অভ্যুত্থান পরবর্তী প্রথম ১০ দিনে ছাত্র-ছাত্রীর হাতে ১১৬৯ জন সম্মানিত শিক্ষক লাঞ্ছিত হয়েছেন এমন খবর ফেইচবুক, ইউটিউব, ইন্স্টাগ্রাম, টুইটার, টিক-টক’এ ছেয়ে গেছে। শিক্ষক লাঞ্ছনার এ পরিসংখ্যানটি কে কোথা থেকে কিভাবে পেয়েছেন তার কোন তথ্য খুঁজে আমরা পাইনি। এ পরিসংখ্যানের সত্য-মিথ্যা আমাদের জানা নেই। তবে উপরোল্লিখিত গণমাধ্যমগুলোতে যে প্রকাশ হয়েছে সেটি সত্য। শিক্ষক লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনাযে ঘটেছে তা তো নির্ভেজাল সত্য। সংখ্যা নিয়ে মতভেদ থাকতেই পারে। এ মূহুর্তে লিখতে গিয়ে প্রথমেই এমন আচরণকে জঙ্গলবাসী পশুরমত আচরণই বলতে হয়। দেশের লাখোকোটী মানুষের সাথে আমরাও গভীরভাবে কঠোর ভাষায় এমন আচরণের নিন্দা জানাই।
একটা ভিডিওতে দেখা গেলো এক জেলার এক স্কুলের শিক্ষার্থীরা তাদের প্রিন্সিপালের উপর খুব বিরক্ত। অথচ লোকমুখের কথা এরকম প্রিন্সিপাল পাওয়া না-কি ভাগ্যের ব্যাপার। কিছু মানুষ মনে করছেন ছাত্র-ছাত্রী নামের ওই কিশোর- কিশোরীরা স্বেচ্ছাচারিতার মত নোংরামি করার স্বাধীনতা চায়। আর এজন্যই তারা প্রিন্সিপ্যালের পদত্যাগের দাবী নিয়ে মাঠে নেমেছে।
আর এক ভিডিও’তে দেখাযায় একজন শিক্ষক পদত্যাগ পত্রে স্বাক্ষর করতে করতে স্ট্রোক করেছেন।
আর একজন বয়স্ক দেখতে অমায়িক ভদ্র প্রিন্সিপ্যাল তার ঔদ্ধত্যপূর্ণ ছাত্রছাত্রীদের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছেন। হয়তো দেখছেন আর শিক্ষাগুরুর মর্যাদা কবিতাটা মনেমনে ভাবছেন। তাঁর নির্বাক চাহনি দেখে নিজেরই কষ্ট হচ্ছিল।
অন্য একটা ভিডিওতে দেখলাম কয়েকজন ছাত্রী মিলে মহিলা প্রিন্সিপালের গায়ে হাত তুলেছে। আবার এক জায়গায় দেখলাম প্রিন্সিপালের গলায় জুতার মালা পড়াচ্ছে।
এসব দেখে মনে প্রশ্ন জাগে, এসকল ছাত্র-ছাত্রীদের বাবা মা কি বেঁচে নেই? তারা কি এসব দেখছেন না, নাকি ছেলে-মেয়েদের রাস্তায় ছেড়ে দিয়েছেন। বাসায় বাবা মা শেখাবে কিভাবে শিক্ষককে সম্মান করতে হয়। আসলে তা কিছুই হচ্ছে না। এ সকল সন্তানেরা নিজেদের কাজ দিয়ে, তারা কি পরিবেশ ও শিক্ষায় গড়ে উঠেছে এবং উঠছে, নিজেদের সে পরিচয়টাই পরিস্কার রূপে তুলে ধরেছে।
আমাদের শিক্ষকদের মাঝে যে নীতিহীনতা প্রবেশ করেছে তা আজ থেকে নয় সে সুদূর অতীতের পাকিস্তান আমল থেকেই এর সূচনা। এসকল অপরাধ প্রবণতা সামাল দেয়ার কোন সঠিক ব্যবস্থা শক্তভাবে কেউ অতীতে নিতে আমরা দেখিনি ফলে যা হবার তাই হয়েছে। বিদ্যালয়ে শিক্ষক দিবে নীতি-নৈতিকতা আর পাঠ্যপুস্তকের জ্ঞান। শিক্ষা হবে জ্ঞানভিত্তিক কিন্তু তা না হয়ে দেশের পুরো শিক্ষাই হয়ে উঠেছে ব্যবসা ভিত্তিক। যা অপরাধের পর্যায়ে পড়ে। আর এর কুফল আমরা পেয়ে চলেছি।
এসকল অপরাধ প্রবণতা খুব কঠোরভাবে থামাতে হবে। এরা দেশকে, শিক্ষাব্যবস্থাকে অসুস্থ করে ফেলছে। অনাচার সৃষ্টিকারী এদের এসব কাজে দেশের হাজার-লাখো নীতিবান আদর্শ শিক্ষকরা আতঙ্কিত। আইনের আওতায় এনে এদেরকে থামানো দরকার এবং শিক্ষকের সাথে এমন অন্যায় আচরনের অনতিবিলম্বে আইনী ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন।