বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একজন সমর্থক, একটি সিনেমার বিরুদ্ধে মামলা করার হুমকি দিয়েছেন। ইতিমধ্যেই উকীল নোটিশ পাঠিয়ে দিয়েছেন বলে বিবিসি লিখেছে। মামলাটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্পর্কিত একটি দলিলি চলচ্চিত্র নিয়ে। ঢাকার ওই সিনেমা তাদের ছবির নাম লিখতে ভুল করেন। গতকাল ১৮ই নভেম্বর বিবিসি এ খবর প্রকাশ করে।
ওই ছবির নাম- Hasina: A Daughter’s Tale কিন্তু তারা ভুল করে লিখেছিলেন- “Hasina: A Daughter’s Tail”।
প্রধানমন্ত্রীর ওই সমর্থক জনাব সাদ চৌধুরী বলেন, ‘Tale’ যার অর্থ গল্প কিন্তু ‘Tail’ এই শব্দটির অর্থ পশুর শরীরের একটি অংশ। যা অবশ্যই অগ্রহনযোগ্য। এটি দুষ্টুমিপূর্ণ। তার দাবী বিধ্বংসী এই সিনেমাকে অবশ্যই শব্দটি সংশোধন করতে হবে এবং প্রকাশ্যে তাদের ক্ষমা চাইতে হবে। অন্যতায় ৯০মিলিয়ন ডলার (৭০মিলিয়ন পাউণ্ড) ক্ষতিপূরণ মামলার মুখোমুখি হতে হবে।
বিবিসি লিখেছে ওই সাদ চৌধুরী, ‘বাংলাদেশ আওয়ামী বৃটিশ ল’ছাত্র ইউনিয়ন’এর একজন প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক, তবে তিনি দাপ্তরিকভাবে দলের পক্ষ থেকে এ কাজ করছেন না।
তার আইনজ্ঞ, নওরোজ চৌধুরী বলেন, তার মক্কেলের উদ্দেশ্য একটিই এবং তা হলো যতশীঘ্র সম্ভব ভুলটি সংশোধন করে নেয়া।
“যমুনা ফিউচার পার্ক” শপিং মলের ঠিকানায় সিনেমার কাছে আইনী পত্র পাঠানো হয়েছে। ওই পত্রে সিনেমা-কে আবার যুগান্তকারী কিংবদন্তীর বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বিষয়টি গণমাধ্যমে খুব প্রচার পেয়েছে। তবে মামলার বিষয়ে মতামত বিভিন্নমুখী। দলিলি এ ছবিটির প্রাথমিক প্রদর্শনী দেখে বাংলাদেশের অর্থ মন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মোহিত মন্তব্য করেছিলেন-“বিস্ময়বিহ্বল” ও “নিরন্তর”। তিনি বলেছিলেন এ থেকে তিনি নতুন অনেক কিছুই শিখেছেন।
এদিকে “রেডটাইমস.কম.বিডি” লিখেছে, সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেছেন- এই প্রামাণ্যচিত্র জীবন, সংগ্রাম ও সাহসের গল্প বলছে। প্রামাণ্যচিত্রটি দেখে রাজনীতি ও সংস্কৃতি অঙ্গনের অনেকের অভিমত, তরুণ প্রজন্মকে সাহস যোগাবে ও অনুপ্রাণিত করবে এই প্রামাণ্যচিত্র।
তবে প্রেক্ষাগৃহে এর প্রদর্শনের সমালোচনা করে আওয়ামী লীগের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপির নেতা রিজভী বলছেন- প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনী আচরণবিধি মালার ১৪ (২) ধারা ‘ভঙ্গ করে’ গণভবনে দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। তার ওপর নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র ‘হাসিনা: এ ডটার’স টেল’ ডকুমেন্টারি ফিল্মটি রাজধানীর স্টার সিনেপ্লেক্স, যমুনা ফিউচার পার্কের ব্লকবাস্টার, মতিঝিলের মধুমিতা সিনেমা হল ও চট্টগ্রামের সিলভার স্ক্রিনে দেখানো হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনে একজন প্রার্থী। শেখ হাসিনা একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, সেই কারণে ইতিহাসের নানা ঘটনা, রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, ক্ষমতার পালাবদল, ব্যক্তি ও রাজনৈতিক জীবনের নানা অভিজ্ঞতা এবং দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে তার দৃষ্টিভঙ্গি এককেন্দ্রিকভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে, যা আচরণবিধির চরম লংঘন। অবিলম্বে শেখ হাসিনার ওপর নির্মিত ডকুমেন্টারি ফিল্মটি সিনেমা হলগুলো থেকে প্রত্যাহার করার তিনি দাবী জানান।
নির্বাচনী আচরণবিধির ১২ ধারা তুলে ধরে রুহুল কবির রিজভী বলেন, এখানে বলা আছে, ভোটগ্রহণের তিন সাপ্তাহ পূর্বে কোনো প্রকার প্রচার শুরু করা যাবে না। একইসঙ্গে বিধিমালার ১০(ঙ) ধারা অনুযায়ী নির্বাচনী প্রচারণার জন্য প্রার্থীর ছবি বা প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণামূলক কোনো বক্তব্য দেওয়া যাবে না। তিনি প্রশ্ন তুলে বলেন- এই ডকুমেন্টারি ফিল্মটি কি প্রচারণামূলক নয়?