চায়ের দেশে পর্যটকের ঢল,
কর্মব্যস্ত জীবনে স্বস্তির নিশ্বাস
কর্মব্যস্ত জীবনে একটু স্বস্তির নিশ্বাস, সবুজ প্রকৃতির সাথে মিলেমিশে একাকার। ঈদের ছুটিতে এমনই দৃশ্য চায়ের দেশ শ্রীমঙ্গলের সর্বত্র।
পবিত্র ঈদ উল ফিতরের টানা ছুটিতে পর্যটক ও স্থানীয়দের ভিড়ে মুখরিত হয়ে উঠেছে চায়ের রাজধানী। প্রকৃতির সবুজ চাদরে ঢাকা চায়ের রাজধানী এবং পর্যটন নগরীর চা বাগানগুলোতে ঈদের ছুটি কাটাতে ঘুরে বেড়াচ্ছেন পর্যটকরা। তেমনী সবুজের হাতছানিতে হারিয়ে যাচ্ছেন লাউয়াছড়াসহ বিভিন্ন বন জঙ্গলে। এলাকার দর্শনীয় স্থানগুলোতে ভীড় করছেন তারা দেশ বিদেশের পর্যটকরা। হোটেল ও রিসোর্ট মালিকরা জানিয়েছেন, বেশিরভাগ হোটেল ও রিসোর্টই আজ ঈদের চতুর্থ দিনে শতভাগ বুকিং রয়েছে।
এদিকে, বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন-কর্মকর্তা ড. মোঃ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, গত তিনদিনে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার পর্যটক প্রবেশ করেছেন। পর্যটকদের প্রবেশ ফি থেকে ৫ লক্ষাধীক টাকা রাজস্ব আয় হয়েছে।
জীবনের ব্যস্ততা থেকে মুক্তি পেতে মানুষ ছুটে চলে প্রকৃতির সান্নিধ্যে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। পবিত্র ঈদুল ফিতরের টানা ছুটিতে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল পর্যটকদের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা হাজারো পর্যটকের পদচারণায় মুখরিত হয়েছে চায়ের রাজধানীখ্যাত এই অঞ্চল।
![]() চায়ের দেশে চা-কন্যার স্বাগতমী হাতছানি। |
শহরের চা বাগান, পর্যটন কেন্দ্র, ঐতিহাসিক স্থান ও বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। স্থানীয় ট্যুর অপারেটর ও হোটেল-মোটেল কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, ঈদের দ্বিতীয় দিন থেকেই পর্যটকদের আনাগোনা বাড়তে শুরু করে এবং তৃতীয় ও চতুর্থ দিন হোটেল ও রিসোর্টগুলো প্রায় হাউজফুল হয়ে যায়।
শ্রীমঙ্গলের বিখ্যাত চা কন্যার ভাস্কর্য, বধ্যভূমি একাত্তর, বিটিআরআই, সাত রঙের চায়ের দোকান, রাধানগর, মনিপুরী পাড়া, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান ও মাধবপুর লেকে প্রচুর পর্যটকের সমাগম হয়েছে। শ্রীমঙ্গলে প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসা পর্যটকদের এ উৎসবমুখর ভিড় আগামী কয়েকদিন অব্যাহত থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
শহরের অভ্যন্তরে ব্যস্ত সড়কজুড়ে পর্যটকদের গাড়ির দীর্ঘ সারি চোখে পড়ে। বিশেষ করে চাদের গাড়ি (জিপ) নিয়ে পাহাড়ি পথ ধরে ঘুরে বেড়ানোর আনন্দে মেতে ওঠেন পর্যটকরা।
শ্রীমঙ্গলের চামুং রেস্টুরেন্টের পরিচালক পংকজ ভট্টাচার্য বলেন, “ঈদ উপলক্ষে স্থানীয়দের পাশাপাশি দেশ-বিদেশের প্রচুর পর্যটক আসছেন। আশা করছি এবারের ঈদের ছুটিতে ভালো ব্যবসা হবে।”
![]() চা বাগানের নৈস্বর্গিকতা। যেনো এক মৌন ঋষি। ছবি: সংগৃহীত |
শ্রীমঙ্গল ট্যুর অপারেটর অ্যান্ড ট্যুর গাইড অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক রাসেল আলম জানান, “ঈদের ছুটিতে শ্রীমঙ্গলে প্রচুর পর্যটক এসেছেন। আমাদের বেশিরভাগ ট্যুর গাইড ব্যস্ত সময় পার করছেন। বিদেশি পর্যটকরাও এসেছেন। অন্য অনেক জায়গায় পর্যটকদের হয়রানির শিকার হতে হয়, কিন্তু শ্রীমঙ্গলে নিরাপদে ঘুরতে পারেন।”
পর্যটকদের নিরাপত্তার বিষয়ে ট্যুরিস্ট পুলিশ শ্রীমঙ্গল জোনের পরিদর্শক মো. কামরুল হোসেন চৌধুরী বলেন, “ঈদের ছুটিতে প্রচুর পর্যটক এসেছে। তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমরা প্রতিটি দর্শনীয় স্থানে নজরদারি বাড়িয়েছি। ট্যুরিস্ট পুলিশ ছাড়াও থানা পুলিশ ও র্যাব মোতায়েন রয়েছে, যাতে কোনো পর্যটক হয়রানির শিকার না হন।”
তবে এবার বাড়তি নিরাপত্তায় যোগ হয়েছে সড়কবাতি ও সিসি ক্যামেরা। মূলত শ্রীমঙ্গলের পর্যটন স্থানগুলোতে নিরাপদ ভ্রমন ও বসবাসের জন্য উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বিভিন্ন এলাকায় মোট ১২৭টি সোলার প্যানেলের সড়ক বাতি স্থাপন করা হয়। গ্র্যান্ড সুলতান থেকে রাধানগর নভেম রিসোর্ট, নীলকন্ঠ চা কেবিন থেকে কালিঘাট চা-বাগানসহ আরও কিছু এলাকায় সরকারি ব্যবস্থাপনায় সড়ক বাতি স্থাপন করা হয়। এছাড়াও উপজেলা প্রশাসনের আহ্বানে রিসোর্ট ব্যবসায়ীরা প্রয়োজনীয় সিসি ক্যামেরা বসিয়েছেন।
