ছাতক, সুনামগঞ্জ থেকে লিখছেন- এ এফ এম ফারুখ চাঁনমিয়া
ছাতকে ভিমরুল মাছির (কোন কোন স্থানে ভিঙ্গলবলা, ভেঙ্গুরপোকা আবার ভিমরুল বলে ডাকা হয়।) আক্রমনে ৩জন নিহত ও আহত হয়েছেন আরো ৩জন। একসপ্তাহের মধ্যে এসব হতাহতের ঘটনায় জনমনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। জানা যায়, বুধবার ২৭সেপ্টেম্বর উপজেলার ছৈলা-আফজালাবাদ ইউপির কহল্লা গ্রামের আবুল কালামের পুত্র হাসান আহমদ(৮) লাকড়ি সংগ্রহের সময় ভেঙ্গুরপোকার আক্রমনে গুরুতর আহত হয়। এসময় হাসানের মা- হেলেনা বেগম(৩৫), বোন কলি বেগম(৬) ও ভাই হুছন আহমদ(১১) আহত হয়। এদের সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পর হাসান আহমদের মৃত্যু ঘটে।
এদিকে গত ২৩সেপ্টেম্বর কালারুকা ইউনিয়নের সঙ্করপুর(নজমপুর) গ্রামের মছকন্দর আলীর পুত্র আমির আলী(১৮) পুকুরপাড়ে বাশঁ কাটতে গিয়ে ভেঙ্গুরের কামড়ে আহত হলে ২৬সেপ্টেম্বর চিকিৎসাধিন অবস্থায় হাসপতালে তার মৃত্যু হয়। সে কালারুকা পয়েন্টের বলাই মিয়ার দোকান কর্মচারি বলে জানা গেছে।
এছাড়া গত ২০সেপ্টেম্বর উত্তর খুরমা ইউপির নানশ্রী(এলংগি) গ্রামের মফিজ আলীর পুত্র মনোহর আলী(৩৫) ভেঙ্গুরের আক্রমনে ঘটনাস্থলেই মৃত্যুবরণ করেছেন। ঘটনার দিন তিনি আমন ফসলের চারা নৌকায় ভর্তি করে কালারুকা খাল দিয়ে নিজ বাড়িতে ফিরছিলেন। পথিমধ্যে নজমপুর গ্রামের নিজাম উদ্দিনের বাড়ির পাশে ভেঙ্গুরের থাক-এ নৌকার লগির আঘাত লাগে। এতে ভেঙ্গুরের দল তাকে আক্রমন করলে প্রাণ রক্ষার্থে সে পানিতে ঝাপ দিয়ে তলিয়ে যায়। পরে তার লাশ উদ্ধার করেন স্থানীয়রা।
ছাতকে শশুর-শাশুড়ির অমানবিক নির্যাতন সইতে না পেরে নিজের গাঁয়ে কেরোসিন ঢেলে আত্মহননের অপচেষ্ঠা চালায় মনি বেগম(৩০) নামের এক গৃহবধূ। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়ছে। ২৭সেপ্টেম্বর গোবিন্দগঞ্জ-সৈদেরগাঁও ইউপির খোজাখাই গ্রামে এঘটনা ঘটে। জানা যায়, দীর্ঘদিনের পারিবারিক দ্বন্দ্বের জের ধরে ২৬সেপ্টেম্বর সকালে খোজাখাই গ্রামের আব্দুর রহিমের স্ত্রী দু’সন্তানের জননী মনি বেগমের সাথে তার শশুর শাশুড়ির ঝগড়া হয়। ঘটনার পর অব্যাহত নির্যাতনের প্রতিকারের উদ্দেশ্যে মনি বেগম স্থানীয় ইউপি সদস্য সুরেতাজ মিয়ার মাধ্যমে ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে চেয়ারম্যান আখলাকুর রহমানের কাছে বিচার প্রার্থী হলে এসময় বিষয়টি নিষ্পত্তি করা হয়। রাতে শশুর-শাশুড়ি পুনরায় তার উপর চরম নির্যাতন শুরু করে। একপর্যায়ে নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে নিজের গাঁয়ে কোরোসিন ঢেলে আত্মহননের উদ্দেশ্যে শরিরে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে তার প্রায় সিংহভাগ অংশই আগুনে পুড়ে গেছে বলে জানা গেছে। এব্যাপারে ইউপি চেয়ারম্যান আখলাকুর রহমান সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ঘটনাটি নিষ্পত্তির পর পূনরায় তাকে নির্যাতন করায় সে আত্মহননের পথ বেছে নেয়।
