘণ্টার জন্য তার অধীনস্থ হন উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এ সময় ইতিকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান।
গার্লস টেকওভার মেয়েদের অধিকারে বিনিয়োগ করুন: আমাদের নেতৃত্ব, আমাদের কল্যাণ– এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের সহযোগিতা ও রিলায়েন্ট উইমেন ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন(আরডবিøউডিও) এর উদ্যোগে উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয়ে এ আয়োজন করা হয়।
আরডবিøউডিও-ওয়াই মুভ প্রকল্প, কমলগঞ্জ এর কর্মকর্তা বাবুল কুমার সিংহের সঞ্চালনায় এ সময় বক্তব্য সাংবাদিক প্রনীত রঞ্জন দেবনাথ, উপজেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নিরঞ্জন দেব, এনসিটিএফ তিলকপুর এর সদস্য জুতিকা রানী কর, সুজন কর প্রমুখ।
ইতি রানী কর বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমি এনসিটিএফ এর সাথে কাজ করছি, তবে আমার জন্য এই ধরনের অভিজ্ঞতা নতুন, এক ঘন্টার প্রতীকী উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করায় নিজেকে খুব গর্বিত মনে করছি। সমাজের নেতৃস্থানীয় জায়গাগুলোতে মেয়েদের অংশগ্রহণের জন্য কাজ করার অঙ্গীকার করছি। ভালো করে পড়াশোনা করে দেশের সেবা করা এমন কিছু কাজের সাথে যুক্ত হতে চাই। আমি কোনো দিন ভাবতেও পারিনি এত বড় সরকারি প্রতিষ্ঠানের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার চেয়ারে বসব। আমি বড় হয়ে এই ম্যাডামের মতো নারী সমাজসহ দেশ ও মানুষের জন্য কাজ করে যাব। আমি অবহেলিত সুবিধাবঞ্চিত শব্দকর সম্প্রদায়ের মেয়ে। শব্দকর সম্প্রদায়ের মেয়ে হয়ে আজকে যে সম্মান পেয়েছি তা আমাকে অনুপ্রেরণা জোগাবে।
উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মোছা: হোসনে আরা তালুকদার জানান, একসময় শিশুরাই সমাজ ও দেশের বিভিন্ন বড় জায়গায় আসবে, সমাজকে নেতৃত্ব দেবে। এই ধরনের কর্মসুচীর মাধ্যমে কিশোরী, কন্যা শিশু অথবা যুব নারীদের নেতৃত্ব প্রদানকারীর ভ‚মিকা পালন করতে আত্মবিশ্বাসী এবং উৎসাহিত করবে। তিনি এই ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজন করার জন্য আয়োজকদের ধন্যবাদ জানান। তাই শিশুদের ছোট থেকেই দেশের জন্য প্রস্তুত করা সকলের দায়িত্ব। শব্দকর সম্প্রদায় ও তাদের সন্তানরা যাতে সরকারি সব সুযোগ সুবিধা ভোগ করতে পারে সেজন্য কাজ করে যাচ্ছেন সবাই।
ন্যাশনাল চিলড্রেন’স টাস্কফোর্স (এনসিটিএফ) কন্যা শিশুরা সমান অধিকার এবং পর্যাপ্ত সুযোগ পেলে বদলে দিতে পারে তাদের জীবন, সমাজের মানুষদের-এমন বিশ্বাস থেকেই ‘গার্লস টেকওভার’ কর্মসুচীর উদ্যোগ গ্রহণ করে। এই কর্মসুচীর প্রধান উদ্দেশ্য সমাজে মেয়েদের উচ্চপদস্থ বিভিন্ন পদের দায়িত্ব প্রদানের মাধ্যমে তাদের অবস্থান, নেতৃত্ব, সিদ্ধান্ত ও সাফল্য তুলে ধরার আত্মবিশ্বাস তৈরী করা।
