লন্ডন: বিস্ময়াভিভূতভাবে অত্যাধুনিক নমুনার জুতো, চার প্রস্থ কাপড়, সেলাইয়ের সরঞ্জাম, একটি আস্ত ঘোড়া ও ভেড়ার মাথা। পাওয়া গেছে মঙ্গোলিয়ার একটি সমাধিতে। টুকরো টুকরো এই জিনিষপত্রগুলি শবদেহের সাথে কবরে রাখা ছিল পরকালের ব্যবহারের জন্য।এমনই একটি, অনেকটা মমিকরা মানবদেহ আবিষ্কার হয়েছে মঙ্গোলিয়ায়। গবেষকগন মনে করছেন এ শবদেহ ১১শত বছরের পুরানো। সবকিছু সাফসুত্র করে এখন প্রকাশ করা হয়েছে যা দেখে মঙ্গোলিয়ান প্রত্নতত্ত্ববিদ ও জাতিবিদ্যা বিশারদগন দস্তুরমত স্তম্ভিত।
২৮০৩ মিটার উচ্চতায় থাকা মঙ্গোলিয়ার ওই কবর থেকে প্রত্নতত্ত্ববিদগন ৫১টি জিনিষপত্র পেয়েছেন যার মধ্যে রয়েছে সাজের কাজ করা একটি হাতব্যাগ, চারপ্রস্থ কাপড়, পানিদান, ঘোড়ার পিঠে বসার গদি, সেলাই সরঞ্জাম এবং ভেড়ার মাথা। স্থানীয় একজন ফ্যাশন বিশারদ বলেন, ‘প্রথম দেখাতে মনে হবে অনেকটা অদ্ভুত ফাঁসের মত পেছানো ফিতে কিন্তু নয়রাভিরাম তার কৃৎকৌশল। কোন আপত্তি ছাড়াই শীতের সময় এখনও আমি পড়তে পারবো। অত্যন্ত উচ্চমানের সেলাই, উজ্জ্বল লাল ও কালো ফিতের মত রংয়ের কাজ করা এবং তার দৈর্ঘ্য – এই মূহুর্তে আমি তা কিনতেও রাজী আছি।’ শুধু কি সুন্দর সেলাইকরা এই বুটজুতো, ওই মহিলার কবরে জিনিষপত্রের সাথে আরো পাওয়া গেছে উচ্চমানের প্রাচীন ‘ক্লাচ বেগ’ যার এই অত্যাধুনিক যুগেও বিশাল চাহিদা রয়েছে।
প্রত্নতত্ত্ববিদগন ওই মহিলার সাজবাক্স থেকে পেয়েছেন চিরুনি ও আয়নার অংশ এবং একখানা চাকু। মহিলার পরকালের ব্যবহারের জন্য বিভিন্ন জিনিসের সাথে তার ঘোড়ার ধাতুপেছানো গদিখানাও পাওয়া গেছে যা দেখতে এতই মজবুত যে আজও ব্যবহার করা যাবে।
মঙ্গলিয়ার সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য কেন্দ্রের পরিচালক ‘গলবাদরাখ এঙ্খবাত’ বলেন, এই পশমিযুক্ত বুট জুতো হাটু পর্যন্ত লম্বা, জুতোর তলা চামড়ার এবং পায়ের আঙ্গুলের মাথার দিক উজ্জ্বল লাল রংয়ের ডোরা নমুনায় সেলাই করা। কবরে এগুলো আবিষ্কারের পর ঝাড়মোচ করে প্রথম যখন জনসমক্ষে আনা হল, বোটজুতো জোড়া দেখতে একেবারে অবিকল তিন ডোরার আধুনিক ‘এদিদাস’ জুতোর মত দেখাচ্ছিল। হাজারাধিককালের পুরানো জুতোর এ নমুনা জাতিবিদ্যাবিদদের জন্য এক নতুন গবেষণার বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে।