দীর্ঘ দু’বছর বন্ধ থাকার পর বহুল প্রতিক্ষিত বোল্ডার ও চুনাপাথর ভারত থেকে আমদানী শুরু হয়েছে। ফলে ২৬সেপ্টেম্বর থেকে ভারত ও বাংলাদেশের পাথর আমদানি-রপ্তানীর বানিজ্যিক সম্পর্ক পূনরায় শুরু হলো। এতে করে দু’দেশের ব্যবসায়িদের দায়ীত্বপূর্ণ ভূমিকায় দীর্ঘদিনের এ জটিলতার অবসান ঘটলো। জানা যায়, ভোলাগঞ্জ, চেলা ও ইছামতি সীমান্তে পাথর ও চুনাপাথর আমদানি দু’বছর থেকে বন্ধ থাকায় এপেশায় নিয়োজিত ব্যবসায়ি-শ্রমিকসহ লক্ষাধিক লোকজন বেকার হয়ে পড়েন। অবশেষে মঙ্গলবার ভোলাগঞ্জ সীমান্তে ভোল্ডার ও চুনাপাথর আমদানি শুরু হলে সর্বমহলে আনন্দ উল্লাস ছড়িয়ে পড়ে। এদিকে ব্যবসায়িদের একটি প্রতিনিধিদল ২২সেপ্টেম্বর ভারতের মেঘালয় চেম্বার্স অব কমার্স নেতৃবৃন্দের সাথে মতবিনিময়ের উদ্দেশ্যে ভারত যান। পরের দিন ২৩সেপ্টেম্বর ভারতের শিলং শহরের হোটেল এস্যাম্বলির কনফারেন্স হলে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন, মেঘালয় মিনারেল চেম্বার অব কমার্স এর প্রেসিডেন্ট স্টডার ডকার, সেক্রেটারী স্টারফিং পদ্মকাসিজ, মেঘালয় ভোলাগন্জ এক্সপোর্টার এসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট বাতেনশাই বাবা, এক্সপোর্টার মি. বাজরফ, এক্সপোর্টার ইভা মারচি, লাইমস্টোন এক্সপোর্টার্স জিএম এংরাই, বাহেব এংরাই, বাডম্বর মওলং প্রমূখ। এতে বাংলাদেশ ব্যবসায়ি দলের প্রতিনিধিারা হলেন, ছাতক ইসলামপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এড. সুফি আলম সোহেল, ছাতক লাইমস্টোন ইম্পোর্টার্স এন্ড সাপ্লায়ার্স গ্রুপের ফাইন্যান্স সেক্রেটারী আলী আমজদ, সাবেক অফিস সেক্রেটারি ইলিয়াছ আলী, সিলেট প্রেসক্লাব সদস্য সাংবাদিক এনামুল হক, লাইম স্টোন এজেন্ট সমিতির সভাপতি ফজল করিম, ব্যবসায়ি রুস্তুম আলী, আলমগীর হোসেন, সুভাষ সিং প্রমূখ।
পাথর আমদানি শুরু হওয়ায় ব্যবসায়ি, পাথর শ্রমিক, বারকি শ্রমিক, ক্রাসার মেশিনের কর্মচারিসহ বিপুল সংখ্যক লোকের জীবন-জীবিকায় গতি এসেছে বলে জানান ইম্পের্টার্স গ্রুপের নেতৃবৃন্দ।
ছাতকে সড়ক দুর্ঘটনা ও যানজট নিরসনে ট্রাফিক বিভাগ, পরিবহন শ্রমিকদের নিয়ে এক প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করেছে। বুধবার ২৭সেপ্টেম্বর উপজেলার গোবিন্দগঞ্জ তানজিনা কমিউনিটি সেন্টারে এ প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। সুনামগঞ্জ জেলা ট্রাফিক বিভাগের উদ্যোগে ‘সড়ক নিরাপত্তায় চালকদের করণীয়’ প্রশিক্ষনে বিভিন্ন যানবাহনের চালক-হেলপাররা অংশ গ্রহণ করে। ট্রাফিক ইন্সপেক্টর নির্মল চক্রবর্তীর পরিচালনায় অনুষ্ঠিত কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন, এএসপি সার্কেল (ছাতক-দোয়ারাবাজার) মোঃ দুলন মিয়া। