জবলু সরকার।। কমলগঞ্জে সাংবাদিকের উপর গ্রামবাসী বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠার ঘটনাটি ইউপি চেয়ারম্যানের উদ্যোগে নিষ্পত্তি হয়েছে। স্থানীয়দের অনুরোধ সত্তেও “কমলগঞ্জের রহিমপুর ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডে প্রতারণা করে বিয়ে করতে এসে ৩ সন্তানের জনক বর ও ঘটককে আটক করে স্থানীয়রা” শিরোনামে বিয়ের বর ও ঘটকের ছবি ফেসবুকে পোস্ট করাকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের বাক-বিতন্ডার ঘটনায় স্থানীয় ওয়ার্ড মেম্বারকে জড়িয়ে মিথ্যা সংবাদ পরিবেশন ও ফেসবুকে অপপ্রচারে দৈনিক খবরপত্রের কমলগঞ্জ উপজেলা প্রতিনিধি আব্দুল বাছিত খানের উপর বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছিলেন রামচন্দ্রপুর গ্রামবাসী। ৭ আগষ্ট দু’পক্ষের বাক-বিতন্ডার পর আব্দুল বাছিত খান এবং ৯ আগষ্ট ওয়াতির মেম্বার কমলগঞ্জ থানায় পাল্টাপাল্টি জিডি করেন। ঘটনাটি নিয়ে আব্দুল বাছিত খান ও ওয়াতির মেম্বারের মধ্যে চলেছে কাঁদা ছুড়াছুড়ি। তবে, এ প্রতিনিধিসহ ৬ সদস্যের সাংবাদিক দলের অনুসন্ধানে বাছিত খানের উপর হামলার সত্যতা যেমন পাওয়া যায়নি, তেমনি বাছিত খানের ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট পরিস্থিতির সাথে ওয়াতির মেম্বারের সংশ্লিষ্টতাও পাওয়া যায়নি। ঘটনাটি ঘটেছিল গত ৭ আগষ্ট শুক্রবার মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার ১নং রহিমপুর ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডস্থিত রামচন্দ্রপুর গ্রামে। ১৩ আগষ্ট বৃহষ্পতিবার বিকেল ৩টায় রামচন্দ্রপুর গ্রামে মানববন্ধনের আয়োজন করে গ্রামবাসী। মানববন্ধন আয়োজনের সংবাদ পেয়ে সরেজমিন রামচন্দ্রপুর গ্রামে গেলে জানা যায়, থানা প্রশাসন নিষেধাজ্ঞা দেয়ায় মানববন্ধন হচ্ছেনা।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত বিপুল সংখ্যক লোকজন জানান- গত ৭ আগষ্ট শুক্রবার গ্রামের রইছ মিয়ার প্রতিবন্ধী মেয়ের বিয়ের অনুষ্ঠানে গিয়ে ওয়াতির মেম্বার জানতে পারেন বর আরেকটি বিয়ে করেছে তাই কনেপক্ষ তার কাছে মেয়ে বিয়ে দিতে রাজি নন। তখন ওয়াতির মেম্বার বরের ওয়ার্ড মেম্বার মুজিবুর রহমানকে ফোন করে ঘটনাস্থলের আসার অনুরোধ করেন। কিছুক্ষণ পর মুজিব মেম্বারের ভাই মুকিত মিয়াসহ কালেঙ্গা এলাকার কয়েকজন মুরুব্বি ঘটনাস্থলে আসলে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। এমতাবস্থায় মুজিব মেম্বারও ঘটনাস্থলে আসেন। এসময় সাংবাদিক বাছিত খানও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। মুজিব মেম্বার বরকে দেখে চিনতে পেরে জানান, তার স্ত্রী থাকলেও ৬/৭ বছর যাবৎ বিদেশে রয়েছে এবং তার সাথে কোনো যোগাযোগ নেই। তবে বর ভালো, তার কাছে মেয়ে বিয়ে দিতে পারেন। এরপর বিয়ে সম্পন্ন হয়। কাবিননামায় বরের পক্ষে মুজিব মেম্বার কনের পক্ষে ওয়াতির মেম্বার স্বাক্ষী হন।
