কৃষকের গবাদিপশুসহ বসতঘর পুড়ে ছাই,
৯ লক্ষাধিক টাকার ক্ষতিসাধন
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে অগ্নিকা- আসবাবপত্র, সোনা, ৩টি গবাদিপশুসহ বসতঘর পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। গত বুধবার দিবাগত রাত ৯ টার দিকে উপজেলার পতনঊষার ইউনিয়নের মনসুরপুর গ্রামের তাহির মিয়ার ছেলে কৃষক আল আমিন মিয়ার বসতঘরে এ আগুনে পুড়ার ঘটনা ঘটে। আগুন পুড়ে প্রায় ৯ লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি সাধন হয়েছে। ঘটনার খবর পেয়ে কমলগঞ্জ উপজেলা দমকল সেবার একটি দল এসে স্থানীয়দের সহোযোগিতায় এক ঘন্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
ক্ষতিগ্রস্ত আল আমিন মিয়া বলেন, বুধবার রাত ন’টার দিকে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী আমার ঘরে আগুন লাগানো হয়েছে। আমার সবকিছু পুড়ে শেষ হয়ে গেছে। পড়নের কাপড় ছাড়া আর কিছুই নেই। আমার বসতঘর, আসবাবপত্র, ১টি গরু, ২টি ছাগল, হাঁস-মরগি, আমার মেয়ের সোনা পুড়ে শেষ হয়ে গেছে। খোলা ছাঁদের নিচে তিন সন্তান ও স্ত্রী নিয়ে বসে আছি। তিনি আরও বলেন, রাত নয়টার দিকে আমার স্ত্রী সন্তানদের ভাত খাওয়াচ্ছিলো, হঠাৎ ঘরের এক পাশ থেকে আগুন দ্রুত সারা ঘরে ছড়িয়ে পড়ে। যে যায়গা থেকে আগুন লেগেছে সেখানে কোন বৈদ্যুতিক সংযোগ নেই। আমরা ঘর থেকে বের হলেও ঘরের সকল আসবাবপত্র, গোয়াল ঘরে থাকা গরু, হাঁস-মুরগিগুলো পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। পরে খবর পেয়ে আশপাশের লোকজন ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনলেও ততক্ষণে সবকিছু হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছি। আমার ৯ লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
আল-আমীনের স্ত্রী সাফিয়া বেগম বিলাপ করে বলেন, আমরা কই যাবো এখন, আমার জামাই দিনমজুরি করে পরিবারের খরচ চালায়, আমার ঘর পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, আমার ধান, চাল, খাট, ফ্রিজ, সোনা, গরু, ছাগলসহ সবকিছু পুড়ে গেছে আমরা এখন কই যাবো।
পতনঊষার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অলি আহমদ খান বলেন, আগুন লাগার ঘটনা শুনে সাথে সাথেই ঘটনাস্থলে গিয়ে ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয়দের নিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনি। আগুনে কৃষক আল আমিনের বসতঘর, আসবাবপত্র ও গবাদিপশু পুড়ে গেছে। আমার ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে তাৎ্ক্ষণিক নগদ ৫ হাজার টাকা দিয়েছি। আরও ৫ হাজার টাকা দিবো।
কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীন বলেন, আগুন লাগার ঘটনা শুনেছি। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে সরকারি সহায়তা প্রদান করা হবে।
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ উদযাপন করা হয়েছে। এ উপিলক্ষে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০ টায় উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীনের সভাপতিত্বে ও স্কাউটার মোসাহীদ আলীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক মোঃ রফিকুর রহমান।
এ সময় উপজেলা সহকারী কমিশনার(ভূমি) রইছ আল রেজুয়ান, কমলগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মোঃ জুয়েল আহমেদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা জয়নাল আবেদীন, বীর মুক্তিযোদ্ধা আনন্দ মোহন সিংহ, কমলগঞ্জ থানার ওসি সাইফুল আলম, উপজেলা স্বাস্থ্য ও প: প: কর্মকর্তা ডা: এম. মাহবুবুল আলম ভূঁইয়াসহ মুক্তিযোদ্ধা, সরকারি কর্মকর্তা, সাংবাদিক ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। এর আগে কৃষি মন্ত্রী উপাধ্যক্ষ ড. আব্দুস শহীদ এমপির পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। এর পরপর উপজেলা প্রশাসন, উপজেলা পরিষদ, সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন দফতরের পক্ষ থেকে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়।
