আব্দুল ওয়াদুদ, মৌলভীবাজার থেকে।। দীর্ঘ ছয় মাসের ধারাবাহিক বন্যা ও পাহাড়ী ঢলে মৌলভীবাজারের মধ্যআয় থেকে নিম্নআয় আর সহায়সম্বলহীন মানুষজন একেবারেই নাজেহাল। সব কিছু হারিয়ে এখন বলতে গেলে অনেকটা নিঃস্ব হয়ে পড়েছে বন্যাকবলিত মধ্যবিত্ত ও গরীব-অসহায় মানুষ। তৃতীয় দফা বন্যায় কুশিয়ারা নদী পাড়ের রাজনগর উপজেলার উত্তরভাগ ইউনিয়ন, কাউদিঘি হাওর এলাকার ফতেপুর ইউনিয়ন ও মৌলভীবাজার সদর উপজেলার আখাইলকুরা ও মনুমুখ ইউনিয়নের প্রায় দেড় লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এছাড়া হাকালুকি হাওর পাড়ের কুলাউড়া, জুড়ি ও বড়লেখা উপজেলায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন আরো লক্ষাধিক মানুষ। বন্যা তাদের সব কিছু কেড়ে নিয়েছে।
কেমন কাঠছে হাওরপাড়ের মৎস্যজীবিদের দিনকাল? বাস্তবে দেখতে গিয়ে দেখা গেল এক বেহাল দশা! নদী ও হাওরপাড়ের ‘নিত আনা নিত খাওয়া’ মানুষের যুগ যুগের পাতা সংসার তছনছ করে দিয়ে মনের সুখ কেড়ে নিয়েছে তৃতীয়দফার বন্যা। কেমন মনমরা হয়ে সময় কাটাতে দেখা যায় নদী ও হাওর পাড়ের খেটে খাওয়া মানুষ ও জেলেদের। দু’মুটো ভাতের জন্য জেলে পিতার হাতের দিকে চেয়ে থাকে সন্তানরা। কিন্তু বাবার জালে মাছ ধরা না পড়ায়, বাচ্চাদের খাদ্য জোগাতে পারছেন না মৎস্যজীবি বাবা। এমনই দুর্দশাগ্রস্ত অবস্থা হাকালুকি ও কুশিয়ারা নদী পাড়ের গ্রামগুলোতে।
বন্যার পানি কমে তৃতীয় দফায় আবার বেড়ে যাওয়াতে জলাবদ্ধতায় টইটুম্বুর জেলার প্রধান মৎস ভান্ডার হাকালুকি, কাউয়াদিঘী ও হাইল হাওর। তাই অন্য বছরের তুলনায় অর্ধেকেরও কম মাছ ধরা পড়ছে জেলেদের জালে। খেয়ে না খেয়ে দিন পার করছে হাওর পাড়ের জেলে পরিবার।
হাওরগুলোতে কম মাছ ধরা পড়ায় জীবিকার সংকটে পড়েছেন মৎস্যজীবীরা। তাদের ঘরে চলছে অভাব-অনটন। হাওরাঞ্চলের বাড়িঘর থেকে বন্যার পানি বেড়ে গিয়ে আবার যেই সেই। হাওরে এখন অনেক বেশি পানি। ভাসান পানিতে তাই মাছ মিলছে কম।
মাছ ধরা না পড়ায় এবং বিকল্প কর্মসংস্থান না থাকায় বেকার হয়ে পড়েছেন অনেক জেলে। এই অবস্থায় সরকারি ত্রাণ সহায়তাও পাচ্ছেন না সবাই। কুশিয়ারা নদী পাড়ের ফতেপুর ইউনিয়নের শাহাপুর গ্রামের জেলে তাহিদ আলী, সুনামপুর গ্রামের জুবেদ ও সুমেল জানায়, ধারাবাহিক ছয় মাসের বন্যায় কানায় কানায় নদীর পানি। পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নদীতে মাছের দেখা মিলেনা। এ অবস্থায় একেবারে অসহায় লাগে। কুশিয়ারা নদীতে একসময় ১৫/২০ প্রজাতির মাছ পাওয়া যেত। এখন মাছের সংখ্যাও কমে গেছে।
হাকালুকি হাওর পাড়ের সেলিম উদ্দিন জানান, ‘এই বছর হাওরে বেশি পানি থাকার কারণে জালে মাছ ধরা পড়ছে কম। অন্যান্য বছর হাওরে জাল ঠেনে জন প্রতি ৫/৬শ টাকা রুজগার করা যেত। এ বছর আগেরমত জালে মাছ ধরা পড়েনা।’ ফলে, কোন রকম খেয়ে না খেয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে বেঁচে আছেন হাওর পাড়ের মানুষ।
রাজনগর উপজেলার কাউয়াদিঘি হাওর পাড়ের বেরকুড়ি গ্রামের জেলে মাসুক মিয়া ও সুন্দর আলী বলেন, এই বছর হাওরে পানি খুব বেশী, সাথে বাতাসও আছে। অনেক সময় বাতাসের কারণে জাল দিয়ে মাছ ধরা যায়না। এছাড়াও ঘাসের ছড়াছড়িতো আছেই। আর হাওরের সবটুকু এলাকা পানিতে টইটুম্বুর থাকায় মাছ চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে গেছে তাই জালে ধরা পড়ছেনা।
জেলা মৎস্য কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সারা জেলায় ১৩ হাজার ৪০০ নিবন্ধিত মৎস্যজীবী আছেন। তবে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নিবন্ধনের বাইরেও অনেক মৎস্যজীবী রয়েছেন।