মুক্তকথা প্রতিবেদন।। আমেরিকায় পুলিশের হাতে জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যু করোণা ভাইরাসের মতই সারা বিশ্বে বিশাল এক নাড়া দিয়েছে। যে কম্পন এখনও নিঃশেষ হয়ে যায়নি। জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যু এবং তাকে ঠাণ্ডামাথায় মেরে ফেলার ধরণ মানব বিবেককে নাড়া না দিয়ে পারেনা। মৃত্যুর আগ মূহুর্তে ফ্লয়েডকে বলতে শুনা যায় “আমি শ্বাস নিতে পারছি না…”! পুলিশ পুরোপুরি জঙ্গলের পশুর মত হাটু দিয়ে ফ্লয়েডের প্রান রগের উপর সেই যে চাপ দিয়ে ধরেছিল ফ্লয়েডের শ্বাস বন্ধ হয়ে না আসা পর্যন্ত সে চাপ অব্যাহত রেখেছিল। বিশ্বপুঁজিবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের আসল রূপ এটি! ঠাণ্ডা মাথায় খুন আর কা’কে বলে।
এমন পাশবিক নমুনায় ফ্লয়েডকে হত্যার পর বিশ্বের মানুষ অবশ্য প্রতিক্রিয়াশীল সাম্রাজ্যবাদী মার্কিনীদের দু’গালে কষিয়ে চড় দিয়েছে। দুনিয়ার এমন কোন শহর বাকী থাকেনি এর বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলতে। সাম্রাজ্যবাদী খুনী রাজনীতিকদের প্রতিক্রিয়াশীলতার তখতে তাউসকে কাঁপিয়ে দিয়ে আওয়াজ তুলে বলেছে সাম্রাজ্যবাদী সুপারিশী ইতিহাস জ্বালিয়ে দিয়ে নতুন করে ইতিহাস লিখতে হবে। শুধু লিখতে হবে এমন দাবী নয়, ইতিমধ্যেই ইতিহাস রচনার কাজ শুরু হয়ে গেছে। বৃটেনের বৃষ্টলে, সে সময়কার টরি এমপি দাস ব্যবসায়ী এডওয়ার্ড কল্সটনের মূর্তি টেনে হিঁছড়ে সাগরে ফেলে দিয়েছে। ভার্জিনিয়ার বাল্টিমুরে সাগরে ফেলে দেয়া হয়েছে ক্রিস্টোফার কলম্বাসের মূর্তিও। শুধু কি তাই, বিশ্ব স্কাউটের নেতা লর্ড বেডেন পাওয়েল, চার্চিলসহ অন্ততঃ ৭০-৭২টি স্মারক ও স্মৃতি স্তম্ভের বিষয়ে কঠোর অবস্থান নিয়েছে বৃটেনের আন্দোলনকারীগন।
বেলজিয়ামের ১৮শতকের রাজা কিং লিওপল্ড-২য় এর মূর্তিও মরা হায়নার মত টেনে হিঁছড়ে প্রতিবাদী মানুষ ফেলে দিয়েছে। এই নরপিশাচ কঙ্গো দেশে লক্ষ লক্ষ মানুষ হত্যা করেছে। একইভাবে বিগত জুন মাসের মধ্যে শ্রমিকদল সমর্থিত ১৩০টি কাউন্সিল তালিকা তৈরী করেছে কোন কোন মূর্তি কিংবা স্মৃতিস্মারক তুলে ফেলে দিতে হবে। এ পর্যন্ত ৭২টি স্মৃতি সৌধের তালিকা করা হয়েছে এবং এগুলোকে হয় ভেঙ্গে দেয়া হবে অথবা তুলে নেয়া হবে। খুবই সংক্ষেপে বলতে গেলে ফ্লয়েডের মৃত্যু পুঁজিবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের মৃত্যু ঘন্টা বাজিয়ে দিয়েছে।
জর্জ ফ্লয়েডের হত্যা প্রসঙ্গে বৃটেনের শ্রমিক দলীয় নেতা স্যার কেয়ার স্টারমার গেল জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে এক ভিডিও বার্তায় বলেছেন- ফ্লয়েডের মৃত্যু স্পষ্টভাবে দেখিয়ে দিল জাতিভেদ ও জাতিগত ঘৃণা বা বর্ণবাদ কি মাত্রায় দুনিয়ার দেশে দেশে সাধারণ মানুষকে লাঞ্চিত করেই চলেছে। তিনি আরো বলেন, এ ব্যবস্থা আমাদের সমাজের পঁচনকে এগিয়ে নিয়ে চলেছে ভয়াবহ এক দিনের দিকে। অনেক হয়েছে আর না, এখন আমাদের সকলকে এমন ব্যবস্থা ও এ অমানবিকতার বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলতে হবে এবং আশু নিরসনের পথে হাটতে হবে।
হারুনূর রশীদ, লণ্ডন সোমবার ৬ জুলাই ২০২০