কমলগঞ্জ থেকে লিখছেন প্রনীত রঞ্জন দেবনাথ।। “আদিবাসী জাতিসমুহের দেশান্তর : প্রতিরোধের সংগ্রাম” এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে বিশ্ব আদিবাসী দিবস উপলক্ষে শোভাযাত্রা ও পথসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ উপলক্ষে বৃহষ্পতিবার দুপুর ১টায় বাংলাদেশ মণিপুরী ছাত্র পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির আয়োজনে কমলগঞ্জ উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণ থেকে একটি মিছিল বের হয়। শোভাযাত্রাটি উপজেলা সদরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে স্থানীয় শহীদ মিনারে এসে সমাপ্ত হয়। পরে সেখানে মণিপুরী ছাত্রপরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক কিরণসিংহের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন মণিপুরী ছাত্র পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সভাপতি সুশান্ত সিংহ, ক্রীড়া সম্পাদক ছাত্রনেতা মানস কান্তি সিংহ, সদস্য অর্ণব সিংহ, প্রণব সিংহ, কমলগঞ্জ উপজেলা মণিপুরী ছাত্র পরিষদ সাধারণ সম্পাদক উজ্জল সিংহ প্রমুখ।
পথ সভায় বক্তারা বলেন, আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি ও নিজ নিজ মাতৃভাষায় প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষায় পাঠদান সময়ের দাবী মাত্র।
শ্রীমঙ্গল থেকে সৈয়দ ছায়েদ আহমদ।। ‘আদিবাসী জাতিসমুহের দেশান্তর: প্রতিরোধ সংগ্রাম’ এই শ্লোগান নিয়ে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে অনুষ্ঠিত হয়েছে বিশ্ব আদিবাসী দিবস। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে শ্রীমঙ্গল উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের আয়োজনে এক পথ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের শ্রীমঙ্গল শাখার সভাপতি পংকজ কন্দ এর সভাপতিত্বে পথসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন শ্রীমঙ্গল উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রনধীর কুমার দেব।
এসময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রেমসাগর হাজরা, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আশেকুল হক, আদিবাসী ফোরামের শ্রীমঙ্গল শাখার সহ
সভাপতি পার্থ হাজং, সাধারণ সম্পাদক হিরন্ময় সিংহ, শ্রীমঙ্গল ক্যাথলিক মিশনের পাল পুরহিত নিকলাস বাড়ই প্রমুখ। পথসভা শেষে উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পাঁচ শতাধিক আদিবাসীদের নিয়ে র্যালীটি গুহ রোড, কলেজ রোড ও স্টেশন রোড হয়ে শ্রীমঙ্গল পৌর শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে এসে শেষ হয়।
‘আদিবাসী জাতিসমূহের দেশান্তর : প্রতিরোধের সংগ্রাম’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে সচেতন নাগরিক কমিটি(সনাক), টিআইবি শ্রীমঙ্গল এবং বৃহত্তর সিলেট আদিবাসী ফোরাম এর যৌথ উদ্যোগে আর্ন্তজাতিক আদিবাসী দিবস ২০১৮ উপলক্ষে এক আলোচনা সভা ও ভিডিও প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকালে সনাক কার্যালয়ে আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন সনাক সভাপতি সৈয়দ নেসার আহমদ। টিআইবির এরিয়া ম্যানেজার পারভেজ কৈরী এর এর সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন বৃহত্তর সিলেট আদিবাসী ফোরাম এর মহাসচিব ফিলা পাথমী।
আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন ভাষা, ধর্মাচার, পারিবারিক জীবন ব্যবস্থা সবকিছুতেই ভিন্নতা নিয়ে বসবাসকারী আদিবাসীরা আজো এদেশে ভূমির মালিকানা পায়নি, একথা উল্লেখ করে আদিবাসী নেতারা আরো বলেন ভূমি উন্নয়নের নামে তাদের উচ্ছেদ করা হচ্ছে, তারা দিন দিন ভূমিহীন হয়ে পড়ছে একারনেই আদিবাসীরা আজো স্থায়ী আবাস ভূমি থেকে বঞ্চিত। আদিবাসী জনগোষ্টি প্রতিনিয়ত শোষন, বঞ্চনা বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। আদিবাসীরা এদেশে উপজাতি নয় এবং সাংবিধানিকভাবে সমান নাগরিক অধিকারের দাবিদার বলে নেতারা উল্লেখ করেন।
আলোচনা সভায় আদিবাসীদের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে কিছু প্রস্তাব আকারে দাবী জানান। দাবীসমূহ হচ্ছে- আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদান, আদিবাসীদের নিজস্ব সংস্কৃতি, ঐতিহ্যগত প্রথা, সামাজিক নেতৃত্ব, ভূমি মালিকানা ইত্যাদিকে রাষ্ট্রীয় ভাবে স্বীকৃতি দেয়া, সমতলের আদিবাসীদের বিশেষ করে বৃহত্তর সিলেটে একটি ভূমি কমিশন তৈরী করে ভূমির অধিকার প্রতিষ্ঠা করে সমস্যা সমাধান করা, চা জনগোষ্ঠীকে ক্ষুদ্র জাতি স্বত্তার তালিকা ভূক্তকরণ, আদিবাসীদের উপর নির্যাতন, উচ্ছেদ ও ধর্ষন বন্ধ করা ও আদিবাসীদের ভাষা রক্ষা করার দাবী জানান হয়।
বক্তব্য রাখেন বৃহত্তর সিলেট আদিবাসী ফোরাম এর সহ সভাপতি এবং সনাক সদস্য ডিজডিশন প্রধান সূছিয়াং, বৃহত্তর সিলেট আদিবাসী ফোরাম এর সহ সভাপতি আনন্দমোহন সিংহ, বাংলাদেশ চা-জনগোষ্ঠী আদিবাসী ফোরামের সভাপতি পরিমল সিং বাড়াইক, বৃহত্তর সিলেট আদিবাসী ফোরাম এর সাংগঠনিক সম্পাদক এবং সভাপতি বাংলাদেশ দলিত সম্প্রদায় সুশীল কুমার মৃধা স্বজন সদস্য ধীরেন্দ্র সিনহা ও সনাক সদস্য অয়ন চৌধুরী, ইয়েস সদস্য প্রমূখ। আলোচনা সভা শেষে আদিবাসীদের জীবনধারা নিয়ে নির্মিত একটি ডকুমেন্টারী প্রদর্শিত হয়।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মধ্যে খাঁসিয়া, মনিপুরি, ত্রিপরা, মুন্ডা ও চা জনগোষ্টি সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দ, সনাক, স্বজন, ইয়েস, ইয়েস ফ্রেন্ডস, সাংবাদিক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, এনজিও প্রতিনিধি ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিবৃন্দ।