মৌলভীবাজার প্রতিনিধি।। মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার খেয়াঘাটবাজারে বাংলাদেশ পানি উন্নযন বোর্ড(পাউবো)এর প্রায় ১০ কোটি টাকার ডোবা(জলাভূমি) দখল করে পাঁকা স্থাপনা তৈরি করেছে স্থানীয় ভূমি খেকোরা। এতে রহস্যজনকভাবে নীরব ভূমিকা পালন করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ।
মূলত কাউয়াদিঘী হাওরকে কুশিয়ারা নদীর কবল থেকে রক্ষা করে কৃষি ক্ষেতের পরিমান বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রায় ৪০ বছর পূর্বে হলদিগুল(বাঁধবাজার) থেকে খেয়াঘাটবাজার হয়ে চাঁদনীঘাট পর্যন্ত প্রায় ২৭কিলোমিটার দৈর্ঘ্য বাঁধ নির্মাণ করে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড। এতে সাধারণ জনগনের জমি কিনে মাটি খনন করে দীর্ঘ বাঁধ নির্মাণ করা হয়। এখন ওই খননকৃত খালের আশপাশের প্রায় ১৫কিয়ার ডোবা দখল করে মাটি ভরাট করে অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে পাঁকা স্থাপনা।
এসব ডোবা দখল করে দখলদারেরা প্রতি শতক ৩-৪ লাখ টাকায় বিক্রি করে। এদিকে দীর্ঘদিন যাবৎ এসব দখল উচ্ছেদ না করায় স্থানীয়রা প্রশ্ন তুলেছেন খুদ পাউবোর বিরুদ্ধে। তারা বলেছেন কোন রহস্যজনক কারণে এসব স্থাপনা উচ্ছেদ করছেনা পাউবো? এদিকে পাউবো সূত্র জানিয়েছে যারা বন্দোবস্ত নিয়েছে তাদের সাথে চুক্তি করে সেখানে কৃষি ক্ষেত করতে বলা হয়েছে।
স্থানীয় এক সূত্র জানিয়েছে, ওয়াপদা’র কাছ থেকে ৯৯ বছরের জন্য বন্দোবস্ত নিয়েই স্থাপনা নির্মান করেছেন দখলদারেরা। তবে পাউবো কর্তৃপক্ষ বলেছে তারা ১ বছরের জন্য তাদের ভূমি বন্দোবস্ত দিয়েছেন। পার্শ্ববর্তী সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলা সদর ও রাজনগর উপজেলার মিলনস্থল কুশিয়ারা নদী পাড়ের খেয়াঘাটবাজারে ওয়াপধা সড়কের উত্তর পার্শ্বে প্রায় এক যুগ আগে থেকে ১-২টি কাঁচা-আধাকাঁচা ঘর নির্মান করা হলেও এখন আইনের তোয়াক্কা না করে অবাধে নির্মাণ করা হচ্ছে পাঁকা স্থাপনা। এতে পাশের সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ, বালাগঞ্জ ও মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলা থেকে আগত শত শত গাড়ি নিয়ে যানঝটের মধ্যে মহাবিপাকে পড়েন গাড়ীর চালক ও সাধারণ যাত্রীরা। আর এই অবৈধ স্থাপনার কারনেই ওই সড়কে প্রতিনিয়ত লেগেই থাকে যানঝট।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই বাজারের এক ব্যবসায়ী জানান, খেয়াঘাটবাজারে ওয়াপদা’র জমির উপর যতসব স্থাপনা গড়ে উঠেছে সবগুলো অবৈধ। সড়কের ছোট হয়ে যাওয়া অবস্থা দেখিয়ে তিনি বলেন, স্থাপনা তৈরি হওয়াতে সড়ক সংকীর্ণ হয়ে যানঝট লেগেই আছে। তিনি আরো জানান, যারা বন্দোবস্ত নিয়ে আসে তারা ওই ডোবা মাটি ভরাট করে আবার অন্যের কাছে চড়া দামে বিক্রি করে।
খেয়াঘাটবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সহকারী সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম বাচ্চুও দালান বেচা-বিক্রির কথা উল্লেখ করে বলেন, ওয়াবদা’র সম্পদ তারা কিভাবে রক্ষনাবেক্ষণ করবে সেটা তাদের(পানিউন্নয়ন বোর্ডের) নিজস্ব বিষয়। কিন্তু ওয়াপদা সড়কের কালারবাজার ও আব্দুল্লাহপুর ও ইসলামপুর বাজারে পাউবোর ডোবা ভরাট করে অবৈধভাবে পাঁকা স্থাপনা তৈরি করে আবার অনেকেই চড়াদামে বিক্রি করছে এ কথা ঠিক। বিষয়টি অনেকেই অবগত আছেন। তবে, এটা কি করে সম্ভব আমরা বুঝিনা। যদিও স্থাপনাগুলো যেভাবে গড়ে উঠছে এতে বাজারের লাভও আছে আবার ক্ষতিও আছে।
খেয়াঘাটবাজারে অটোরিক্সা চালক ও তুলাপুর গ্রামের বাসিন্দা মুরাদ হোসেন জানায়, তার দেখা মতে দেড় বছর ধরে পাউবোর ডোবা দখল করে ৪০টি অবৈধ স্থাপনা তৈরি করা হয়েছে। সড়কের জমি দখলে নিয়ে এসব স্থাপনা গড়ে উঠায় প্রতিনিয়ত যানঝট লেগেই থাকে। তার মতে অন্ততঃ স্থাপনাগুলো যদি সড়ক থেকে কিছুটা দুরে সরিয়ে তৈরি করা হতো তবে মানুষ ও যান চলাচলে ততো বিঘ্ন ঘটতো না।
খেয়াঘাবাজার অটোরিক্সা শ্রমিক ইউনিয়ন নেতা জিলু মিয়া তার মত করে বলেন,“ইতা সরকারী নেতা ওখলে দখল করছইন। এর আগে শেখ রাসেল সৃতি সংসদের নামে কিছু জেগা দখল করা অইছিল। পরে পুলিশ আইয়া ভাংগি দিছে।” তিনি আরো বলেন, পাউবোর ভূমি জবরদখলের ব্যাপারে তারা ইউএনও’এর কাছে মৌখিক অভিযোগ দিয়েছেন। তার মতে খেয়াঘাটবাজারে পাউবোর জমির উপর যেসকল স্থাপনা গড়ে উঠেছে তা শতকরা ৯৯ ভাগ অবৈধ।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড মৌলভীবাজার-এর নির্বাহী প্রকৌশলী রনেন্দ্র শংকর চক্রবর্তী শনিবার, ৭ই জুলাই জানান, খেয়াঘাটবাজারে পাউবোর দেয়া বন্দোবস্ত আগের কিনা ফাইল বের করে দেখতে হবে। তাছাড়া অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে হলে অর্থ ও জনবলের প্রয়োজন। পর্যায়ক্রমে এসব স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে।