1. muktokotha@gmail.com : Harunur Rashid : Harunur Rashid
  2. isaque@hotmail.co.uk : Harun :
  3. harunurrashid@hotmail.com : Muktokotha :
আজ ছিল অমর স্বভাব কবি রাধারমণের প্রয়াণ দিবস - মুক্তকথা
বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ০১:৪৬ অপরাহ্ন

আজ ছিল অমর স্বভাব কবি রাধারমণের প্রয়াণ দিবস

সংবাদদাতা
  • প্রকাশকাল : রবিবার, ১১ নভেম্বর, ২০১৮
  • ৫৭৫ পড়া হয়েছে

রাধারমণ দত্ত, পুরো নাম রাধারমণ দত্ত পুরকায়স্থ,(১৮৩৩ – ১৯১৫) একজন বাংলা সাহিত্যিক, সাধক কবি, বৈঞ্চব বাউল, ধামালি নৃত্য-এর প্রবর্তক। সংগীতানুরাগীদের কাছে তিনি রাধারমণ বলেই সমধিক পরিচিত। বাংলা লোকসংগীতের পুরোধা লোককবি রাধারমণ দত্ত। যা’কে তুলনা করা যায় একমাত্র লালনের সাথে। তার দর্শন ও মানুষের মনের গভীরের ভাবকে জানার এমন মরমীয়া তীক্ষ্ণ ক্ষমতা এবং মোহনীয় মনোহর সহজিয়া প্রকাশ বঙ্গের অন্য কোন কবি সাহিত্যিকের মাঝে পাওয়া যায় না। আজ ছিল তার ১০৩তম প্রয়াণ দিবস।
শিল্পী, সাহিত্যিক ও কবি রাধারমণ রচিত ধামাইল গান সিলেট ও ভারতের বাঙ্গালীগন পরম শ্রদ্ধা ও ভালবাসায় লালন করেন। অমীয় সুধায় ভরা রাধা রমণের নিজের রচিত গীত আজো মানুষকে মাতোয়ারা করে তুলে। এতো সহজ সরল ভাষায় তার আগে আর কেউ এমন সুমধুর হৃদয়গ্রাহী গীত রচনা করেছেন তার নজির পাওয়া দুষ্কর। তার মেধা ও দর্শনের মাধ্যমে মানুষের মনে তিনি চিরস্থায়ী আসন করে নিয়েছেন। মনের মানুষের বিরহের আকূতি, তাকে না-পাওয়ার যন্ত্রনা, প্রেমিক প্রেমিকার অন্তরের গভীরের এ কষ্টকে রাধারমনের চেয়ে অন্য কোন কবি সাহিত্যিক অনুধাবন করতে পেরেছেন তেমন প্রকাশ আমরা খুঁজে পাইনা। বেদনা কাতর মানুষের হৃদয়ের গভীরে পৌঁছাই তাকে সাধকে পরিণত করেছে। তিনি দেহতত্ত্ব, ভক্তিমূলক, অনুরাগ, প্রেম, ভজন, ধামাইলসহ নানা ধরণের হাজার হাজার গান ও গীত রচনা করেছেন। তার গীতের মাধুর্য্য আর মোহনীয়তা মানুষকে বাউল বানিয়ে দেয়।

কবি গেয়েছেন-
“কারে দেখাবো মনের দুঃখগো বুক চিরিয়া
অন্তরে তোষের অনল জ্বলে গোইয়া গোইয়া।”

