আব্দুল ওয়াদুদ।। মৌলভীবাজার: সোমবার, ১০ই পৌষ ১৪২৩।। জেলা পরিষদ নির্বাচনে আকাশচুম্বী কদরে ভোটারগন সিক্ত হলেন। নির্বাচনের আর দুদিন মাত্র বাকি। সময়ও যতই ঘনিয়ে আসছে প্রার্থীদের দৌড় ততই বেড়েই চলেছে। আর এ সুবাধে ভোটের মূল্যও হচ্ছে আকাশ চুম্বি। এবারের নির্বাচনে একটি ভোট যেন একটি সোনার হরিন। তাই জয় পরাজয়ে এখন চলছে ভোটের চূড়ান্ত হিসাব-নিকাশ। প্রচারণার শেষ ভাগে এসে ট্রাম্পকার্ড হিসেবে প্রার্থীরা টাকা দিচ্ছেন বলেও গোঞ্জন উঠেছে।
জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদে মৌলভীবাজারে আ’লীগের ৩ প্রার্থী (দুজন বিদ্রোহী) বিএনপির একজনসহ অন্যান্য আরো দুই প্রার্থী। আ’লীগের ৩ প্রার্থী থাকায় ব্যয়ভার প্রচুর বেড়েছে বলে জানা গেছে। এখন প্রতিনিয়তই প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণার ফাঁকে চলছে এমন কানাকানি ফিসফাস। কয়েকজন ইউপি সদস্যের কাছে বিষয়টির সত্যতা যাচাই করতে জানতে চাইলে তারা প্রথমে এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। পরে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ভাই এটা সত্য এই নির্বাচনে কয়েকজন চেয়ারম্যান প্রার্থী যেমন টাকা দিয়ে ভোট কিনছেন তেমনি সদস্য প্রার্থীরাও একই কায়দায় ভোট ক্রয়ের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। আমরা যেমন কয়েক শ’ বা কয়েক হাজার ভোটারকে নানাভাবে ম্যানেজ করে (টাকা দিয়ে ভোট কিনে) এ জায়গায় এসেছি আর এই নির্বাচনে ভোটার হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছি এর পেছনে কি ছিল(?) রসিকতার ছলে তারা প্রশ্ন রেখে আবার রসিকতায় উত্তরে জানালেন টাকা। আমরা যখন টাকা দিয়ে ওখানে এসেছি তাহলে উনারাও টাকা ছাড়া কিভাবে আমাদের ভোট পাবে। তারা বলেন, ভাই ওরা নির্বাচিত হলে আমাদের মতো তাদের এত দ্বায়বদ্ধতা থাকবে না। কারণ আমাদের মতো তৃণমূল পর্যায়ে তাদের কাজ থাকবে না। আর নির্বাচিত হলে উনাদের কাছে আমরাও ভিড়তে পারবো না এমনটিই রীতি। তাই আমাদের মতো অনেকেই এই সুযোগ হাত ছাড়া করছেন না। তারা স্বীকার করে বলেন, যদিও কাজটি ঠিক হচ্ছে না কিন্তু এমনটিই নির্বাচনী রেওয়াজ। এটাই হলো নির্বাচনী ব্যয়ের অন্যতম খাত। যতই হলফনামায় ব্যয়ের খাত লিখেন এটাই কিন্তু অলিখিত ব্যয়ের খাত। তারা জানালেন নির্বাচনী আগের রাত পর্যন্ত চলবে এমন ভোট কেনা-বেচার লেনদেন। যে যত বেশি টাকা দিবে শেষমেশ তাকেই বিবেকের তাড়নায় ভোট দেবেন তারা। এক্ষেত্রে উপজেলা, পৌরসভা ও ইউপি সদস্যদের চাইতে চেয়ারম্যানদের টাকার ডিমান্ড বেশি বলে তারা জানালেন। তবে সব প্রার্থী যে টাকা দিচেছন এমনটি যেমন সঠিক নয় তেমনি সব ভোটাররাও যে টাকা খাচ্ছেন সেটিও ঠিক নয়। দু’জন চেয়ারম্যান প্রার্থীর ঘনিষ্টজন ও নির্বাচনী ব্যয় দেখভালের দ্বায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের সাথে আলাপে প্রথমে বিষয়টি অস্বীকার করে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেও পরে জানাগেল ভোটের জন্য ভোটারদেরকে চা নাস্তার টাকা দিচেছন।
জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায় মৌলভীবাজার জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৬ জন, সাধারণ সদস্য পদে ৮৬ ও সংরক্ষিত (মহিলা) সদস্য পদে ২২ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। নির্বাচনে ২১ পদে মোট ১১৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ৬৭টি ইউনিয়ন, ৫টি পৌরসভায় ও ৭টি উপজেলায় মোট (নির্বাচকমণ্ডলীর সদস্য) ভোটার ৯৫৬ জন। জেলার ৭টি উপজেলার ১৫টি ওয়ার্ডে ১৫টি কেন্দ্রে ২৮শে ডিসেম্বর ভোটাররা তাদের মূল্যবান ভোট প্রদান করবেন।