মুক্তকথা প্রতিবেদন।। এ বছরেরই গত জুন মাসের সংবাদ। সংবাদপত্রে প্রথম দেখার পরই তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়ায় বিব্রত বোধ করি বললে সঠিক হয় না। বরং থথোমথো খেয়ে যাই বললে মনে হয় আমার মানসিক প্রতিক্রিয়ার সঠিক রূপায়ন হবে। কথা প্রসঙ্গেই বলতে হয়, মৌলুভী সাহেবগন আমাদের এ অঞ্চলে কখনই এককভাবে স্থানীয় লোকজনের সুখ-দুঃখ, সুবিধা-অসুবিধা দেখে কথা বলেননি কোন কালেই। তারা সবসময় দেখেন তাদের মনের আকাঙ্ক্ষার নিরিখে। আর যাদের ধ্বজা নিয়ে পথ চলেন সে ধ্বজা নির্মাণকারীদের দ্বারা শিখিয়ে দেয়া শিক্ষা ও তাদের মর্জির নিরিখে। আমাদের এ অঞ্চলের অতীতের সকল আন্দোলন সংগ্রামের মূলের দিকে নজর দিলে সে ইতিহাসেরই সাক্ষ্য মিলে। একপেশে শিক্ষার ধ্বজাধারী এসব আদম সন্তানদের মনের মূল আকাঙ্ক্ষা তা’হলে কি? এ নিয়ে গভীরভাবে গবেষণা হওয়া উচিৎ।
আমার পর্যবেক্ষণ মতে তাদের মন চায় দুনিয়ার সবকিছু তাদের মনমতো গড়ে উঠুক! সে কাজের হোক বা না হোক। তাদের মতামত ছাড়া এ বিশ্বে আর কোন মত থাকতে পারে এ মানতে তারা নারাজ। তাদের মত-ই শ্রেষ্ট এবং একমাত্র। তাদের মত-ই মানুষের ধর্ম। একমাত্র, একমাত্র এবং একমাত্র! ঠিক তাদের মতই এ বিশ্বে আরো কিছু মানুষ আছেন যারা অনুরূপ চিন্তা-চেতনা লালন করেন এবং বিশ্বব্যাপী চালিয়ে নিতে চান। তারা সকলেই ওই একই নমুনার মৌলিক সূতায় গাঁথা, বলা যায় এক গোয়ালের! এ সকলদের মাঝে আমাদের বুজুর্গগন সবচেয়ে বেশী কট্টর। চুল পরিমান ছাড় দিতে রাজী নন। তাইতো দেখি সর্বনাশের বীজ রোপিত হয় যুগে যুগে কালের বিভিন্ন সন্ধিক্ষনে। কেনো তাদের এমন চিন্তা বা মানসিকতা? শুধু আমারটাই শ্রেষ্ট, দুনিয়ার আর সবকিছু মেকি আর ভেজাল! কেনো এমন মাথাভারী চিন্তা! এ নমুনার চিন্তা যে সরাসরি স্বৈর চিন্তা তা জেনে-বুঝেই তারা এ ভয়ঙ্কর পথে হাটছেন সে হাজার বছর ধরে। আর এই হাটার ফলস্বরূপ দুনিয়ার কোটি কোটি মানুষকে আত্মাহুতি দিতে হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। তারা নিশ্চয়ই একজাতীয় সংক্রামক প্রাণী না’হলে আমরা আগোত্র নির্বিশেষে তাদের কথায় এমন সংক্রমিত হবো কেনো?