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, সুনামগঞ্জ ট্রাফিক ইন্সপেক্টর শামছুল ইসলাম, ছাতক থানার অফিসার ইনচার্জ আতিকুর রহমান, গোবিন্দগঞ্জ-সৈদেরগাও ইউপি চেয়ারম্যান আখলাকুর রহমান, ছাতক ট্রাফিক পুলিশ পরিদর্শক সাজ্জাদ খান, সুনামগঞ্জ সদর ট্রাফিক পুলিশের এটিএসআই ইউসুফ আহমদ, গোবিন্দগঞ্জ ট্রাফিক পুলিশ পরিদর্শক রেজাউর রহমান, ছাতক প্রেসক্লাবের সাংগঠনিক সম্পাদক কাজি রেজাউল করিম রেজা, সুনামগঞ্জ অটোটেম্পু অটোরিক্সা শ্রমিক(১৬৯৩) ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ইজ্জাদুর রহমান, শ্রমিক নেতা মোশাহিদ আলী, আব্দুল খালিক, ইবরাহিম আলী, এরশাদ আলী, রইছ উদ্দিন রানা প্রমুখ। প্রশিক্ষণ কর্মশালায় চলন্ত পরিবহনে যাত্রীদের জীবনের নিরাপত্তায় চালকদের মোবাইল ফোন ব্যবহার থেকে বিরত থাকা ও গতি নিয়ন্ত্রনে রেখে রাস্তায় যানবাহন চালানোর উপর গুরুত্বারোপ করা হয়।
ছাতকে প্রতিবছরের ন্যায় এবারও পূজা মন্ডপগুলোর সাজ-সজ্জায় ভিন্ন মাত্রা যোগ করার প্রানান্তকর প্রচেষ্ঠা করেছেন উৎসব কমিটির লোকজন। পালতোলা নৌকা, দক্ষিনেশ্বর মন্দির, সিংহের মাথা, কালীঘাট মন্দির, রাজবাড়ী, কুরুক্ষেত্রে যুদ্ধ রথের আদলে সাজ-সজ্জায় ঈর্ষনীয় প্রতিযোগিতা হয়েছে শহরের মন্ডপগুলোতে। এবারে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা ও উৎসবমূখর পরিবেশে উপজেলার ৩০টি পূজামন্ডপে অনুষ্ঠিত হয়েছে শারদীয় দুর্গোৎসব। উৎসব উপলক্ষে মন্ডপ সজ্জিতকরনে মাসব্যাপী প্রতিমা ও মন্ডপ তৈরিতে দেশ-বিদেশের কারিগরদের নিপুন হাতের সৌন্দর্যবর্ধন কার্যক্রম ছিল লক্ষ্যনীয়।
হাসপাতাল রোডের ত্রিনয়নীতে সিংহের গর্জন এবারে দর্শনার্থীদের জন্যে রয়েছে বাড়তি আকর্ষণ। এখানে সিংহের মুখের ভেতর দিয়েই প্রবেশ করতে হবে মন্ডপে। কয়েকবছর থেকে এখানের পূজা মন্ডপগুলোতে আনা হচ্ছে আকর্ষন ও নতুনত্ব। ইতোমধ্যেই নজরকাড়া তাজমহল, রাজবাড়ি, টাইটানিক, বাংলাদেশ বিমান, সেভেন ষ্টার, আল-ব্রুজ টাওয়ার, স্বর্ণমন্দির, রকেটসহ অনেক নামিদামি ও পৌরানিক নিদর্শণের আদলে মন্ডপ সজ্জিত করে দূর্গাপূজায় ছাতকের নাম সিলেট বিভাগ জুড়ে আলোচনায় উঠে আসে। এবছরেও ব্যতিক্রমি সাজ-সজ্জায় সাজানো হয়েছে একাধিক পূজা মন্ডপ। এর পাশাপাশি আকর্ষনীয় ও নজরকাড়া ফটক এবং লাইটিংয়ের মাধ্যমে পুজা মন্ডপগুলোকে উপস্থাপন করা হয়েছে আরো অপরূপ সাজে। এরই ধারাবাহিকতায় কালীবাড়ি সার্বজনীন পূজা মন্ডপ সজ্জিত করা হয়েছে পৌরানিক রাজবাড়ির আদলে। সু-উচ্চ প্রাসাদকে অপরূপ আলোক সজ্জায় সজ্জিত করে অনেকটা জীবন্ত করে তুলা হয়েছে রাজবাড়িকে।
মহাপ্রভুর আখড়ার পূজা মন্ডপ সাজানো হয়েছে পালতোলা নৌকার আদলে। শহরের তাতিকোনা পূজা মন্ডপ তৈরী করা হয়েছে দক্ষিনেশ্বর কালীবাড়ীর আদলে। দীর্ঘ পথ তৈরী করা হয়েছে বিশাল অজগর সাপের আদলে। মহামায়া যুবসংঘের রেল কলোনীর পূজা মন্ডপ সব সময়ই ভিন্ন সাজে তৈরী করা হয়। এসব পূজা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা জানান, ছাতকে সব সময়ই পূজা মন্ডপগুলোকে ভিন্ন আঙ্গিকে সাজানোর চেষ্টা করা হয়। ৩০টি মন্ডপের মধ্যে রয়েছে ১২টি রয়েছে পৌরশহরে।