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার শমশেরনগর এলাকাটি জনগুরুত্বপূর্ণ হিসাবে পরিচিত। এখানে সুদীর্ঘকাল থেকে পোস্ট অফিস বা ডাকঘরের মাধ্যমে গ্রাহকদের নানাভাবে সেবা প্রদান করা হচ্ছে। তবে জনগুরুত্বপূর্ণ এলাকাটিতে শমশেরনগর পোস্ট অফিসে পরিবার সঞ্চয়পত্র, সঞ্চয় ব্যাংক, সাধারণ হিসাব, মেয়াদী হিসাব দু’বছর ধরে বন্ধ রয়েছে। এতে চরম ভোগন্তিতে পড়েছেন পোস্ট অফিসের সেবা প্রত্যাশী গ্রাহকরা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রবাসী অধ্যুষিত এই এলাকায় শমশেরনগর বিমান বাহিনী ইউনিট, বিএএফ শাহীন কলেজ, রেলওয়ে স্টেশন, চাতলা শুল্ক স্টেশন রুট, একাধিক চা বাগান ও স্কুল-কলেজসহ বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাটবাজার রয়েছে। এসব কারণে শমশেরনগরে বিভিন্ন স্থান থেকে লোকজনের নিবিড় যোগাযোগ রয়েছে। জমি ক্রয়-বিক্রয় ও নতুন নতুন ভবন ও বাসাবাড়ি গড়ে উঠছে। সময়ের চাহিদার সাথে সাথে এখানকার ব্যবসা বাণিজ্য ও জমিজমার গুরুত্বও বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিএএফ শাহীন কলেজ শমশেরনগর এর পাশাপাশি ইতিমধ্যে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলেরও ভবন নির্মিত হচ্ছে। এলাকার প্রবাসী, চাকুরীজীবি, ব্যবসায়ীদের পরিবারগুলো ডাকঘরের মাধ্যমে পরিবার সঞ্চয়পত্র, মেয়াদী হিসাব, সঞ্চয় ব্যাংক ও সাধারণ হিসাবের দিকে ঝুঁকে ছিলেন। অনেকেরই মেয়াদ পূর্তি হওয়ায় ভেঙ্গে টাকা উত্তোলন করছেন। তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ২০২১ সনের ৩০ জুন থেকে সেবা প্রত্যাশীদের এসব সুবিধা বন্ধ করে দেয়ায় করে দিয়েছে। ফলে সেবা প্রত্যাশীরা নতুন করে পরিবার সঞ্চয়পত্র, মেয়াদী হিসাব, সঞ্চয় ব্যাংক ও সাধারণ হিসাব খুলতে পারছেন না। এতে সেবা প্রত্যাশীরা একদিকে ভোগান্তির স্বীকার হচ্ছেন অপরদিকে পোস্ট অফিসের সাথে সম্পর্কের ছেদ হচ্ছে। ফলে জনমানবহীন ও বেহাল দশায় পরিণত হচ্ছে শমশেরনগর পোস্ট অফিস।
শমশেরনগর পোস্ট অফিসের সেবা প্রত্যাশী লীনা সুলতানা, চম্পা রানী নাথ, আলমগীর হোসেন সহ কয়েকজন গ্রাহক জানান, আমরা আগে যেসব সুবিধা পেয়েছি এখন আর সেসব সুবিধা নেই। তাছাড়া শমশেরনগর এলাকাটি জনগুরুত্বপূর্ণ এবং বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এখানে পরিবার সঞ্চয়পত্রসহ অন্যান্য সুবিধাগুলো বন্ধ হওয়ায় গ্রাহকরা মুখ ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হচ্ছেন। জনগুরুত্ব বিবেচনা করে এসব পোস্ট অফিসের সুযোগ সুবিধাগুলো চালু করার দাবি জানান তারা।
এ ব্যাপারে শমশেরনগর পোস্ট মাস্টার মো. এলাইছ আলী পরিবার সঞ্চয়পত্র, সঞ্চয় ব্যাংক, সাধারণ হিসাব, মেয়াদী হিসাব দু’বছর ধরে বন্ধ থাকার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, গ্রাহকরা পুনরায় এসব সুবিধার জন্য এসে চাপাচাপি করেন। তবে এগুলো চালু হলে এলাকার মানুষ উপকৃত হবে।