এর কিছুক্ষণ পর বাছিত খান ও স্থানীয় যুবকদের মধ্যে কথা কাটাকাটি শুনে ওয়াতির মেম্বার এগিয়ে গিয়ে ‘কি হয়েছে’ জানতে চাইলে যুবকরা জানায়, এলাকার মুরুব্বিরাসহ আমরা সবাই বর ও ঘটকের ছবি ফেসবুকে পোস্ট না করার অনুরোধ সত্তেও তিনি তা ফেসবুকে পোস্ট করেছেন। তখন ওয়াতির মেম্বার বলেন আচ্ছা ঠিক আছে তোমরা তার সাথে খারাপ আচরণ করবেনা। সে এগুলো কেটে দিবে। তখন বাছিতও বলেন ছবিগুলো ফেসবুক থেকে কেটে দিবেন। এরপর সবাই ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। কিন্তু, বাছিত খান এর কয়েকঘন্টার মধ্যেই ওয়াতির মেম্বারকে জড়িয়ে ফেসবুকে অপপ্রচার শুরু করেন। পরদিন রইছ মিয়া (কনের পিতা) ওয়াতির মেম্বারকে জানান “ গতরাতে বাছিত খান বাড়িতে এসে বলে “ক্যামেরা দিয়ে ছবি তুলেছি, নেটে ছেড়েছি, এখানে খরচ আছে, এখন এটা কাটতে হলে ১ হাজার টাকা লাগবে। এ নিয়ে বাছিত খানের সাথে কথা কাটাকাটি হয়েছে”।
উপস্থিত লোকজন বলেন, বাছিত খানের চাচা এনআইডি কার্ড জালিয়াতির মাধ্যমে বয়স্ক ভাতা তুলে আসছিলেন। ওয়াতির মেম্বার ওই এনআইডি কার্ডটি চেয়ারম্যানের হাতে তুলে দিলে চেয়ারম্যান ওই বয়স্ক ভাতা বন্ধ করিয়েছিলেন। সেইথেকেই বাছিত খান নানা ছলছুতায় ওয়াতির মেম্বারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে আসছে। শুধু ওয়াতির মেম্বারই নয়, এলাকায় কোন কিছু হলেই মিথ্যা সংবাদ পরিবেশন ও ফেসবুকে অপপ্রচারের মাধ্যমে লোকজনকে হয়রানী করে থাকে। এ গ্রামেরই বাসিন্দা হয়েও সে এলাকার লোকজনকে অতীষ্ট করে তুলেছে। আমরা এর প্রতিকার চাই।
তবে, অভিযুক্ত সাংবাদিক বাছিত খান তার বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগ অস্বীকার করে জানান- ফেসবুকে পোস্ট দেয়ার কারণে আমার উপর হামলা চালানো হয়েছে। বাছিত খানের অন্যান্য কিছু ঘটনাসহ প্রায় হুবহু উপরোক্ত বক্তব্য দিয়ে ওয়াতির মেম্বার বলেন- সত্য ঘটনাবলী জনসমক্ষে তুলে ধরবেন বলেই আমি সত্যসন্ধানী জাতির বিবেকের কাছে আশাবাদী। সর্বশেষ- গত ১৬ আগষ্ট দুপুরে ১নং রহিমপুর ইউপি চেয়ারম্যান ইফতেখার আহমদ বদরুলের উদ্যোগে ইউপি কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মিমাংসা বৈঠকে বাছিত খান তার অপরাধ স্বীকার করে ক্ষমা প্রার্থনা এবং ভবিষ্যতে আর এমনটি না করার অঙ্গীকার করায় বিষয়টি নিষ্পত্তি হয়েছে। সূত্র: হুমায়ূন রহমান বাপ্পী লিখিত প্রতিবেদনটি আমাদের কাছে পাঠিয়েছেন জবলু সরকার