হারুনূর রশীদ
শনিবার, ১৬ই কার্তিক ১৪২৩: ১২ই নভেম্বর ২০১৬
আমি মুসলমানের পক্ষে বলছি না। আমি নিজে কর্মসূত্রে নয় বরং জন্মসূত্রে একজন মুসলমান। ধর্ম প্রচার আমার পেশা তো নয়ই ব্যবসাও নয়। তবে আমি সব সময় চেষ্টা করি যেনো আমার মুখের কোন কথায় যে কেউ যেনো কখনও কোন রূপ আঘাত প্রাপ্ত না হয়। আমি সব সময় অন্যলোকের মঙ্গলকামনায় থাকার চিন্তা মাথায় রাখি। আমি সবসময় খেয়াল রাখার চেষ্টা করি যেনো কোনভাবে ন্যায্য বিষয় থেকে নিজেকে বিচ্যুত না করি। আমি সবসময় অন্যের মতামতকে গুরুত্ব দেই এবং প্রতিবাদ করতে হলে যে কারো যেকোন মতের প্রতি সন্মান ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে বিরুধীতা করে থাকি। আমি মুসলমান তবে ধর্মান্ধ নই। অতএব আমি কোন কারণেই কারো বিরুদ্ধে বা পক্ষে কিছু বলার চেষ্টা করছি না। দৈনন্দিন জীবনে প্রতি মূহুর্তের কষ্ট-মধুর পর্যবেক্ষনলব্ধ অভিজ্ঞতা থেকে বলছি।
সিরিয়া বিষয়ক জাতি সংঘের প্রতিনিধি বলেছেন, “তিনি খুবই ‘বিষন্ন ও আতঙ্কিত’ হয়েছেন সিরিয়ার আলেপ্প’তে বেসামরিক এলাকায় নির্বিশেষে রকেট হামলা চালানোর নমুনা দেখে। যেখানে ডজন খানেক মানুষ মারা গেছে।” জাতি সংঘের এই প্রতিনিধি স্টাফান দ্য মিসতুরা আরও বলেন, “যারা বলেন পূর্ব আলেপ্প’র অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে মানুষকে ক্ষনিক হাফ ছাড়ার সুযোগ করে দেবার জন্যই এই রকেট হামলা, তাদের স্মরণ করিয়ে দেয়া উচিৎ যে বেসামরিক সাধারণ নাগরীকের উপর এ নমুনার রকেট হামলা কোন অবস্থাতেই যুক্তিসিদ্ধ নয়, বরং তা যুদ্ধাপরাধ।”
বিদ্রোহী খেতাবধারীরা গত রোববার ৩০শে অক্টোবর আলেপ্প শহরের সরকার নিয়ন্ত্রিত বেসামরিক এলাকায় জনসাধারণের উপর কোন বাচবিচার নির্বিশেষে তাদের রকেট আক্রমণ অব্যাহত রাখে। ফলে ওই দিনই ৩জন শিশুসহ ৭জন নিরপরাধ মানুষ নিহত হয়। বিদ্রোহীরা এ সময় ‘টক্সিক গ্যাস’ ব্যবহার করেছে বলে সিরিয়ান সরকার অভিযোগ করেছে ।
তিন দিনব্যাপী এই আক্রমণে ১৬টি শিশু সহ কমপক্ষে ৪১জন বেসামরিক নাগরীককে হত্যা করা হয় বলে বৃটেনে অবস্থিত সিরিয়া ভিত্তিক মানবাধিকারের একটি পর্যবেক্ষক দল বলেছিলেন। তারা আরও বলেন যে শত শত মর্টার সেল ছোঁড়া হয়।
সিরিয়ার জাতীয় সংবাদ সংস্থা ‘সানা’ বলেছে ৪৮জনকে চিকাৎসা করা হয়েছে শ্বাস কষ্টের কারণে। তাদের টিভি ওইসব নাগরিকদের দেখিয়েছে, সাধারণ মানুষ ও ডাক্তারী সহায়কগন মুখোশ পড়ে হাসপাতালের দিকে দৌড়াচ্ছে।
