1. muktokotha@gmail.com : Harunur Rashid : Harunur Rashid
  2. isaque@hotmail.co.uk : Harun :
  3. harunurrashid@hotmail.com : Muktokotha :
প্রবাসে মুক্তিযুদ্ধের অজানা গল্প - মুক্তকথা
রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ০২:৩৯ অপরাহ্ন

প্রবাসে মুক্তিযুদ্ধের অজানা গল্প

মতিয়ার চৌধুরী॥
  • প্রকাশকাল : সোমবার, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৩
  • ৪৭০ পড়া হয়েছে

“রিকগনাইজড বাংলাদেশ ব্যাজ” বিক্রি করে

যুদ্ধফান্ডে ৭৫০ পাউন্ড জমাদেন তৈমুছা বেগম ও তার স্বামী

লন্ডনঃ কতিপয় চিহ্নিত দেশদ্রোহী ছাড়া ১৯৭১ সালে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে দেশে বিদেশে স্বাধীনতার প্রশ্নে বাঙ্গালীরা ছিলেন ঐক্যবদ্ধ। কিশোর-যুবক আবাল বৃদ্ধ বনিতা সকলেই যার যার অবস্থান থেকে কাজ করেছেন। দেশের অভ্যন্তরে ১১টি সেক্টর ও কাদেরিয়া বাহিনী ছাড়া গ্রেটব্রিটেনকে আরেকটি সেক্টর হিসেবে গন্যকরা হয়। আন্তর্জাতিক জনমত আদায়ে ব্রিটেনে বসবাসরত প্রবাসী বাঙ্গালীরা নিজে না-খেয়ে পুরো সপ্তাহের বেতনটা দিয়ে দিতেন যুদ্ধফান্ডে। ব্রিটেনের প্রতিটি এলাকায় প্রতি সপ্তাহে প্রবাসী বাঙ্গালীরা সমবেত হতেন। লন্ডনের বড় সমাবেশ গুলো হতো সেন্ট্রেল লন্ডনের হাইড পার্ক কর্ণারে। তখনকার সময় ব্রিটেনে বসবাসরত নারীপুরুষ বাঙ্গালীদের সকলকেই যেতে হতো হাইড পার্ক কর্ণারে। দেশ স্বাধীনের পর অনেকে অবদানের স্বীকৃতি পেলেও যারা যুদ্ধফান্ডের জন্য চাঁদা সংগ্রহ করেছেন-নিয়মিত মিটিং মিছিলে অংশ নিয়েছেন গলা ফাটিয়ে শ্লোগান দিয়েছেন- ‘‘রিকগনাইজড বাংলাদেশ‘‘ “নো পেনি নো গান এহিয়া ভূট্ট টিক্কা খান‘‘। জয় বাংলা। স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় ও লন্ডনের রাস্থায় পাকিস্তানীদের হাতে নির্জাতিত হতে হয়েছে বাঙ্গালীদের। তাদের অনেকেই রয়েগেছেন আড়ালে। তাদেরই একজন সেই সময়ের কিশোর আজকের বৃদ্ধ পূর্বলন্ডনের বাসিন্দা বিশ্বনাথের আলতাবুর রহমান।

 

তখনকার কিশোর আলতাবুর রহমান

 

আলতাবুর রহমান বলেন তখন তার বয়স সাড়েআট বা নয় হবে। তিনিও নিয়মিত মা-বাবার সাথে যোগ দিয়েছেন হাইড পার্ক কর্ণারের পদযাত্রায়। তিনি দুঃখ করে বলেন স্বাধীনতা দিবসে অনেকেই হাইকমিশন আয়োজিত অনুষ্টানে আমন্ত্রন পায়। ৮২ বছর বয়সী আমার মা তৈমুছা বেগম কোনদিনই পাননি আমন্ত্রন- আমিও নিয়মিত বাবা-মায়ের সাথে গেছি মিছিলে আমাদের কেউ স্মরণ করেনা।

 

সে সময়ের তৈমুছা বেগম।

 

আলতাবুর রহমান ১৯৭১ সালের বিলেতে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে স্মৃতিচারন করে বলেন- তখন ২১নং ব্রিকলেনে তাদের নিজস্ব একটি ব্যবসা ছিল, নাম ছিলো, জালালাবাদ স্টোর। তাঁর পিতা মরহুম ইসমাইল আলী বৃটেনে আসেন ১৯৬২সালে। তিনি এ ব্যবসা পরিচালনা করতেন। আলতাবুর রহমানের মা তৈমুছা বেগম (৮২) ব্যবসার পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে অনেক কাজ করেছেন। ব্রিটেনে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক মিসেস ফেরদৌসি রহমানের সাথে তিনি সপ্তাহে দুইদিন হাইড পার্কে সভা ও মিছিলে যোগ দিতেন। সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার রউআইল গ্রামের অধিবাসী ব্রিটেনে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক প্রবাসী নেতা জনাব ময়না মিয়া তাদের দোকানে বিক্রির জন্য ‘রিকগনাইজড বাংলাদেশ ‘ ব্যাজ দিয়ে যান। এ ব্যাজ তারা ৫ শিলিং বা ১০ শিলিং এ বিক্রি করতেন। এ ব্যাজ বিক্রি করে তারা ৭৫০পাউন্ড সংগ্রহ করেন। এসব অর্থ মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক প্রবাসী নেতা জগন্নাথপুরের প্রয়াত আলহাজ্ব তৈয়বুর রহমানের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের ফান্ডে জমাদেন।

 

সে সময়ের যুবক ইসমাইল আলী।

 