অমর এ গীত স্রষ্টার জন্ম হয়েছিল ১৮৩৩খৃস্টাব্দ তথা ১২৪০ বঙ্গাব্দে বাংলাদেশের বর্তমান সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুরের কেশবপুর গ্রামে। কালজয়ী এ গীত ও সুর স্রষ্টা মায়াময় এ ভূবন ছেড়ে চলে যান ১৯১৫খৃস্টাব্দ তথা ১৩২২ বঙ্গাব্দে আজকের এ দিনে। তার জন্মের সঠিক তারিখ আজো কেউ নির্ণয় করতে পারেননি।
সপ্তম শতকে বর্তমান মৌলভীবাজার জেলার পঞ্চখণ্ডে ত্রিপুরাধিপতি ‘ধর্ম ফাঁ’ মিথিলা থেকে প্রসিদ্ধ পাঁচ ব্রাহ্মণ এনেছিলেন। ‘আনন্দ শাস্ত্রী’ নামে তাদের মাঝে একজন বিখ্যাত ব্যক্তি ছিলেন। এই আনন্দ শাস্ত্রীই রাধারমণ দত্তের পুর্ব পুরুষ ছিলেন বলে অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি তার ঐতিহাসিক গ্রন্থ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্তে লিখেছেন। আনন্দ শাস্ত্রীর প্রপৌত্র নিধিপতি শাস্ত্রীর পুত্র ভানু নারায়ন তৎকালীন মণুকুল প্রদেশে “ইটা” নামক রাজ্যের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এই ভানু নারায়ণের চার পুত্রের মধ্যে রামচন্দ্র নারায়ণ বা ব্রহ্ম নারায়ণের এক পুত্র ছিলেন, নাম ছিল প্রভাকর।

