হারুনূর রশীদ।।
“আইয়াম ই জাহিলিয়াৎ”। অর্থাৎ দুষ্ট, শয়তান, দুর্জনদের যুগ বা সময়। নবী মোহাম্মদ এ কথা কয়টি ব্যবহার করেছিলেন সে সময়ের আরবের সমাজকে নিয়ে। অত্যন্ত ক্ষোভ ও দুঃখের বিষয় যে এরা দেড় হাজার বছর পরে এই অত্যাধুনিক যুগে এসেও তাদের পুরনো সেই বদনাম ঘুচাতে পারেনি। বরং তাদের বাল্যবিবাহের কুপ্রথাকে ধর্মভিত্তিক সংস্কৃতির ভেতর দিয়ে পাচার করেছে আমাদের মত গরীব দেশগুলোতে। ৮বছরের এক মেয়ে শিশুকে বিয়ের পর বিয়ের রাতেই তার সাথে যৌণক্রিয়া করতে গিয়ে সে রক্তক্ষরণে মৃত্যুমুখে পতিত হয়। বরের বয়স ৪০এর উপরে। ঘটনাটি ঘটেছিল ইয়েমেনে। আমার এক সুহৃদ একসময়ের নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান ‘ম্যাসেঞ্জারে’-এ ‘সময়এখন.কম’এর এ খবরটি পাঠিয়েছেন। তিনি হয়তো তার উৎসুক্য দমন করতে না পেরে পাঠিয়েছেন।
খবরটি দেখে ও পড়ে আমার কাছে মনে হয়েছে এর চেয়ে জঘণ্য অপরাধ, মানবতার এমন লাঞ্চনা আর কিছু হতে পারে না। মানব বিবেকের এমন ভয়াল ভয়ঙ্কর পাশবিক রূপ আমি কোথায়ও শুনিনি। দেখিনিও! বাল্যবিবাহ আমাদের দেশসহ বহু দেশে ঘটে প্রায়ই। সে আজ থেকে নয় প্রাচীনকাল থেকেই। কোন ধর্ম বা কেউই কোথায়ও যৌনবিকৃতির এ ব্যাধিটি সমূলে উৎপাটন করতে পারেননি। অবশ্য হুবহু এমন অপরাধ আমাদের দেশে ঘটতে শুনিনি।
কিন্তু এমন একটি জঘন্য খবরের আদ্যোপান্ত একেবারে না জেনে পত্রস্ত করা উচিৎ নয়। আর এসব কারণেই সংবাদটির খুঁজ নিতে আশ্রয় নিলাম ‘ইন্টারনেটে’এর। পেয়েগেলাম ‘দি গার্ডিয়ান’ পত্রিকায়। গার্ডিয়ান এ ঘটনা নিয়ে যা লিখেছে তা ওই একই মানব চরিত্রের কুশ্রীভয়াল হায়েনা চরিত্রের রূপকাহিনী। ৮বছর বয়সের ওই শিশুকন্যা রক্তক্ষরণে মারা যায় বাসর রাতেই।
আমার ওই সুহৃদ একটি বিষয় খেয়াল করেননি যে এ ঘটনাটি আজকের নয় বরং ২০১৩ সালের একটি ঘটনা। ইন্টারনেট ঘাটতে গিয়ে পেলাম ২০১৬ সালেও অনুরূপ আরেকটি ঘটনা এই ইয়েমেনেই ঘটেছিল। দু’হাজার তেরো সালের ওই ঘটনাটি ‘সময়এখন.কম’ কেনো ২০১৮ সালের ৩০শে জুন প্রকাশ করেছে তা তারাই ভাল জানেন।
৫ বছরের পুরনো হলেও ঘটনাটি সুখকর নয় বরং মারাত্মক অমানবিক। তাই দু’লাইন লিখতে প্রয়াসী হলাম। সংবাদপত্র ও কিছু গণমাধ্যম মানবতা বিরুধী এ পৈশাচিক ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে লিখেছে ইয়েমেনে গরীবি মানুষকে অসহায় করে তুলেছে। ১০.৫ মিলিয়ন ইয়েমেনীর ঘরে খাবার নেই। ১৩মিলিয়ন ইয়েমেনীর খাবারের বিশুদ্ধ পানি নেই। গরীব পরিবার মেয়ে শিশুর লালন-পালনের দায়ভার ও খরচ থেকে বেঁচে যাওয়ার জন্য এবং কিছু উপরি পাওয়ার আশায় অতি অল্প বয়সে মেয়েদের বিয়ে দিয়ে দেয়।
