প্রবাসী অধ্যুষিত মৌলভীবাজার আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে ট্রাভেলস ও দালাল কর্তৃক প্রদত্ত সাংকেতিক চিহ্ন ছাড়া নেয়া হচ্ছে না কোনো আবেদন। আর ওই সাংকেতিক চিহ্নেই চলছে রমরমা ঘোষ বাণিজ্য। এই ঘুষ বাণিজ্য হচ্ছে অফিসের কিছু অসাধু স্টাফ, বাহিরের দালাল এবং বিভিন্ন ট্রাভেলন্স এর যোগসাজুসে।
জানা যায়, জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত পাসপোর্ট প্রত্যাশিরা চরম হয়রানির শিকার হন। ঘুষ ছাড়া কলম নড়েনি অফিসের কর্মরত কিছু অসাধু কর্মকর্তা কর্মচারীদের। আবেদন জমা দেয়া থেকে শুরু করে পাসপোর্ট হাতে পাওয়া পর্যন্ত ধাপে ধাপে দালাল দ্বারা হয়রানির স্বীকার হচ্ছেন এ জেলার সাধারণ নাগরিক। বঞ্চিত হচ্ছেন নাগরিক অধিকার থেকে।
বড়লেখা উপজেলার জাকির আহমদ বলেন, আবেদন জমা দেওয়ার পর আজ ছয় মাস ধরে পাসপের্ট অফিসে আসা যাওয়া করছি কিন্তু আমার পাসপোর্ট পাচ্ছিনা আমার আপরাধ হল আমি কোন মাধ্যম ছাড়া আবেদন করেছিলাম।
কমলগঞ্জ উপজেলার ফয়সল আহমেদ বলেন, আমি কোন মাধ্যম ছাড়া নিজেই আবেদন জমা দিতে গিয়েছিলাম কিন্তু আমার আবেদন জমা নেননি কর্তৃপক্ষ। বেলাল নামের একজন অফিস স্টাপ আমাকে পরামর্শ দেন কোন মাধ্যম ধরে আসার জন্য। পরে আমি বাধ্য হয়ে উপ-পরিচালকের কাছে যাই সেখানেও একি অজুহাত দেখিয়ে আমাকে বিদায় করেদেন।
এছাড়া বিভিন্ন উপজেলা থেকে আগত একাধিক আবেদনকারীদের সাথে কথা হলে তারা জানান, নির্ধারিত ফি ৫৭৫০(সাধারণ) এবং ৮০৫০ (জরুরি) টাকা ব্যাংকে জমা দিয়ে পাসপোর্ট অফিসে আবেদন জমা দিতে গেলে আবেদন গ্রহণকারী অফিস স্টাফ প্রথমেই আবেদনের প্রথম পাতা এবং ভিতরের ৭৭নং কলাম দেখেন এবং উনার মনমতো হলে(সাংকেতিক চিহ্ন থাকলে) জমা নেন। অন্যতায় কাউকে পরামর্শ দেন দালাল অথবা ট্রাভেলসের মাধ্যমে জমা দিতে আবার কাউকে পাঠাচ্ছেন অফিসের দ্বিতীয় স্যারের কাছে। তিনিও ৭৭নং কলাম সহ বিভিন্ন পাতা দেখে কোথাও সাংকেতিক চিহ্ন না থাকলে বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে আবেদনকারীদের বিদায় করেন। পরে বাধ্য হয়ে অসহায় গ্রামের সহজ সরল সাধারণ মানুষ কোনো উপায়ান্তর না পেয়ে দালাল অথবা ট্রাভেলসের মাধ্যমে সাধারণ পাসপোর্টের জন্য সাড়ে ৯হাজার থেকে ১০ হাজার আর জরুরি পাসপোর্টের জন্য ১২ হাজার টাকা পর্যন্ত নিচ্ছেন।
প্রতিবেদক সরেজমিনে গিয়ে দেখেন, পাসপোর্টের আবেদন জমা দেয়ার জন্য ফরম হাতে নিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন পাসপোর্ট প্রত্যাশিরা। এসময় দেখা যায় হাতে গোনা দু-একটি বাদে প্রায় সবক’টি আবেদন ফরমের কোথাওনা কোথাও বিভিন্ন সাংকেতিক চিহ্ন রয়েছে। এদিকে আবেদন গ্রহণকারী কর্মকর্তা প্রথমে ফরমে দালাল অথবা ট্রাভেলস এর দেয়া সংকেত অথবা কোড নাম্বার ১৯৪৯০০৪৮ সহ বিভিন্ন ডিজিটের কোড আথবা ৭৭ নং কলামে ই-মেইল এর স্থানে সংকেত দেখতে পান তাহলে জমা নেন। অন্যদিকে যে সকল আবেদনকারী দালাল অথবা ট্রাভেলস ছাড়া নিজে নিজে আবেদন জমা দিতে চান বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে তাদের তৈরি করা দালাল অথবা ট্রাভেলস এর কাছে যাওয়ার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ট্রাভেলসের মালিক জানান, আবেদনকারীরা পাসপোর্ট অফিসে আবেদন জমা দিতে ব্যর্থ হয়ে আমাদের দ্বারস্ত হন। আমরা আবার নতুন ভাবে আবেদন ফরম পূরন করি এবং তাদের কাছ থেকে ৯ হাজার হাজার টাকা পর্যন্ত নেই। এর মধ্য থেকে ৫ হাজার ৮ শত টাকা ব্যাংকে, ১৫০০ টাকা পাসপোর্ট অফিসে এবং পুলিশি তদন্তের জন্য ১০০০-১৫০০ টাকা দিতে হয়। আমরা ফরম পূরন করা সহ বিভিন্ন কাজ করে পারিশ্রমিক বাবত কমিবেশি ৫০০ থেকে ৬০০টাকা পাই। আবেদন ফরমে বিভিন্ন ট্রাভেলস এর ভিন্ন ধরনের সাংকেতিক চিহ্ন ও কোড দেয়া থাকে। এই সাংকেতিক চিহ্ন ও কোড দিয়ে কি বুঝায় এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ সমস্থ সাংকেতিক চিহ্ন ও কোড মানে পাসপোর্ট অফিসে নিশ্চিত ১৫০০টাকা জমা হয়েছে।
এবিষয়ে মৌলভীবাজার আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের উপ-পরিচালক মানিক চন্দ্র দেবনাথ এর সাথে কথা হলে তিনি এ বিষয়ে কোন সদোত্তর দেননি।