লন্ডন: মিঠামইন উপজেলার গোপদিঘী ইউনিয়নের হীরাজুরি বাঁধ ভেঙে তলিয়ে গেছে আরো প্রায় আড়াই হাজার একর জমির ধান। বুধবার মধ্যরাতে হঠাত্ জোয়ারের পানির প্লাবনে বাঁধটি ভেঙে যায়। স্থানীয়রা প্রাণপণ চেষ্টা করেও বাঁধটি রক্ষা করতে পারেননি।গোপদিঘী গ্রামের শাহ আলম জানান, তার ১২ একর জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। মিঠামইন সদরের জলিল মিয়ার ৪ একর ও হাতকুবলা গ্রামের সহিদ মিয়ার ৪ একর জমির ধান চোখের সামনেই পানিতে তলিয়ে যায়। ভাঙন ঠেকাতে ব্যর্থ হওয়ায় এই দুর্যোগ শুধু চেয়ে দেখা ছাড়া গ্রামবাসীদের করার কিছুই ছিল না।
সিলেট অফিস ও সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, হাওর রক্ষা বাঁধ ভেঙ্গে সুনামগঞ্জ জেলার ১১ উপজেলার ৯০ ভাগ বোরো ধান তলিয়ে যাওয়ার ঘটনায় বিক্ষোভ চলছেই। গতকাল জেলা শহর সুনামগঞ্জ ছিল মিছিলে-মিছিলে উত্তাল। কয়েক হাজার কৃষক জনতা তিন দফা দাবিতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সুনামগঞ্জ অফিস ঘেরাও কর্মসূচি পালন করে।
‘হাওর বাঁচাও, সুনামগঞ্জ বাঁচাও’ আন্দোলন এর ডাকে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এই কর্মসূচি পালিত হয়। বেলা একটায় শহরের ট্রাফিক পয়েন্ট থেকে মিছিল নিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড অফিসের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন হাজার হাজার বিক্ষুব্ধ জনতা। মিছিলটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের জেলা কার্যালয়ের অদূরে কাজির পয়েন্ট এলাকায় পৌঁছার পর পুলিশ বাধা দেয়।
পুলিশি বাধার সময় বিক্ষোভকারীদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। পরে সেখানেই আন্দোলনের পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করেন ‘হাওর বাঁচাও, সুনামগঞ্জ বাঁচাও’—আন্দোলনের যুগ্ম আহ্বায়ক মুক্তিযোদ্ধা আবু সুফিয়ান। তিনি বলেন, বাঁধ নির্মাণে সীমাহীন দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত প্রকৌশলী, ঠিকাদার ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতিদের বিচার না হাওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। সুনামগঞ্জকে দুর্গত এলাকা ঘোষণা করতে হবে। এই দাবিতে তিনি শনিবার কৃষক-জনতার বিক্ষোভ কর্মসূচি আহ্বান করেন। তিনি বলেন, পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী বরাবরে লাখো কৃষকের স্বাক্ষর সংবলিত স্মারকলিপি প্রদান করা হবে। এদিকে সুনামগঞ্জে ওএমএস এর চাল বিক্রি শুরু হয়েছে। তবে তা পর্যাপ্ত নয় বলে অনেকে অভিযোগ করেছেন।
নেত্রকোনা প্রতিনিধি জানান, ফসল হারানোর কষ্ট সহ্য করতে না পেরে এবং দুশ্চিন্তা-দুর্ভাবনায় খালিয়াজুরী উপজেলার কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর মাদ্রাসা পাড়ার সুরুজ আলী ছেলে জামির আলীর অসুস্থ হয়ে পড়লে সোমবার তাকে হাসাপাতালে ভর্তি করা হয়। বুধবার ভোরে হূদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে তিনি মারা যান।
এদিকে একই ইউনিয়নের কল্যাণপুর গ্রামের হাজী চান মিয়ার ছেলে আরব আলী (৭০) স্থানীয় মহাজনের কাছ থেকে চড়া সুদে ঋণ এনে প্রায় দেড় লাখ টাকা খরচ করে ৮ একর জমিতে বোরো ধান আবাদ করেছিলেন। অকাল বন্যায় তার সমস্ত ফসল পানিতে তলিয়ে যায়। বুধবার সকালে বুকে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব করলে তাকে সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। -ইত্তেফাক থেকে