তাই বলে বিয়ের নামে নিজের মেয়েকে বিক্রি? এতো আদিমতাও নয়, আরো অন্যকিছু- প্রাক-আদীম বা ওই শব্দ আমার জানা নেই! গরীবি মানুষকে যে অসহায় করে তা মিথ্যাও নয় ভুলও নয়। কিন্তু যারা এসব অবোধ শিশুদের বিয়ে করে তাদেরকে কি বলা যায় বা কি করা যায়! এদের চেয়ে পশুতো অনেক ভাল। কোন পশুকে কোনভাবেই প্রলুব্ধ করা যাবেনা শিশু বয়সী অন্য কোন পশুর সাথে যৌনকাজে।
ইয়েমেনের যে এলাকায় ঘটনাটি ২০১৩সালে ঘটেছিল সেই এলাকাটি সৌদি আরবের সীমান্তে একটি বেদুইন এলাকা। এলাকার নাম হেরদ। ওই এলাকার সম্প্রদায় প্রধান ঘটনাটিকে লুকানোর চেষ্টা করেছিলো। এলাকার পুলিশও ঘটনাটি অস্বীকার করেছিল। কিন্তু ইয়েমেনের ‘হাউস অব ফোকলুর’এর প্রধান একজন মানবাধিকার কর্মী ‘আরওয়া উতমান’ সংবাদপত্রকে জানান যে মেয়েটির নাম ‘রওয়ান’। ৮বছর বয়সের মেয়ে বিয়ে হয় ৪০ বছরের উপর বয়সের একজনের সাথে। অতিরিক্ত যৌনকর্মের ফলে রক্তক্ষরণে সে বিয়ের রাতেই মারা যায়। যে এলাকায় মেয়েটির বিয়ে হয়েছিল এবং মারা যায়, সে এলাকার দু’জন লোক রয়টারের সাথে যোগাযোগ করে ঘটনাটি জানিয়ে দেন। তার পরই খোঁজ শুরু হয় এবং এক পর্যায়ে ঘটনার সত্যতা জানাজানি হয়ে গিয়েছিল।
গার্ডিয়ানের খবর থেকে এখানে একটি ছোট্ট ইংগিত পাওয়া যায় যে ঘটনাটি আসলে সত্য নয়। ২০১৩ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ‘ডেইলি মেইল’ পুরো ঘটনার ছবি দিয়ে লিখেছিল ঘটনাটি সত্য নয়। ভূঁয়া বরং রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রনোদিত।
তবে কোন সময়ই একেবারেই যে কিছু ঘটেনি বিষয়টি তেমন নয়। যাহা রটে কিছু সত্য বটে। সেই ধারণায় বলি, কিছু একটি হয়তো ঘটেছিল নিশ্চয়। কিন্তু ইয়েমেনকে নিয়ে অনেক কথা বলতে হয়। এই ইয়েমেন একসময় আরবীয়ানদের শিক্ষাকেন্দ্র ছিল। সিলেটের সর্বজনপূজ্য হযরত শাহ জালাল(রঃ) তুরস্কের লোক ছিলেন কিন্তু মামার কাছে ইয়েমেনে শিক্ষিত হয়েছিলেন। সেই ইয়েমেনের মানুষ এখনও এতো বর্বর যুগে বাস করছে বিশ্বাস করতে মন চায় না। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলি যাদের প্রাচীন পরিচয় আরবীয়ান মুল্লুক বলে। এরা আরব জাতি। আর এই আরবদের ইতিহাস খুবই প্রাচীন কে-না জানে। দুনিয়ার মানুষকে এরা দিয়েছে অনেক। কিন্তু অধুনা আরবদের কীর্তি-কাহিনী শুধু দুঃখজনকই নয়, চরম লজ্জাকর। লণ্ডন শনিবার ৩০শে জুন ২০১৮