আবদুল আহাদ, কুলাউড়া।। কুলাউড়া উপজেলার সীমান্তবর্তী শরীফপুর ইউনিয়নের তেলিবিল এলাকা। সেখানে বসবাস করে মা-বাবা হারা অসহায় ৭ শিশু। বেঁচে থাকার অবলম্বন বলতে তাদের কিছুই নেই। চরম অনিশ্চয়তায় কাটছে তাদের জীবন। যখন বন্ধুদের সাথে খেলাধুলা কিংবা কাঁধে ব্যাগ নিয়ে স্কুলে যাওয়ার কথা, সে সময় তাদের কাটছে চরম এক অনিশ্চিত অন্ধকার ভবিষ্যত ঘিরে। কারণ তারা মা-বাবা হারা এতিম। তাদের জীবনে নেমে এসেছে অমানিশার অন্ধকার। মা-বাবাহীন সংসারে কে তাদের লালনপালন করবে- এমন সংশয় তাদের মনে সব সময়ই কাজ করে চলে নিভৃতে।
জানা যায়, কুলাউড়ার শরীফপুর ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের তেলিবিল গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন মরহুম তোয়াহিদ আলী। তিনি ৮ সন্তানের জনক। পেশায় ছিলেন রিকশা চালক। রিকশা চালিয়ে তার পরিবারের জীবিকা নির্বাহ করতেন। তার জমি বলতে তেমন কিছুই নেই। সম্বল হিসেবে দেড় শতাংশ জায়গায় একটি কুঁড়েঘর। তার প্রথম স্ত্রী মারা যাওয়ার পর দ্বিতীয় স্ত্রী শাহেদা বেগম সন্তানদের নিয়ে সেখানে বসবাস করতেন। আর্থিক সমস্যার কারণে জটিল রোগে আক্রান্ত হয়েও উন্নত চিকিৎসা করাতে পারেননি। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৭ মাস পূর্বে তোয়াহিদ আলী মারা যান। মারা যাওয়ার সময় তার দ্বিতীয় স্ত্রীর গর্ভে ছিল সন্তান। এই সন্তান প্রসবকালে তোয়াহিদ আলীর দ্বিতীয় স্ত্রীও মারা যান।
তোয়াহিদ আলীর প্রথম স্ত্রীর গর্ভের একমাত্র মেয়ে সেলিনার বিয়ে হয়ে গেছে। দ্বিতীয় স্ত্রীর গর্ভের ছেলে মঈনুল আলী (১৫)। সে এলাকায় শ্রমিকের কাজ করে। বর্তমানে এই ছেলে নাবালক আরও ৬ শিশু বাচ্চাকেই দেখাশোনা করে, যা নিতান্তই কঠিন। তোয়াহিদ আলীর সন্তানদের মধ্যে এবাদুল (১৩), সে স্থানীয় তেলিবিল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৫ম শ্রেণিতে পড়ে। নাঈম (১০) তেলিবিল মাদ্রাসায় পড়ে। রাকিব (৮) স্থানীয় মাদ্রাসায় শিশু শ্রেণিতে পড়ে। এছাড়া রাজিব (৫), ফাহিমা (২) ও নবজাতক একটি শিশু রয়েছে।
স্থানীয় লোকজনের মতে, এই পরিবারের মতো নিঃস্ব পরিবার শরীফপুর ইউনিয়নে আর নেই। নেই কোন তাদের অভিভাবক, নেই কোন উপার্জনকারী। তোয়াহিদ আলী মারা যাওয়ার পর পাড়া-প্রতিবেশী ও এলাকার বিভিন্ন জনের সহযোগিতায় তারা চলেছেন। বর্তমানে এলাকার বিভিন্ন শ্রেণিপেশার লোকজন তোয়াহিদ আলীর পরিবারকে খাদ্য সামগ্রী দিয়ে সহযোগিতা করছেন। কিন্তু তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। সেই সাথে এ ধরনের সহযোগিতা কতদিন অব্যাহত থাকবে সে বিষয়েও সংশয় রয়েছে। তোয়াহিদ আলীর ছেলে মঈনুল আয় রোজগারের অনুপযুক্ত। তাই তার ছোট ৬ ভাইবোনের ভরণপোষণের জন্য সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন।
মঈনুল, সমাজের সকল বিত্তবানদের কাছে সহযোগিতার জন্য আবেদন জানিয়েছে। যেন তার নিঃস্ব পরিবারের মুখে একটুখানি হাসি ফুটাতে পারে। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এটিএম ফরহাদ চৌধুরী জানান, ওই শিশুদের বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হবে এবং প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের যত ধরনের সহযোগিতা করা সম্ভব তা করা হবে। সেই সঙ্গে তাদের পাশে সমাজের বিত্তবানদেরও এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
|