মুক্তকথা সংবাদকক্ষ।। প্রাচীনতো বটেই। প্রাচীন বলেইতো ঐতিহ্য বহন করে। আর ঐতিহ্যকে মানুষ সমাদরে ধরে রাখে যুগের পর যুগ ও শতাব্দির পর শতাব্দি। কারণ ঐতিহ্য মানুষের গর্ব। এই ঐতিহ্যের সাথে মানুষের সংস্কৃতি অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত। কোন মানব সমাজ কত আগে কোন কাজ করেছে, কি কি করেছে, কি নমুনায় করেছে; প্রতিটি মানুষের কাছে এসব তার অতীত ঐতিহ্য। বহু ঐতিহ্য মানুষ হারিয়ে ফেলে আবার বহু ঐতিহ্য ধরে রাখে নিজেদের চাহিদার কারণে।
“পালকি” গ্রাম বাংলার এক সময়ের আভিজাত্যের প্রতীক। আজ হারিয়ে গেছে কালের গহ্বরে। ৬০ এর দশকের শেষের দিকে পালকির কিছুটা চল ছিল এখন যা আর চোখে পড়ে না। অতীতে পালকিতে সাধারণতঃ আমাদের দেশের ধনবান শ্রেণীর মানুষ যাতায়াত করতো। নবাবী আমলে নবাব-বাদশাহদের পালকি থাকতো হাতির উপর বসানো। যাদের হাতি পোষার সামর্থ ছিল না বা ছোট ছোট জমিনদার ছিলেন তাদের পালকি টানতো নিরীহ গরীব মানুষ। নবাব জমিদার ছাড়াও ব্যবসা বাণিজ্যের মাধ্যমে যারা দু’টাকা কামাই করে জমাতেন, খুবই সম্মানীত বোধ করতেন পাল্কিতে চড়ে। রাখতেন বেহারাসহ পাল্কি।
ধীরে ধীরে সময় পাল্টাতে থাকে। পাল্কি চলে যায় দেশের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন এলাকার বাহন হয়ে। এক সময় আসে, পাল্কিতে করে বিয়ের অনুষ্ঠান হতে শুরু করে। উঠতি বিত্তবানরা পালকিতে বর-কনেকে দেখতে সম্ভ্রমবোধ করে। এরপর, পালকি হয়ে উঠে বয়স্ক লোকের যাতায়াতের মাধ্যম। পালকির এমনও সময় গেছে গ্রামের পথে ঘুরে বেড়ানো ছেলে-মেয়েরা পাল্কি দেখার জন্য পাল্কির পিছু পিছু ছুটতো।
পাল্কির প্রচলন অনেক পুরোনো। পাল্কিতে করে কনে বাড়ীতে আসলে, কনেকে ঘরে তুলতে সেকি আয়োজন। আশ-পাশের সকল বাড়ীর ছেলেবুড়োরা পর্যন্ত জড়ো হয়ে যেতো পাল্কি থেকে বৌ নামানোর দৃশ্য দেখতে। সমসুদ্দোহা তার ফেইচবুকে লিখেছেন-‘সে এক বিচিত্র আনন্দ, পূলকিত অনুভূতি, আজ আর কোন কিছুতেই তা খুজে পাই না। আজ পার্লারে গিয়ে, মেকাপে সেজে, নকল চেহারা নিয়ে দামী গাড়ীতে করে নতুন বৌ আসে ঠিকই কিন্তু পালকির সেই সরলা সহজ নব বধুর খাটি সৌন্দর্য্য কিংবা আমাদের সেই বধু দেখার আনন্দ কোনটাই আজ আর নেই। আভিজাত্যের প্রতীক পালকির সাথে এ সব হারিয়ে গেছে। পালকি এখন শুধুই স্মৃতি।’ সময়ের কঠোর কঠিন অগ্রযাত্রা যাতায়াত ব্যবসা থেকে পাল্কিকে হঠিয়ে দিয়েছে। পাল্কি এখন যাদুঘরের সম্পদ!