দিবসটি উপলক্ষে উপজেলা প্রশাসন আয়োজিত দিনব্যাপী অন্যান্য কর্মসুচির মধ্যে ছিল সরকারি বেসরকারি ভবন ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় আলোকসজ্জা, সুর্যোদয়ে সাথে সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এঁর ঐতিহাসিক ৭ ই মার্চের ভাষণ মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টরের মাধ্যমে প্রচার, আলোচনা সভা এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর জীবন ও আদর্শ এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিষয়ে শিশু-কিশোরদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা।
২৯০ বস্তা ভারতীয় চিনি জব্দ,
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে চোরাইভাবে আসা ২৯০ বস্তা ভারতীয় চিনি জব্দ করা হয়েছে। উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এর অভিযানে অবৈধভাবে আমদানি করা ৫০ কেজির ২৯০ বস্তা ভারতীয় চিনি জব্দ করলেও পাচারে ব্যবহৃত দুটি ট্রাক আটক করা যায়নি। এ সময় চিনির গোডাউন সিলগালা করা হয়। বৃহস্পতিবার দুপুর সোয়া ১টার দিকে কমলগঞ্জ উপজেলার শমশেরনগর ইউনিয়নের রাধানগর এলাকায় অভিযান চালানো হয়।
শমশেরনগর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক (তদন্ত) শামীম আকনজী জনান, ঘটনাস্থল থেকে ভারতীয় একটি কোম্পানির ২৯০ বস্তায় মোট ১৪ হাজার ৫শত কেজি চিনি জব্দ করা হয়। যার আনুমানিক বাজারমূল্য প্রায় ১৯ লক্ষ টাকা।
স্থানীয়রা জানান, চিনি পাচারকারী এই চক্রের কয়েকজন মিলে দীর্ঘ দিন ধরে ভারত থেকে চোরাই পথে কম দামে ভারতীয় চিনি আনে জেলার বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করছিল। প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চোরাচালানের মাধ্যমে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে অবৈধভাবে ভারতীয় পণ্য বাংলাদেশে আমদানি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। একটি চক্র ভারত থেকে চোরাই পথে কম দামে চিনি আনে। ওই চিনি দেশীয় কোম্পানির চিনির বস্তায় ভর্তি করে চক্রটি। পরে তা দেশীয় কোম্পানির চিনি হিসেবে বেশি দামে বিক্রি করা হয়।
বৃহস্পতিবার শমশেরনগর ইউনিয়নের রাধানগর এলাকায় অভিযানের সময় সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে তড়িঘড়ি করে চিনি গোডাউনে রেখে বাকী চিনি ভর্তি দুটি ট্রাক মৌলভীবাজারের দিকে চলে যায়।
এদিকে সীমান্তবর্তী কমলগঞ্জ উপজেলার শমশেরনগরসহ বিভিন্ন হাটবাজারে মিলছে চোরাই পথে আসা ভারতীয় চিনি। এতে চোরাকারবারীরা রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হচ্ছে। ঠকছেন ভোক্তারা। সীমান্ত এলাকা থেকে প্রায়ই ট্রাক ও পিকআপ ভর্তি চিনি আসার কারণে সরকার হারাচ্ছে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, কুলাউড়ার ফুলতলা, চাতলাপুরসহ সীমান্তের কয়েকটি স্থান দিয়ে প্রতিদিন আনা হচ্ছে ভারতীয় চিনি। সাধারণত ভোর রাতে অবৈধ চিনি আনা হয়। শমশেরনগরের স্থানীয় চোরাকাবারীসহ কমলগঞ্জ ও কুলাউড়ার একটি প্রভাবশালী মহল অবৈধ চিনি ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত। সীমান্ত অতিক্রম করেই তারা ভারতীয় বস্তা পরিবর্তন করে দেশীয় বস্তা দিয়ে চিনি পরিবহন করে। ফলে প্রশাসন ইচ্ছে করলেও ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারছে না। সীমান্ত এলাকার নিরীহ সাধারণ লোকদের দৈনিক ভিত্তিতে মজুরি প্রদান করে এই ব্যবসা পরিচালিত হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শমশেরনগর বাজারের দু’জন ব্যবসায়ী বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ভারতীয় চিনি কিনে বিক্রি করছি। শমশেরনগর ভেতর বাজারের এক ব্যবসায়ীর দোকান থেকে তুলনামূলক কম দামে ভারতীয় চিনি পাওয়া যাচ্ছে। তিনি যদি একবার অকশনের মাল ক্রয় করেন পরে পুরো মাস অবৈধভাবে আসা চিনি সরবরাহ করেন।
পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের একটি সূত্র জানায়, এ ব্যাপারে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর মৌলভীবাজার এর সহকারী পরিচালক মো. সফিকুল ইসলাম বলেন, আসলে এই বিষয়টি পুলিশ দেখলে ভালো হয়। সেখানে মামলার বিষয়ও সম্পৃক্ত। তারপরও অভিযানে আসলে তা খতিয়ে দেখা হবে।
এ বিষয়ে কমলগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রইছ আল রেজুয়ান, অভিযানকালে ঘটনাস্থলে কোন ট্রাক পাওয়া যায়নি। তবে ২৯০ বস্তা চিনি জব্দ করা হয়েছে। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না পেলে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার আদমপুর বদরুন নাহার ভূঁইয়া (বি.এন.ভূঁইয়া) বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিনামূল্যে স্কুল ড্রেস বিতরণ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৭ মার্চ) দুপুর ১টায় স্কুল প্রাঙ্গণে স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান সাব্বির আহমদ ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে ও শিক্ষক আব্দুল মতিনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন কমলগঞ্জ উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি ইমতিয়াজ আহমেদ বুলবুল ।বিশেষ অতিথি ছিলেন কমলগঞ্জ পৌরসভার মেয়র জুয়েল আহমেদ, উপজেলা পরিষদের নারী ভাইস চেয়ারম্যান বিলকিস বেগম, মাধবপুর ইউপি চেয়ারম্যান আসিদ আলী, নারী নেত্রী মুন্না রায় ও স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা তফাদার রিজুওয়ানা ইয়াসমিন সুমি।
অনুষ্ঠানে স্কুলের ২২০ জন শিক্ষার্থীকে প্রতিষ্ঠাতা সভাপতির পক্ষ থেকে প্রায় লক্ষাধিক টাকার স্কুল ড্রেস বিতরণ করা হয়।
আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালিত
“নারীর সম অধিকার, সম সুযোগ এগিয়ে নিতে হোক বিনিয়োগ” এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে শোভাযাত্রা, আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয়ের যৌথ আয়োজনে শুক্রবার (৮ মার্চ) বেলা ১১ টায় উপজেলা পরিষদ সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীনের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন কমলগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যপক মো: রফিকুর রহমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান বিলকিস বেগম।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মোছাঃ হোসনে আরা তালুকদার। এসময় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ অংশগ্রহণ করেন। পরে এক বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হয়। এতে উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা মহিলা বিষয়ক কার্যালয়সহ বিভিন্ন নারী সংগঠন অংশগ্রহণ করেন।
এদিকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ওয়েব ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় কমলগঞ্জ এডভোকেসী নেটওয়ার্ক কমিটির আয়োজনে শুক্রবার দুপুরে শোভাযাত্রা ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।