বিজ্ঞানীগন আরো আবিষ্কার করেছেন যে ওই মহিলা তার মৃত্যুর আগে মাথায় বেশ বড় রকমের জখমে ভুগেছিলেন। তবে তার মৃত্যু কারণ মাথার ওই জখম কি-না তা এখনও বলা যাবেনা। এ ছাড়াও তিনি আক্রান্ত হয়েছিলেন কিংবা পড়েগিয়েছিলেন এ বিষয়গুলোও পরিষ্কার নয়। এসব বিষয়ে আরো গবেষণা প্রয়োজন।
প্রাথমিক পরীক্ষা-নিরীক্ষায় মমির মুখের হাড্ডিতে মুষ্ঠাঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে যা থেকে বলা যায় সম্ভবতঃ ওই আঘাতেই তার মৃত্যু হয়েছে। অনুমান করা হচ্ছে তার বয়স ৩০ থেকে ৪০ এর মধ্যে ছিল।
পরিচালক ‘গলবাদরাখ এঙ্খবাত’ বলেন, হাজার বছরের পুরানো ওই কবরে যা যা পাওয়া গেছে তা পরীক্ষা করে অনুমান করা যায় যে ওই মহিলা সাধারণ সামাজিক স্তরের একজন মানুষ ছিলেন। অবশ্য কিছু কিছু সামগ্রী যা দিয়ে তাকে সমাহিত করা হয় সে সব জিনিষ দেখলে আবার মনে হয় তিনি সমাজের উচ্চ স্তরের একজন মানুষ ছিলেন। সেলাইয়ের বহু সরঞ্জাম তার সাথে পাওয়া গেছে। এগুলো থেকে অনুমান করে বলা যায় তিনি সম্ভবতঃ একজন বস্ত্রবয়ন কারিগর ছিলেন।
পরিচালক ‘গলবাদরাখ এঙ্খবাত’ বলেন, ‘কবরে তার সাথে রাখা যে ব্যাগটি পাওয়া গেছে সেটি পশমের তৈরী। আর ওই ব্যাগের ভেতরে পাওয়া গেছে সেলাই সরঞ্জাম। যেহেতু সূচিশিল্প বা সেলাইয়ের কারুকাজ, ব্যাগ ও জুতো দু’টোতেই পাওয়া গেছে তা থেকে বলা যায় যে ওই সূচিকাজগুলো স্থানীয়দের করা কাজ। মনে করা হচ্ছে মমিতে পরিণত মহিলা তুর্কি জাতি উদ্ভুত এবং সমাধিটি এ পর্যন্ত পাওয়া সমাধির মধ্যে সবচেয়ে রক্ষিত সমাধি যা থেকে কোনভাবেই কোন সামগ্রি হারায়নি। পরিপূর্ণ সামগ্রীসহ সমাধিটি পাওয়া গেছে।
মমি থেকে ১৮ নমুনা নিয়ে যা পাওয়া গেছে তা থেকে অভিজ্ঞগন মনে করছেন সমাধি বা মমিটি ৬ষ্ঠ শতকের নয় যা প্রথমে বলা হয়েছিল বরং তা ১০ম শতকের। তবে, ডিএনএ ও রেডিওকার্বন পরীক্ষা এখনও শেষ হয়নি, ফলাফলের অপেক্ষায় আছে। মঙ্গোলিয়ায় এবং সম্ভবতঃ পুরো সেন্ট্রেল এশিয়ায় ইহাই প্রথম প্রাপ্ত পূর্ণ নমুনার একটি তুর্কি সমাধি বলেছেন খব্দ যাদুঘরের গবেষক বি. সুখবাতার। তিনি আরো বলেছেন, এটি খুবই দুষ্প্রাপ্য নমুনা। এ আবিষ্কার তুর্কিদের বিশ্বাস ও শাস্ত্রীয় আচারানুষ্ঠান বিষয়ে আমাদের ধারণা দেয়। আমরা পরিষ্কার দেখি, ঘোড়াটি সুচিন্তিতভাবে বলি দেয়া হয়েছিল। এটি খুবই দূর্লভ যে ৪ এবং ৮ বছর বয়সের ঘোড়া।
আবিষ্কারের এ খবরটি প্রথমে প্রকাশ করে ‘সাইবেরিয়ান টাইমস’ গত বছরের এপ্রিল মাসে। একজন ‘অলগা গার্টচিক’ এর উপর লিখেছিলেন ‘এন্সিয়েন্ট অরিজিন’-এ। -অনুবাদ: হারুনূর রশীদ