গত ৪০ বছরের তুলনায় যুক্তরাজ্যে খাদ্যদ্রব্য এবং আনুসাঙ্গিক জিনিষের মূল্য দ্বিগুন হয়ে এসেছে! ২০০৯ সাল থেকেই চলে আসছে ইনফ্লেশনের আঘাত। বেড়েই চলেছে দ্রব্যমূল্য! জীবন যাত্রায় অর্থনৈতিক মন্দা বেড়ে ইনফ্লেশন দাঁড়িয়েছে ১০.১%-এ! তেল গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি সীমা ছাড়িয়েছে! জনগণকে এই অবস্থায় সরকার যে ভর্তুকি প্রদান করছে তাতেও কুলাচ্ছেনা! ২০০৮ সাল থেকে যে অর্থনৈতিক মন্দা শুরু হয়েছিলো গোটা ইউরোপসহ সারা বিশ্বে তা ক্রমশঃ বাড়ছেই! ব্যাংক অফ ইংল্যান্ড জানিয়েছে এই অবস্থা চলমান। ইনফ্লেসন ১৩/১৪% পর্যন্ত যেতে পারে! এইযে বিলিয়ন বিলিয়ন পাউন্ড ভর্তুকি দিচ্ছে সরকার, সেগুলো যাচ্ছে কোথায়! মূল্যবৃদ্ধির কারসাজি সারা বিশ্বেই সিন্ডিকেট, পূজিবাদি ধনিক গোষ্ঠী, তথা লোভী ব্যবসায়ীদের দ্বারাই ঘটে। অথচ পরিশ্রমি মেহনতি মানুষের রোজগার থেকে অর্জিত “পাবলিক মানি” থেকেই দেওয়া হয় এই বিশাল বিশাল ভর্তুকির বিলিয়ন বিলিয়ন পাউন্ড! পক্ষান্তরে সেই পুঁজিপতিরাই ফুলে ফেঁপে আরো ধনিতে পরিণত হচ্ছে। অর্থাৎ ধনি আরো ধনি হচ্ছে, গরিব আরো গরিব হচ্ছে! পুঁজিবাদি অর্থনীতি, পূঁজিবাদি রাজনীতি, পুঁজিবাদি গণতন্ত্র এভাবেই মদদ দিয়ে যায় পুঁজিপতিদেরই। |
|||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
১৯১৭ সালে এই পুঁজিবাদী অশুভ শক্তিকে পরাজিত করে বিশ্বে গঠিত হয়েছিলো মেহনতি মানুষের রাজ সমাজতন্ত্র, তথা মহান সোভিয়েত ইউনিয়ন! যা ছিলো বিশ্বের মেহনতি মানুষের রাজনৈতিক তন্ত্র, সমাজতন্ত্র। বিশ্ব সেদিন থেকে বিভক্ত হয়ে গিয়েছিলো দুই শিবিরে। একদিকে সোভিয়েত-বিশ্ব অন্যদিকে মার্কিন-বিশ্ব। কিন্তু সমাজতন্ত্রের সেই সুতিকা লগ্ন থেকেই পুঁজিবাদি আমেরিকা সোভিয়েতের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছিলো বিশ্ব ধনবাদকে সুরক্ষিত রাখার লক্ষ্যে। দীর্ঘ ৭০ বছরেরও অধিক সময় টিকেছিলো সোভিয়েত। কিন্তু মার্কিনি পুঁজিবাদি ষড়যন্ত্র শেষ পর্যন্ত ১৯৯১ সালে সফল হলো সেই সোভিয়েত ধ্বংসে! যারা সোভিয়েত বিরোধি তাদের অধিকাংশই হয়তো বোঝেনই না যে, সোভিয়েত কী! বোঝেনই না যে, সমাজতন্ত্র কী, কার্ল মার্ক্স কে, লেনিন, স্ট্যালিন, ম্যাক্সিম গোর্কি কে! ফ্রেডারেক এঙ্গেলস আর কার্ল মার্ক্স মেহিনতি মানুষের, তথা শ্রমিক শ্রেণীর জন্য সমাজতন্ত্রের যে ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন সেই পথ ধরেই মহামতি লেনিন ১৯১৭ সালে তাঁর গঠিত বিপ্লবি সোভিয়েত সংগঠনের মাধ্যমে রাশিয়ায় দুনিয়া কাঁপানো দশ দিনে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন মহান সমাজতান্ত্রিক দেশ “সোভিয়েত ইউনিউন”। দেশের সকল সম্পদকে একিভুত করেছিলেন রাষ্ট্রীয় সম্পদে। প্রত্যেক নাগরিকের সামাজিক, রাজনৈতিক এবং অর্থাৎ অধিকারকে করেছিলেন সমান। রাশিয়া এবং এর আশেপাশের দেশগুলি সবই যুক্ত হয়েছিলো সোভিয়েতে। পরবর্তীতে জার্মানি সহ আরো দেশগুলি পরিবর্তিত হয়েছিলো সমাজতন্ত্রে। এক পর্যায়ে পৃথিবীর এক তৃতীয়াংশ দেশে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো সোভিয়েতপন্থি সমাজতন্ত্র। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদি ষড়যন্ত্রের ফলে সেই মহান সমাজতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার অবসান হওয়ার পর থেকে অদ্যাবধি পৃথিবীতে চলছে গণতন্ত্রের ছদ্মাবরণে পুঁজিবাদি শোষণ ধনবাদি তোষণ! তারই ফলশ্রুতিতে আজ বিশ্বব্যাপি মারাত্মক অর্থনৈতিক মন্দা। সাধারণ মানুষ পাচ্ছেনা সভ্যতার জাবতিয় স্বাদ। মুষ্টিমেয় কিছু লুটেরা ধনি সকল সম্পদ লুন্ঠন করে ক্রমশ সাধারণ মানুষকে করে চলেছে নিঃস্ব! এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হলে সমাজতন্ত্রের বিকল্প নেই। আর তা সম্ভব কেবলমাত্র কমিউনিস্টদের পক্ষেই। জয় হোক সমাজতন্ত্রের জয় হোক মেহেনতি মানুষের। লন্ডন ১৭ আগস্ট ২০২২। |