হারুনূর রশীদ।। ২০১৯সালের মে মাসে বিভিন্ন খবরের কাগজের রিপোর্ট উড়িয়ে দিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছিলেন ইরাণকে চাপে রাখতে পশ্চিম এশিয়ায় এখনই সেনা পাঠানোর কথা ভাবছে না তার প্রশাসন। ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতোল্লা আলি খামেনেই-ও ওই সময় টিভিতে বার্তা দিয়েছিলেন, আমেরিকার সঙ্গে কোনও যুদ্ধে জড়াতে চায় না তাঁর দেশ। অথচ ওই সময়ই মার্কিন দেশের প্রথম সারির একটি দৈনিক লিখেছিল, ইরাক-সহ গোটা পশ্চিম এশিয়ায় অন্তত ১ লক্ষ ২০ হাজার সেনা পাঠানোর কথা ভাবছে আমেরিকা। যদিও গোটা রিপোর্টটিই উড়িয়ে দিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তাঁর সংযোজন ছিল, “আমরা যদি পশ্চিম এশিয়ায় আরও সেনা পাঠানোর কথা ভাবি, তবে সেই সংখ্যা হবে বিপুল।” এসময় ট্রাম্পসহ গোটা মার্কিন প্রশাসন দাবী করেছিল যে আমেরিকা বা তার বন্ধু দেশগুলির উপরে তেহরান হামলার ছক কষছে।
জেনারেল সোলায়মানি |
এর উত্তরে টিভিতে এসে নেতা খামেনিই বলেছিলেন-“আমরা যুদ্ধ চাই না।” তিনি আমেরিকার কথা উল্লেখ করে বলেছিলেন, ওরা ভাল করেই জানে যে ইরাণের সাথে ওদের যুদ্ধে কোনই লাভ নেই। ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা এ কথা বললেও প্রেসিডেন্ট হাসান রৌহানির উপদেষ্টা কিন্তু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে প্রচ্ছন্ন হুমকি দিয়ে এক টুইট বার্তায় বলেছিলেন-“আপনারা আমাদের সঙ্গে আরও ভাল পরমাণু চুক্তি চান। কিন্তু দেখে তো মনে হচ্ছে, আপনারা তার বদলে যুদ্ধটাই চান।” ওই সময়ই আমেরিকার দীর্ঘদিনের বন্ধু এবং ইরান চুক্তির অন্যতম অংশগ্রহণকারী দেশ ব্রিটেনের এক সিনিয়র সেনা কর্তা পেন্টাগনে বলেছিলেন যে, ইরানের আক্রমণের যে ভয় আমেরিকা পাচ্ছে, তা অযৌক্তিক। এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই মার্কিন সেন্ট্রাল কমান্ডের বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, ইরানের তরফে হামলা হলেই কড়া হাতে তার মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছে তারা।
দীর্ঘ ৭মাস পর ইরানী বিপ্লবী গার্ড কুদস ফোর্স-এর দলনেতা জেনারেল কাসেম সোলায়মানির হত্যা ঘটনা আমেরিকার সে কথারই প্রতিধ্বনি হলো। ওবামা প্রশাসনের সময় হোয়াইট হাউসের পার্সিয়ান গাল্ফ ও মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক প্রাক্তন সমন্বয়ক ফিলিপ গর্ডন জেনারেল সোলায়মানি হত্যা ঘটনার উল্লেখ করে বলেছেন এটি ছোট-খাটো নমুনায় ইরাণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার সামিল। জেনারেল সোলায়মানি ছিলেন মধ্যপ্রাচ্যে ইরাণি শক্তির নিবেদিত শ্রেষ্ট পরিকল্পনাকারী।
ইরাণের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনেই বলেছেন হত্যা ঘটনার সাথে জড়িত দূষ্কৃতিকারীদের জন্য মারাত্মক প্রতিহিংসামূলক প্রতিশোধ অপেক্ষা করছে। পেন্টাগন বলেছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প হত্যা নির্দেশ দিয়েছেন কারণ জেনারেল সোলায়মানি আমেরিকানদের উপর আক্রমনের নক্সা তৈরী করছিলেন। অনেকের মতে পেন্টাগন চায় এমনসব ঘটনা ঘটুক যা ট্রাম্পকে অপসারণে সহায়ক হবে। এখন দেখার বিষয় পরবর্তীতে কি ঘটনা অপেক্ষা করছে কালের অন্যপ্রান্তে। তথ্যসূত্র: সংবাদমাধ্যম