কমলগঞ্জ সদর ইউনিয়ন তথ্য কেন্দ্রে দুর্নীতি ও অনিয়মে অতিষ্ঠ সাধারণ মানুষকমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার), ২০ আগষ্ট ২০২১ মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার সদর ইউনিয়ন পরিষদের তথ্য সেবা কেন্দ্রে সেবা নিতে আসা সাধারন মানুষকে জিম্মি করে নির্ধারিত ফি চেয়ে অতিরিক্ত ফি নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে উদ্যোক্তা সামসু ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে। ভোটারের কাছে জন্ম সনদের জন্য ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত দাবি করে পরে সমঝোতার মাধ্যমে ১৭০০ টাকা দিয়ে জন্ম সনদ দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে এমন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। ফলে এই তথ্য কেন্দ্র থেকে প্রাপ্ত সুযোগ-সুবিধা থেকে বি ত হয়েছে এলাকার জনগণ। ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে জানা যায়, উপজেলার ৫নং কমলগঞ্জ সদর ইউনিয়ন পরিষদ তথ্য ও সেবা কেন্দ্রের যাত্রা শুরুর পর থেকে উদ্যোক্তা একই ইউনিয়নের চৈতন্যগঞ্জ গ্রামের মৃত মো. মনাফ মিয়া ছেলে সামসু মিয়া ও তার স্ত্রী হ্যাপি বেগম প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন। বর্তমান সরকার ডিজিটাল দেশ গড়ার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে প্রতিটি ইউনিয়নের জনসাধারনের মাঝে ডিজিটাল তথ্য ও সেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে যে প্রকল্প হাতে নিয়েছেন তা যেন রাঘব বোয়াল গিলে খাচ্ছে। জন্ম নিবন্ধন, মৃত্যু সনদ, ভিজিডি র্কাডের আবেদনের জন্য অতিরিক্ত টাকা আদায়, অসদাচারণসহ সেবা কেন্দ্রে সঠিকভাবে সময় না দেওয়ায় অভিযোগ রয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারী না থাকার কারনে ইউনিয়ন তথ্য ও সেবা কেন্দ্র থেকে সেবার বিনিময়ে মিলছে অতিরিক্ত ফিসহ হয়রানি। জরুরি প্রয়োজনের তাগিদে বাধ্য হয়ে এসব অনিয়ম সহ্য করছেন এলাকার সাধারন মানুষ। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উদ্যোক্তা সামসু মিয়া ও তার স্ত্রী হ্যাপি বেগম গ্রামের সাধারন মানুষের কাছে সেবার নামে সাধারন ব্যবসায়ীদের চেয়ে অতিরিক্ত টাকা আদায় করছেন। যদি কোন সেবা গ্রহীতা অতিরিক্ত টাকা দিতে আপত্তি জানায় তাহলে তার সাথে অসৎ আচরণসহ ঝগড়াঝাটি, এমনকি মারধর করতেও দ্বিধাবোধ করেন না সামসু দম্পতি। গ্রাহকদের সাথে অন্যায় আচরণ যেন তার নিত্য দিনের সঙ্গী। জন্ম নিবন্ধন আবেদন ফরমে নেওয়া হচ্ছে ১২০ টাকা, জরুরি প্রয়োজনে কেউ জন্ম সনদ নিতে চাইলে তাদেরকে দিতে হয় ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। জন্ম সনদের ভুল সংশোধন করতে আসা সাধারণ জনগণের কাছ থেকে ২ থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এমনকি সরকারী নিয়মনীতি উপেক্ষা করে ইউনিয়ন পরিষদের ওয়াই ফাই দিয়ে চলছে ইন্টারনেট বাণিজ্য। স্কুল কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে মাসিক ১ থেকে ২ শত টাকা নিয়ে ওয়াই ফাই সংযোগ দেওয়া হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে কয়েকজন জনপ্রতিনিধি প্রতিবাদ করে সামসু দম্পতি কাছে হেনস্তার স্বীকার হয়েছেন। কমলগঞ্জ সদর ইউনিয়নের সংরক্ষিত মহিলা সদস্য আমেনা বেগম জানান, ‘আমরা জনপ্রতিনিধি জনগণের কাছ থেকে বেশি টাকা না নেওয়ার সুপারিশ করলে ইউনিয়ন তথ্য কেন্দ্রের উদ্যোক্তা হ্যাপি বেগম ও তার স্বামী সামসু মিয়ার কাছে কোন মূল্য পাই না। তিনি আরো বলেন, আমরা ইউনিয়নের সদস্য হওয়া সত্বেও যদি তাদের কাছে কোন মূল্য পাই না, তাহলে সাধারণ জনগণ কি মূল্যায়ন পাবে। তিনি আরোও জানান, উনার এক ভোটারের কাছে জন্ম সনদের জন্য ৩ হাজার টাকা দাবি করে, অনেক অনুরোধ করে ১৭০০ টাকা দিয়ে জন্ম সনদ নিয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরে এমন অনিয়ম ও দূর্নীতি করে আসছেন সামসু দম্পতি।’ তবে অভিযোগের বিষয়ে সামসু মিয়া ও তার স্ত্রী হ্যাপি বেগম জানান, আমাদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তোলা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক। কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশেকুল হক বলেন, ‘ইউনিয়ন পরিষদের ওয়াইফাই ভাড়া দেওয়া ও জন্ম নিবন্ধনসহ অন্যান্য কার্যক্রমে সরকার নির্ধারিত ফির বাহিরে অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার কোনো বিধান নেই। আমাকে কেউ কখনো অভিযোগ করেনি। যেহেতু বিষয়টি এখন জেনেছি তাই তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নিব।’ |