প্রনীত রঞ্জন দেবনাথ।। বহু ভাষার ক্ষৃদ্র নৃগোষ্ঠীর জন্য কমলগঞ্জে ভাষা চর্চা একাডেমি স্থাপনের আহবান জানিয়ে বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে মৌলভীবাজারের সীমান্তবর্তী কমলগঞ্জের ভাষা উৎসব-২০১৯ উদযাপিত হয়েছে। ভাষাতাত্ত্বিক আলোচনা ও ১০টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির পরিবেশনার মধ্য দিয়ে শনিবার বিকেলে সমাপ্ত হলো কমলগঞ্জের ভাষা উৎসব। কমলগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন এবং সাহিত্য ও সংস্কৃতি পরিষদ, কমলগঞ্জ এর আয়োজনে শনিবার সকাল ১১টায় কমলগঞ্জ উপজেলা সদরস্থ জেলা পরিষদ অডিটরিয়াম প্রাঙ্গণে বেলুন উড়িয়ে দিনব্যাপী ভাষা উৎসবের শুভ উদ্বোধন করেন সাবেক চিফ হুইপ, সরকারি অনুমিত হিসাব সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি, উপাধ্যক্ষ ড. মো: আব্দুস শহীদ এমপি।
পরে এক বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা উপজেলা সদরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে অডিটরিয়ামে এসে শেষ হয়। জাতীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের শুভ সুচনার পর কমলগঞ্জের ভাষা-বৈচিত্র্য এবং ভাষাসংগ্রামী মো: ইলিয়াস জীবন ও কর্ম গ্রন্থদ্বয়ের মোড়ক উম্মোচন করা হয়। সম্মাননা প্রদান করা হয় ভাষাসংগ্রামী জননেতা মো: ইলিয়াস এর সহধর্মিনীকে। মূলতঃ, ভাষাচর্চা, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ভাষার বিপন্নতারোধ, চর্চা ও বিকাশের লক্ষে উপজেলা প্রশাসন এবং সাহিত্য ও সংস্কৃতি পরিষদ যৌথভাবে এর আয়োজন করে। ভাষা উৎসবকে কেন্দ্র করে নানা ভাষার মানুষের বর্ণিল মেলবন্ধন ঘটেছিল। ভাষা উৎসব উপলক্ষে জেলা পরিষদ অডিটরিয়ামের সামনে বিভিন্ন ধরণের স্টল বসেছিল।
দুপুরে কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার আশেকুল হকের সভাপতিত্বে ও অধ্যাপক শাহাজান মানিকের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সরকারি অনুমিত হিসাব সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি, উপাধ্যক্ষ ড. মো: আব্দুস শহীদ এমপি। সম্মানিত অতিথি ছিলেন কমলগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগ সদস্য, মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক মো: রফিকুর রহমান, সাবেক উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহমুদুল হক, কমলগঞ্জ থানার ওসি মোঃ আরিফুর রহমান। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সাহিত্য ও সংস্কৃতি পরিষদ, কমলগঞ্জ এর আহবায়ক আহমদ সিরাজ। আলোচনায় অংশ নেন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের উপ-পরিচালক নাজমুন্নাহার বেগম, লেখক ও ভাষাবিজ্ঞানী ড. সেলু বাসিত, কবি ও গবেষক প্রফেসার নৃপেন্দ্র লাল দাশ, লেখক ও গবেষক রসময় মোহান্ত, শিক্ষাবিদ ও গবেষক ড. আবুল ফতেহ ফাত্তাহ, লেখক ও গবেষক ড. শোয়াইব জিবরান, লেখক ও গবেষক ড. রণজিত সিংহ, কবি ও কথা সাহিত্যিক আকমল হোসেন নিপু, লেখক ও গবেষক পাভেল পার্থ, অধ্যাপক সাইয়্যিদ মুজিবুর রহমান, কমলগঞ্জ সরকারি গণ মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ কামরুজ্জামান মিয়া, সুজা মেমোরিয়াল কলেজের অধ্যক্ষ ম. মুর্শেদুর রহমান, আব্দুল গফুর চৌধুরী মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ মো: হেলাল উদ্দিন, অধ্যাপক অবিনাশ আচার্য্য, কবি সনাতন হামোম প্রমুখ। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সাহিত্য ও সংস্কৃতি পরিষদের আহবায়ক আহমদ সিরাজ।
ভাষাতাত্ত্বিক আলোচনায় বক্তারা বলেন, কমলগঞ্জ উপজেলার মতো বাংলাদেশের আর কোন উপজেলায় এমনভাবে জনবৈচিত্র্যের বিপুল সম্ভার নেই। এই জনবৈচিত্র্যের সম্ভার ভাষা-মণিপুরী(তিনভাগি), খাসি, সাওতাল, মুন্ডা, গারো, তেলেগু, উরাং, ত্রিপুরী, ভুজপুরীসহ নানা ভাষার জনগোষ্ঠীর মানুষের বসবাস রয়েছে। বহুমাত্রিক ও বর্ণিল জনগোষ্ঠীর ঐতিহ্যসমৃদ্ধ সীমান্তবর্তী উপজেলা কমলগঞ্জ বাংলাদেশের অনেকগুলো বৈশিষ্ট্য স্পর্শ করে নান্দনিক চরিত্র বহন করছে। মূলত ভাষাচর্চা, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ভাষার বিপন্নতারোধ, চর্চা ও বিকাশের লক্ষ্যে এই ভাষা উৎসবের আয়োজন। রাজধানী ঢাকার পরেই উপজেলা হিসেবে কমলগঞ্জে বহু ভাষাভাষার ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে। এজন্য এই উপজেলায় সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় একটা ভাষা চর্চা একাডেমি বা ভাষা চর্চা কেন্দ্র স্থাপন করা জরুরী।
অতিথিদের আলোচনার ফাঁকে ফাঁনে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর পরিবেশনায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করা হয়।