তাদের ওই চিন্তা-চেতনার পেছনে শতভাগই যে শুধু মানুষের কল্যাণে’ এমন কথা কেউ হলফ করেও বলতে যাবে না। এখানে তাদের সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত কিছু চিন্তা ও চেতনা, বলতে গেলে, দেদ্বীপ্যমান থাকে। তাদের মনোজগত এভাবে গড়ে তোলা হয়ে থাকে এবং আজঅবদি এ নমুনায়ই গড়ে তোলা হচ্ছে নির্বিঘ্নে! শিক্ষার নামে তাদেরকে এমন শিখিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা হাজার বছর আগে যারা করে গিয়েছিল, তারা করেছিল তাদেরই নিজেদের প্রয়োজনে। সার্বিক জনগুষ্ঠীর কল্যাণ ছিল সেখানে গৌণ। তাদের সেই আদলের শিক্ষায় একেবারে নিঁখুতভাবে তাদের নিজস্ব স্বার্থই ছিল প্রধান। অবশ্য এমন হওয়াই স্বাভাবিক। এ না হলে মহাভারত উপাখ্যানে একলব্যের আঙ্গুল কাটা যেতো না। আরব্য ইতিহাসে কারবালার জন্ম হতো না। এ ক্ষেত্রে বলা যায় বিগত পুরো শতাব্দী সারা এ অঞ্চলে আমাদের মৌলুভীগন যা কিছু করেছেন কিংবা এখনও করে যাচ্ছেন তা পুরোপুরি আমাদের মত সাধারণ মানুষের স্বার্থে বা কল্যাণে নয়। বলতে পারি অর্ধেক তাদের নিজস্ব স্বার্থ, বাদবাকী তাদের যারা শিক্ষাদানকারী, তাদের স্বার্থ।
আর তাইতো দেখা যায়, বাংলাদেশের ওলামা লীগের নেতারা করোনাভাইরাসকে ছোঁয়াচে ও মহামারি নয় বলে দাবি করেন! তাদের এ দাবী গত ২২ জুনের। শুধু কি তাই, আরো এক কদম এগিয়ে গিয়ে তারা বলেছেন যে, সামাজিক দূরত্বের বিধি মেনে মসিজদে সীমিত পরিসরে জামাত একটি কুফুরি মতবাদ। ‘কাফির-কুফুরি’ আরবী শব্দ যুগল। শব্দের আর দোষ কি? এ শব্দ যুগলের মহিমায় কারবালা থেকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ কতই না মহৎ মারামারি আর লোকক্ষয়ের দানবীয়তা বিশ্বমানুষের অভিজ্ঞতায় যোগ হয়েছে, ভরে উঠেছে ইতিহাসের পাতা সে খবর কি আর বুজুর্গেরা রাখেন। ‘করোনাভাইরাসের অজুহাতে পবিত্র মসজিদ ও মাদ্রাসা বন্ধ করা, ফাঁক ফাঁক করে নামাজে দাঁড়ানো, পাঁচ জনের বেশি মুসল্লি না হওয়া, মাঠে ঈদের জামাত করতে না দেওয়া ওহাবি, জামাতপন্থীদের ষড়যন্ত্রমূলক ফতোয়া, যা সম্পূর্ণ কুফরি হয়েছে।’ তাদের এ বক্তব্য ঘরে বসে নয়; একেবারে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত মানববন্ধন থেকে তারা এ মত প্রকাশ করেন। তাদের মতে ২০হাজার লোক মরলে তাকে মহামারি বলা যায়। এক পক্ষ আরেক পক্ষকে কোটি টাকার মোকাবেলা অর্থের ঘোষণা দিয়ে বিতর্কের আহ্বান জানিয়েছে। কি অদ্ভুত তাদের যুক্তিতর্ক! তারা একবারের জন্য কি ভেবেছেন যে তাদের ওই তথাকথিত ‘বাহাস’ দিয়ে আমাদের মত সাধারণ মানুষের কি হবে। করোণা’তো দূর হবে না। আর জ্বলন্ত প্রমাণ আজও করোণা বিশ্বে আছে, বাংলাদেশে আরো বেড়েছে। কম হোক বেশী হোক মানুষ মরছে। অথচ আমরা অনেকেই সংক্রমিত হয়েছি তাদের কথায়।
হারুনূর রশীদ, লণ্ডন, শনিবার ১৫ অগষ্ট ২০২০সাল