লন্ডন: ২০১৫ সালের পানামা দুর্নীতির দায়ে গদি হারানো থেকে অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ বলে মন্তব্য করেছে আনন্দবাজার পত্রিকা। পাক সুপ্রিম কোর্ট আজ সংখ্যাগরিষ্ঠের রায়ে শরিফ ও তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের তদন্তের জন্য যৌথ কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছে। শরিফ শিবির এই রায়কে নিজেদের জয় বলে দাবি করলেও তিনি রাজনৈতিক ভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছেন বলেই আনন্দবাজারের ধারণা।
কূটনীতিকদের বরাত দিয়ে পত্রিকাটি লিখেছে, বেআইনি আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে লন্ডনে প্রচুর সম্পত্তি কিনেছেন শরিফ ও তার পরিবার। ২০১৫ সালে পানামার একটি ল’ ফার্ম থেকে ফাঁস হওয়া এমন নথি সেসময় তোলপাড় তুলে দিয়েছিল বিশ্ব তথা উপমহাদেশের নানা প্রান্তে। ফাঁস হয়ে যাওয়া ওইসব নথিতে বিভিন্ন বিদেশি সংস্থার রাজনীতিক ও অন্যান্য ক্ষেত্রের প্রথম সারির ব্যক্তিত্বদের বিনিয়োগ নিয়েও তথ্য ছিল। কর ফাঁকি দিতেই ওই ব্যক্তিত্বরা বিদেশি সংস্থায় বিনিয়োগ করেছেন বলে অভিযোগ ওঠেছিল। সেই তালিকায় নাম ছিল নওয়াজ শরিফ ও তাঁর পরিবারের সদস্যদেরও।
আর এই অভিযোগকে হাতিয়ার করে শরিফ সরকারকে বেঘোরে ফেলতে মাঠে নেমে পড়ে বিরোধী দলগুলি। সুপ্রিম কোর্টে পেশ করা আবেদনে ইমরান খানের দল তেহরিক-ই-ইনসাফ জানায়, শরিফকে প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে বরখাস্ত করা উচিত।
পত্রিকাটি লিখেছে, আজ সেই মামলারই রায় ঘোষণা করেছে পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ। দুই বিচারপতি শরিফকে সরানোর পক্ষে রায় দিয়েছেন। কিন্তু তিন বিচারপতি সংখ্যাগরিষ্ঠের রায়ে জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীকে দোষী সাব্যস্ত করে সরানোর মতো তথ্যপ্রমাণ এখনও পাওয়া যায়নি। বিষয়টি নিয়ে আরও তদন্তের জন্য যৌথ কমিটি গঠন করার নির্দেশ দিয়েছেন তাঁরা। সেই কমিটিতে অন্য তদন্তকারী সংস্থার সঙ্গে থাকবেন সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার অফিসারও।
বিষয়টিকে নিজেদের ‘জয়’ হিসেবেই দেখাতে চাইছে শরিফের দল পিএমএল (এন)। দলের তরফে জানানো হয়েছে, শরিফ ইস্তফা দেবেন না। কারণ, তাঁর বিরুদ্ধে কোনও প্রমাণই নেই। তদন্তেই সেটা প্রমাণ হবে। তবে ইমরান ও পাকিস্তান পিপলস পার্টির আসিফ আলি জারদারির মতো বিরোধী নেতাদের দাবি, শরিফের এখনই ইস্তফা দেওয়া উচিত। কারণ, তাঁর আইনজীবীরা ওই বিনিয়োগ নিয়ে যে ‘কাহিনি’ আদালতে পেশ করেছেন তা বেঞ্চ পুরোপুরি খারিজ করেছে। এক ধাপ এগিয়ে কোর্টের রায়ের নিন্দাও করেছেন জারদারি।
ঘটনায় গলা উঁচিয়ে নজর রাখছে দিল্লি। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের কর্তাদের মতে, এই রায়ে শরিফ কিছুটা দুর্বল হলেন। তাতে খুশি হবে পাক সেনা। এ ক্ষেত্রে তদন্ত কমিটিতে সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার অফিসার থাকায় শরিফের উপরে চাপ বাড়ানোর বাড়তি সুযোগ পাবে পাক সেনাছাউনি বলেও ধারণা কূটনীতিকদের। তবে এখনই ভারত-পাক সম্পর্কে বড় ধরনের প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা দেখছেন না তাঁরা।