উভয় পক্ষই একে অপরকে রাসায়নিক আক্রমনের জন্য দোষারূপ করেছেন। এরও আগে ২০১৫ সালের আগষ্টে আইএসআইএস রাসায়নিক ব্যবহার করেছে বলে জোর অভিযোগ উঠেছিল।
জাতিসংঘের হিসেবে এ পর্যন্ত সিরিয়ার ২লাখ ৫০হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়েছে আর প্রায় ১১ মিলিয়ন (১ কোটি ১০ লাখ) মানুষকে ভয় দেখিয়ে বাড়ীঘর ছাড়া করা হয়েছে। শুধু কি তাই? স্মরণ করা যেতে পারে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের কথা। মার্কিনীরা জাপানের হিরোশিমা নাগাশাকিতে কি ভয়ঙ্কর অমানবিক পশুজাত নারকীয় কাজ করেছিল এটমবোমা ফাটিয়ে। দুই থেকে চার মাস সময়ের মধ্যে ২ লাখ ২৬ হাজার মানুষকে হত্যা করেছিল ভয়ঙ্কর এক নারকীয় কষ্ট দিয়ে। এক সময়ের দুনিয়ার সম্পদশালী দেশগুলোর তালিকায় যে ইরাক, আফগানিস্তান, ইয়েমেন, মিশর, লিবিয়া, সিরিয়া প্রভৃতি দেশ ছিল আজ তারা পথের ভিখেরী হয়ে আশ্রয়ের জন্য দেশ দেশ ঘুরে বেড়াচ্ছে। যে বাগদাদ হাজার বছরের ইতিহাস ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ ছিল, সারা বিশ্বময় জ্ঞানের আলো ছড়িয়েছে সে বাগদাদকে লন্ডভন্ড করে দিয়ে তার মহামূল্যবান যাদুঘর লন্ঠন করে দেশটিকে ফতুর বানিয়ে দেয়া হয়েছে। যে দামেষ্ক, কাবুল, কান্দাহার, বসরা, ত্রিপলী, বেনগাজী সহ আরো নাম নাজানা কত শহর বন্দরকে কামান-বন্ধুকের আঘাতে আঘাতে চুরমার করে কত শতাব্দী পেছনে যে ঠেলে দেয়া হয়েছে তা হিসেব করে বের করতে হবে!
দুনিয়ার সর্বত্র আজ মার্কিনীদের সৃষ্ট ভয়ঙ্কর এক যুদ্ধবাজ জঙ্গি আইএস জুজুর ভয়। তার আগে দেড়যুগ গোজার হয়েছে তাদেরই সৃষ্ট লাদেন আর আলকায়দার ভয়ে। সারা বিশ্বব্যাপী চরম অর্থনৈতিক এক মন্দা অবস্থা বিরাজ করছে। এ সব কিছুর মূলে দুনিয়ার লগ্নিপুঁজির ব্যবসায়ীদের গুরু সাম্রাজ্যবাদী ইংমার্কিন গুষ্ঠী ও তাদের দেশীয় তাবেদাররা। এদের বিচার হবে না কেন?
এখন প্রশ্ন হচ্ছে যে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার না করেও ব্যবহারের বানানো অভিযোগে যুদ্ধাপরাধী হয়ে প্রহসনের বিচারে সাদ্দামসহ কয়েক লাখ ইরাকবাসীকে প্রান দিতে হল, লিবিয়ায় মোয়ামের গাদ্দাফিসহ সহস্রাধিক মানুষকে পরলোকে যেতে হল সেই একই অপরাধে কেনো আমেরিকার বুশ-ক্লিন্টন-ওবামা সহ খোদ মার্কিন প্রশাসনের বিচার হবে না। তারা কি যুদ্ধাপরাধী নয়? প্রশ্ন হচ্ছে কে করবে এদের বিচার? তবে সে সময় মনে হয় বেশী দূরে নয়!