ছবি- হারুনূর রশীদ, মুক্তকথা

পাঠান সেনাপতি খোয়াজ উসমান দ্বারা ইটা রাজ্য অধিকৃত হলে, এই রাজ বংশের লোকগণ পালিয়ে গিয়ে আশে পাশের বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় গ্রহন করেন। এ সময় প্রভাকর দত্ত তার পিতার সাথে আলিসারকুল চলে যান এবং সেখানে কিছু দিন বসবাস করার পর জগন্নাথপুর রাজ্যে এসে আশ্রয় নিয়েছিলেন। কিছু দিন পর জগন্নাথপুর রাজ্যের তৎকালীন অধিপতি রাজা বিজয় সিংহের অনুমতিক্রমে প্রভাকর জগন্নাথপুরের নিকটস্থ কেশবপুর গ্রামে বাড়ী নির্মাণ করে সেখানে বসবাস করতে থাকেন। পরবর্তিতে রাজা বিজয় সিংহ প্রভাকরের পুত্র সম্ভুদাস দত্তকে মন্ত্রী পদে নিয়োগ দেন। বহু পরে বানিয়াচংয়ের রাজা গোবিন্দ খা বা হবিব খার সাথে জগন্নাথপুর রাজ বংশের বিবাদ বাঁধে যা বিপর্য্যয়ের মহাকারণ হয়ে উঠে। এতে করে রাজাশ্রীত কর্মচারীরাও দৈন্যদশায় পড়েন।
সম্ভুদাস দত্তের এমন অশুভ সংকটময় সময়ে পুত্র রাধামাধব দত্ত, অনন্যচিত্তে সাহিত্য চর্চায় মনোনিবেশ করেন। রাধামাধব দত্ত সংস্কৃত ভাষায় জয়দেবের বিখ্যাত গ্রন্থ ‘গীত গোবিন্দ’ বাংলা ভাষায় অনুবাদ করে বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেন। এছাড়া তার রচিত ভ্রমর গীতিকা, ভারত সাবিত্রী, সূর্যব্রত পাঁচালি, পদ্ম-পুরাণ ও কৃষ্ণলীলা গীতিকাব্য উল্লেখযোগ্য। এই প্রসিদ্ধ কবি রাধামাধব দত্তই ছিলেন রাধারমণ দত্তের পিতা। কবি রাধারমণের পারিবারিক ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় উপাসনার প্রধান অবলম্বন সংগীতের সংগে তাঁর পরিচয় ছিল শৈশব থেকেই। পিতার সংগীত ও সাহিত্য সাধনাই তাকে পথ দেখিয়ে নিয়ে গেছে অসীম অমরত্বে।
১২৫০ বঙ্গাব্দে রাধারমণের বাবা পরলোকগমণ করেছিলেন বলে বিভিন্ন লিখায় পাওয়া যায়। পিতৃবিয়োগের পর মা সুবর্ণা দেবীই ছিলেন তার জীবনের একমাত্র ভরসা।
রাধারমণ বিয়ে করেছিলেন মৌলভীবাজারে। জানা যায়, ১২৭৫ বঙ্গাব্দে মৌলভীবাজারের আদপাশা গ্রামে শ্রী চৈতন্যদেবের অন্যতম পার্ষদ সেন শিবানন্দ বংশীয় নন্দকুমার সেন অধিকারীর কন্যা গুণময়ী দেবীকে বিয়ে করেন। পিতার রচিত গ্রন্থ গুলো রাধারমণের জীবনপথের পাথেয় হয়ে সামনে চলার পথ দেখিয়ে নিয়েছে আমৃত্যু। কালের যাত্রায় একসময় তিনি একজন স্বভাবকবি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। সৃষ্টি করেন হাজার হাজার অমর বাউল গান। লিখেছেন  শত শত  ধামাইল গান। ধামাইল গান সমবেত নারীকন্ঠে বিয়েসহ বিভিন্ন আচারানুষ্ঠানে  গীত হয়ে থাকে এখনও। বিশেষত সিলেট, কাছাড়, ত্রিপুরা ও ময়মসিংহ অঞ্চলে এর প্রচলন খুব বেশি। রাধারমণ দত্ত একাধারে গীতিকার, সুরকার, ও শিল্পী ছিলেন। সাধক রাধারমণ দত্ত ও মরমি কবি হাসন রাজার মধ্যে ঘনিষ্ট যোগাযোগ ছিল বলে বিভিন্নজনের লিখায় উল্লেখ পাওয়া যায়।
কবির সংসারজীবন সম্পর্কে খুব বেশি তথ্য পাওয়া যায় না। শুধু জানা যায়, রাধারমণ-গুণময় দেবীর ৪ ছেলে ছিল। তাঁদের নাম- রাজবিহারী দত্ত, নদীয়াবিহারী দত্ত, রসিকবিহারী দত্ত ও বিপিনবিহারী দত্ত। একমাত্র পুত্র বিপিনবিহারী দত্ত ছাড়া বাকি ৩ পুত্র এবং স্ত্রী গুণময় দেবী অকালে মারা যান। স্ত্রী ও পুত্রদের পরলোক গমনে কবি রাধারমণ দত্ত সংসারজীবন সম্পর্কে উদাসীন হয়ে পড়েন যা ছিল খুবই স্বাভাবিক। তাদের অকাল মৃত্যুর মতো প্রকৃতির নির্দয় নিষ্ঠুরতা, এ যেনো কবিকে গড়ে উঠার এক ঐশী অবোধগম্য সোপান হয়ে কাজ করেছে। দেখিয়ে দিয়েছে কবিকে তার জীবনমার্গ।
এ সময়ই ১২৯০ বঙ্গাব্দে ৫০ বছর বয়সে কবি চলে যান মৌলভীবাজার জেলাধীন ঢেউপাশা গ্রামে সাধক রঘুনাথ ভট্টাচার্যের কাছে। তিনি তাঁর কাছে শিষ্যত্ব লাভ করেন। শুরু হয় কবির বৈরাগ্য জীবন। আরম্ভ করেন সাধনা। গৃহত্যাগ করে জগন্নাথপুর উপজেলার নলুয়ার হাওরের পাশে একটি আশ্রম তৈরি করেন। এখানে শুরু করেন তাঁর সাধন-ভজনের নতুন জীবন। নলুয়ার হাওরের আশ্রমে কবি দিবা রাত্র সাধনা ও ইষ্ট নামে মগ্ন এবং অসংখ্য ভক্ত পরিবেষ্টিত হয়ে থাকতেন। ধ্যান মগ্ন অবস্হায় তিনি গান রচনা করে গেয়ে যেতেন। ভক্তরা শুনে শুনে তা স্মৃতিতে ধরে রাখত এবং পরে অনেকেই  তা লিখে নিত।
কবি নিজেই তার গৃহত্যাগের বিষয় নিয়ে একসময়  লিখেছেন-
শ্যামের বাঁশিরে ঘরের বাহির করলে আমারে
যে যন্ত্রণা বনে যাওয়া গৃহে থাকা না লয় মনে॥
রচনা ও তথ্য সংগ্রহে- হারুনূর রশীদ। তথ্যসূত্র: উইকিপিডিয়া ও গণমাধ্যম

এ জাতীয় সংবাদ

তারকা বিনোদন ২ গীতাঞ্জলী মিশ্র

বাংলা দেশের পাখী

বাংগালী জীবন ও মূল ধারার সংস্কৃতি

আসছে কিছু দেখতে থাকুন

© All rights reserved © 2021 muktokotha
Customized BY KINE IT