আলতাবুর রহমান মায়ের সাথে বৃটেনে আসেন ১৯৬৯ সালে। তিনি ক্যানন বার্নেট ও রবার্ট মন্টিফিউরি সেকেন্ডারী স্কুলে পড়াশুনা করেছেন। ১৯৭১ সালে তিনি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে আন্দোলন চলাকালে একদিন মন্টিফিউরি স্কুলে ‘রিকগনাইজড বাংলাদেশ ‘ ব্যাজ শার্টের উপরে লাগিয়ে স্কুলে যান। তখন স্কুলের হেড টিচার ছিলেন মিস ম্যাকডোনাল্ড। পাকিস্তানী দু’টি ছাত্র মনোহর খান ও জিয়া বাট, আলতাবুর রহমানকে বুকে কি ও কেন এ ব্যাজ লাগানো হয়েছে তা জানতে চায়। তিনি উত্তর দেওয়ার সাথে সাথেই পাকিস্তানীরা তার নাকে মুখে ঘুষি মারতে থাকে। তার নাক থেকে রক্ত ঝরার পর তিনি মাটিতে পড়ে যান। তখন তার চিৎকারে তাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেন – টুনু মিয়া (দশঘর, বিশ্বনাথ), কয়ছর আহমদ (শ্রীরামসী, জগন্নাথপুর)। তারাও একই স্কুলে পড়তেন। আলতাবুর রহমান দুঃখ করে বলেন তিনি স্কুলে কোন বিচার পাননি। কারন হিসাবে হেড টিচার বলেন, স্কুলে কেনো তিনি রাজনৈতিক ব্যাজ লাগিয়ে এসেছেন? বিচারের পরিবর্তে বরং তাকে আরো তিরস্কার করা হয়। তিনি আরো বলেন – তখন বৃটেনে বাঙ্গালী কমিউনিটির জনপ্রিয় নেতা ছিলেন জগন্নাথপুরের আছলের আইয়ুব আলী মাষ্টার। তিনি ব্রিকলেনের স্পেলম্যান হাউসে থাকতেন। তিনি বাঙালিদের অনেক সাহায্য করেছেন। তিনি তাদের পরিবারের বৃটিশ পাসপোর্ট করে দিয়েছেন। ১৯৭১ সালের মুক্তি সংগ্রামে ইষ্টলন্ডনে আরো যারা তৎপর ছিলেন তারা হলেন হাজী তৈয়বুর রহমান, মসলন্দর আলী খান, গৌছ খান, মিসেস ফেরদৌস রহমান, ময়না মিয়া, হবিগঞ্জের জব্বার মাষ্টার প্রমুখ।

বৃটেনের বাংলাদেশীরা মুক্তিযুদ্ধের ফান্ডে হাজার হাজার পাউন্ড দান করেছেন।
জনাব আলতাবুর রহমান তাঁর মা মিসেস তৈমুছা বেগমের অবদানের স্বীকৃতি চান। পুরুষদের পাশাপাশি শত শত প্রবাসী বাঙালী নারীরা মুক্তিযুদ্ধে অবদান রেখেছেন। তাদের সবাইকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারের কাছে আহ্বান জানান। এখানে উল্লেখ্য -আলতাবুর রহমানের বাংলাদেশের ঠিকানা হচ্ছে বিশ্বনাথ উপজেলার রামপাশা ইউনিয়নের ইলামের গাঁও বর্তমানে তারা বিশ্বনাথ পৌর এলাকার জগন্নাথপুর রোডে বাড়ি করেছেন। আলতাবুর রহমানের পিতা হাজী ইসমাইল আলী মারা যান ২০০২ সালে ও মা মিসেস তৈমুছা বেগম এখনো জীবিত আছেন তবে বয়সের ভারে নতজানু। তার মা এই বৃদ্ধ বয়সেও মুক্তিযুদ্ধে প্রবাসী বাঙালিদের সংগ্রাম ও ত্যাগ স্মৃতিচারন করে বলেন তখন বৃদ্ধ ছিলামনা বয়স কম ছিল প্রতি রোববার ও মঙ্গলবার আমরা নিয়মিত বাংলাদেশের পক্ষে মিছিল করতাম। আমি ১৯৬৯ সালে আলতাবুরকে সাথে নিয়ে স্বামীর সাথে মিলিতি হতে স্পাউজ ভিসায় ব্রিটেনে আসি। আমি ও আমার অন্যান্য সন্তানেরা হলো গিয়াসুর রহমান, আসসাবুর রহমান, মেমুতুর রহমান, আনোয়ারা দেওয়ান, ইয়াসমিন বেগম ও রেসমিন বেগম সকলের জন্ম লন্ডনে।

তৈমুছা বেগম আরো বলেন ১৯৭০ সালে তার স্বামী হাজী ইসমাইল আলী ৯৫ হোয়াইট চ্যাপল রোডে আনোয়ারা রেষ্টুরেন্ট চালু করেন। তাদের ব্রিকলেনের ব্যবসার পাশাপাশি এই আনোয়ারা রেষ্টুরেন্টেও নিয়মিত মিংটি হত। এই আনোয়ারা রেষ্টুরেন্টে বসেই প্রবাসী নেতারা ফান্ড সংগ্রহ ও মিছিল মিটিং এর পরিকল্পনা করতেন।

লন্ডন ২৬ আগষ্ট ২০২৩
এ জাতীয় সংবাদ

তারকা বিনোদন ২ গীতাঞ্জলী মিশ্র

বাংলা দেশের পাখী

বাংগালী জীবন ও মূল ধারার সংস্কৃতি

আসছে কিছু দেখতে থাকুন

© All rights reserved © 2021 muktokotha
Customized BY KINE IT