লন্ডন: ফ্রান্সে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে ফের রক্তাক্ত প্যারিস। চ্যাম্পস এলিসিসে জঙ্গি হামলায় এক পুলিশ অফিসারের মৃত্যু হয়। আহত আরও ২ পুলিশকর্মী। পালটা গুলিতে নিহত জঙ্গিও। হামলার দায় স্বীকার করেছে জঙ্গি সংগঠন আইএস। ফরাসি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের মুখপাত্র পিয়েরে অঁরি ব্রাঁদে জানান, বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় রাত ৯টা নাগাদ মধ্য প্যারিসের চ্যাম্পস এলিসি এলাকায় পুলিশ বাসের পাশে একটি গাড়ি এসে থামে। ওই গাড়ি থেকে নেমে এক জঙ্গি অটোম্যাটিক পিস্তল থেকে পুলিশের দিকে এলোপাথাড়ি গুলি চালাতে শুরু করে। দৌড়ে পালানোর সময় পুলিশের পালটা গুলিতে মৃত্যু হয় হামলাকারীর। পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, হামলায় ওই সন্দেহভাজন জঙ্গি একাই অংশ নিয়েছিল। ফরাসি টেলিভিশন চ্যানেল বিএফএমটিভি সূত্রে জানা গিয়েছে, নিরাপত্তা বাহিনী ওই সন্দেহভাজন হামলাকারীকে আগে থেকেই জানত। সে টেলিগ্রাম মেসেজিং অ্যাপে পুলিশকর্তাদের হত্যা করার হুমকি দিয়েছিল। তবে ওই সন্দেহভাজনের পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি। জানা যায়, সম্প্রতি জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস) টেলিগ্রাম মেসেজিং অ্যাপটি যোগাযোগের জন্য ব্যবহার করছে। আইএস ঘনিষ্ঠ সংবাদ সংস্থা আমাকের দাবি, বেলজিয়ান নাগরিক আবু ইউসুফ আল-বেলজিকি আইএস জঙ্গি। আমাক এজেন্সিতে একাধিক ভাষায় ওই ‘জঙ্গি হামলার’ দায় স্বীকার করা হয়। সংবাদ সংস্থা এএফপি সূত্রে খবর, হামলাকারীর বিরুদ্ধে ফরাসি পুলিশের জঙ্গিদমন শাখার কাছে তথ্য রয়েছে। পূর্ব প্যারিসে তার বাড়িতে তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ।
এদিকে হামলার পর চ্যাম্পস এলিসি ও তার আশপাশের এলাকা বন্ধ রাখা হয়েছে। পুরো এলাকা ঘিরে রেখেছে নিরাপত্তা বাহিনী। হামলার পরপরই ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদে এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি নিরাপত্তা বাহিনীর প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছেন এবং নিহত পুলিশ সদস্যকে জাতীয় সম্মান জানানোর কথা ঘোষণা করেছেন। হামলার পর ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে জানিয়েছেন, তিনি এই হামলাকে ‘জঙ্গি হামলা’ বলেই মনে করছেন। প্যারিসে পুলিশের উপর চালানো হামলায় সমবেদনা জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। হোয়াইট হাউজে আমেরিকা সফররত ইতালির প্রধানমন্ত্রী পাওলো জেনতিলোনির সঙ্গে এক যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনে ট্রাম্প এই হামলাকে ‘ভয়াবহ’ বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের পক্ষ থেকে আমরা ফ্রান্সের জনগণের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি।’ হামলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এ নিয়ে আপনি কী বা বলতে পারেন? এটা শেষ হওয়ার নয়। আমাদের আরও শক্তিশালী হতে হবে। আমাদের সবসময় সজাগ থাকতে হবে। আর এ কথা আমি বহুদিন ধরেই বলে আসছি।’
এদিকে, আগামী রবিবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ১১ জন প্রার্থীই নিরাপত্তা বাহিনীর সম্মানে তাদের প্রচার বন্ধ রেখেছেন। ফরাসি রাজনীতিতে জঙ্গিবাদ এখন একটি তীব্র আলোচিত ইস্যু। বৃহস্পতিবারের ঘটনাটি নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করতে পারে বলে মনে করছেন অনেকেই। ফরাসি সংবাদসংস্থা জানাচ্ছে, ২০১৫ সাল থেকে এখনও পর্যন্ত ফ্রান্সে জঙ্গিবাদের শিকার হয়ে নিহত হয়েছেন অন্তত ২৩৮ জন। রক্ষণশীল প্রার্থী ফ্রাঁসোয়া ফিলন বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রচার চালানোর কোনও মানে হয় না। প্রথমেই আমাদের পুলিশের প্রতি সম্মান জানাতে হবে।’ তাঁর দাবি, ‘ইসলামি কর্তৃত্ববাদের’ বিরুদ্ধে লড়াই করাটাই হবে তার সরকারের প্রধান কাজ। কট্টর বামপন্থী প্রার্থী জ্যঁ-লুক মেলেঁকন জানিয়েছেন, ‘আরও নিশ্চিত তথ্যের জন্য অপেক্ষা করতে হলেও নাগরিক হিসাবে আমাদের দায়িত্ব পালন করা উচিত। আমরা যেন ভীত না হয়ে পড়ি। নির্বাচন যেন বিঘ্নিত না হয়, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখা উচিত।’ এবারের নির্বাচনের জনমত সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, মধ্যপন্থী ইমানুয়েল ম্যাক্রন এবং উগ্র-ডানপন্থী মেরিন লে পেন খানিকটা এগিয়ে আছেন। উল্লেখ্য, ফ্রান্সের ক্ষমতা এর আগে পর্যন্ত মধ্য-বামপন্থী এবং মধ্য-ডানপন্থী প্রার্থীদের মধ্যে থাকলেও, এবার তাতে বদল আসতে চলেছে বলেই মনে করা হচ্ছে। -বর্তমান