পর্যটকদের নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দ্যময় ভ্রমণ নিশ্চিত করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাড়তি সতর্কতা নেওয়া হয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
শ্রীমঙ্গলে পর্যটনবান্ধব সোলার স্ট্রিট লাইটের শুভ উদ্বোধন
![]() |
মৌলভীবাজারেরবশ্রীমঙ্গলে ১২৭টি সোলার স্ট্রিট লাইট স্থাপন করে এর আনুষ্ঠানিক শুভ উদ্বোধন করা হয়েছে। এর ফলে আলোকিত হয়েছে পর্যটকদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ রাধানগর ও কালিঘাট এলাকার দু’টি সড়ক। শ্রীমঙ্গলে নিরাপদ ও পরিবেশবান্ধব পর্যটন ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে যুক্ত হলো এই সড়ক বাতি।
গতকাল শনিবার (৫ এপ্রিল) বিকাল ৪টায় ৯ কিলোমিটার সড়কজুড়ে ১২৭টি সোলার স্ট্রিট লাইট স্থাপনের মধ্য দিয়ে আলোর পথে এগিয়ে চলার এই যাত্রা শুরু হলো। শ্রীমঙ্গলের পরিবেশবান্ধব পর্যটক গ্রাম রাধানগর এলাকায় এই প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন অনুষ্ঠিত হয় এক বর্ণাঢ্য আয়োজনে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে সোলার স্ট্রিট লাইটের উদ্বোধন করেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব এবং ইউডিজিপি প্রজেক্ট ডিরেক্টর ড. আবু নছর মোঃ আব্দুল্লাহ। তিনি এই প্রকল্পকে শ্রীমঙ্গলের পর্যটন উন্নয়নের একটি মাইলফলক বলে উল্লেখ করেন।
অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ ইসলাম উদ্দিন। তিনি বলেন, শ্রীমঙ্গলের পর্যটকদের নিরাপত্তা ও চলাচল সহজতর করতেই এ উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। আমরা পর্যটনবান্ধব একটি উপজেলা গড়তে কাজ করছি।
শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ সড়কের টি-রিসোর্ট সংলগ্ন প্রধান সড়কে সোমবার (৩১ মার্চ) রাত আনুমানিক ১০:১৫ মিনিটে এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। একটি মোটরসাইকেল টার্ন নিতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পিচঢালা অংশে ছিটকে পড়ে। এতে গুরুতর আহত হন দুইজন, যাদের স্থানীয়দের সহায়তায় দ্রুত শ্রীমঙ্গল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়।
শ্রীমঙ্গল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দায়িত্বপ্রাপ্ত মেডিকেল অফিসার ডা. সম্রাট কিশোর পোদ্দার জানান, আহতদের মাথায় গুরুতর আঘাত লেগে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাদের মৌলভীবাজার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্থানান্তর করা হয়। আহতরা হলেন শমশেরনগর চা-বাগানের বাসিন্দা মিলন রবিদাস (৩৩) ও বীরবল রবিদাস (৪০)।
মৌলভীবাজার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসকরা আহতদের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে বিবেচনা করে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিলেটে পাঠানোর পরামর্শ দেন। রাতেই তাদের সিলেটের ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
আহত মিলন রবিসাসের মামা কানাই রবিদাস জানান, “গুরুতর আহত অবস্থায় বীরবল রবিদাসকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসা শেষে তাকে মাউন্ট এডোরা প্রাইভেট হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়, যেখানে রাত ২:৩০ মিনিটে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।”
কানাই রবিদাস আরও জানান,”অপর আহত মিলন রবিদাসের চিকিৎসা বর্তমানে সিলেটের ওসমানী মেডিকেল হাসপাতালে চলছে। চিকিৎসকদের মতে, আগের তুলনায় তার শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, দুর্ঘটনার পর আশপাশের মানুষ দ্রুত আহতদের সাহায্যে এগিয়ে আসেন এবং তাদের হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা করেন। তবে কীভাবে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে, সে বিষয়ে বিস্তারিত তদন্ত প্রয়োজন বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।