1. muktokotha@gmail.com : Harunur Rashid : Harunur Rashid
  2. isaque@hotmail.co.uk : Harun :
  3. harunurrashid@hotmail.com : Muktokotha :
বৃটেনের স্বাস্থ্যসেবার একাল-সেকাল - মুক্তকথা
সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:৫২ অপরাহ্ন

বৃটেনের স্বাস্থ্যসেবার একাল-সেকাল

সংবাদদাতা
  • প্রকাশকাল : রবিবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৮
  • ২৯৪ পড়া হয়েছে

১৯৪৫-৫১ সনের শ্রমিক দলীয় এমপি ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী এনেউরিন বিভান। বলা হয় বৃটেনের স্বাস্থ্য সেবার প্রতিষ্ঠাতা।

হারুনূর রশীদ।।

অনুমান ৮ফুট X ১০ফুট মাপের একটি কক্ষ। প্রথম দেখায় বুঝলাম কক্ষটি একটি পড়ার ঘর। কিন্তু পরক্ষনেই দেখি ছেলেটি বেশ বড়সরো একখানা খাটে ঘুমিয়ে খুব আয়াসে একখানা বই পড়ছে। পাশেই তার ছোট্ট একখানা টেবিল সাজের কাঠ বিছানার উপর দিয়ে এসে একেবারে তার নজরের কাছাকাছি হয়ে বই-খাতা-কলম-মোবাইল রাখার জায়গা করে দিয়েছে। টেবিলে আরো কয়েকখানা বইও লক্ষ্য করলাম। কক্ষটির একদিকে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেয়ার জায়গা আর অপর প্রান্তে অনেকটা পাকঘরের মত আয়োজন। হঠাৎ দেখে মনে হবে কোন পাঁচতারা হোটেলের একজন মানুষের একটি কক্ষের মত। বিছানার সাথেই কি কিভাবে একটি টেলিভিশনও লাগানো আছে। ছেলেটি মাঝে মধ্যে খুব সাচ্ছন্দেই পড়ার ফাঁকে ফাঁকে টিভিও নাড়াচাড়া করছিল। পাশেই তার মা ও একজন নানী বসে গল্পগোজবে সময় কাটাচ্ছেন। অপরপাশে বাবা একটি চেয়ারে বসে শ্বাশুরী-বউয়ের গল্পে মাঝে মাঝে শরিক হয়ে হাস্যরসে কিছুটা হলেও উন্মাদনা জাগাচ্ছেন। 
আমার ভ্রাম্যমান জীবনে এরকম প্রয়োজনের সকল উপাদান দিয়ে সাজানো একটি কক্ষ এই প্রথম দেখলাম। শুধু সাজানো বললে বর্ণনায় ঘাটতি থেকে যাবে। বলা যায়, অনায়াসে একজন মানুষের জীবন কাটানোর যা যা প্রয়োজন তার সবকিছুই এ ঘরে আছে। এমন অল্প জায়গার মাঝে এমনরূপে সবকিছু সাজিয়ে রাখা যায় তা না দেখলে কথা দিয়ে অনেক মানুষকেই বিশ্বেস করানো যাবে না। এ কোনভাবেই মর্ত্যের ঘর হতে পারেনা। নিশ্চয়ই এখানে স্বর্গীয় কোন হেকমত কাজ করছে। কিন্তু বেহেশ্ত-স্বর্গতো ভারত-পাকিস্তান-বাংলাদেশের বিষয়। এখানে এই বিধর্মীদের দেশেতো বেহেশ্ত বা স্বর্গের কিছু পাওয়ার কথা নয়।
এতোক্ষন যা শুনালাম লন্ডনের একটি হাসপাতালের একজন কলেজ ছাত্রের একটি কামড়ার বর্ণনা ছিল এগুলো। সকলের জন্য নিখরচায় স্বাস্থ্য সেবার দেশ এটি। সে সেবার নমুনা আপন নয়নে পরখ না করলে কোন মানুষকেই বিশ্বাস করানো যাবে না। আমাদের বাংলাদেশেতো কোটি টাকা দিয়েও এ সেবা পাওয়া যাবে না। বরং আমাদের ডাক্তার ও সাধারণ মানুষেরা পর্যন্ত বলতে পারে যে হাসপাতালে আবার লিখা-পড়া হয় না-কি? সব পাগলের কথা আর কি! কারণ আমরা এ নমুনায় দেখে বুঝেই গড়ে উঠেছি। 
কাহিনী হলো আমার এক ভাইপো। সে একটি মহাবিদ্যালয়ে পড়ে। তার ডায়াবেটিক আছে। সে কারণে ডাক্তার তাকে নিরীক্ষায় রাখার জন্য হাসপাতালে পাঠিয়েছে। আমি তাকে দেখতে গিয়েছিলাম। তাকে দেখতে গিয়ে হাসপাতালের এ আয়োজন আমার চোখে ধাঁ ধাঁ লাগিয়ে দিয়েছে। মন গোপনে উচ্চারণ করেছে, বৃটেনও একটি দেশ আর আমরাও একটি দেশের মানুষ!
বৃটেনের “ন্যাশনেল হেল্থ সার্ভিস” যা বাংলায় দাঁড়ায় ‘জাতীয় স্বাস্থ্য সেবা’। চলমান রক্ষণশীল সরকারের এই আমলে খুবই নাকানি-চুবানি খেয়ে এখনও একমাত্র স্বকীয় সেবা বৈশিষ্টে ইস্পাত কঠিন হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। রক্ষণশীলরা খুবই চেষ্টা করেছে এবং এখনও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে কোনভাবে মানুষের এই সেবাখাতকে বাণিজ্যিকভাবে বাজারে নিয়ে আসতে। এতে করে ধনবানদের কোন ক্ষতি নেই। ক্ষতি যা হবে তা শুধু কর্মজীবী মানুষজনের হবে। “এনএইচএস” ভেঙ্গে দিয়ে স্বাস্থ্যসেবা খাতকে ব্যবসায়িকভাবে বাজারে নিয়ে আসতে পারলে ধনবানরা কর থেকে বাঁচবে। একই সাথে ধনবান ব্যবসায়ীরা মানুষের স্বাস্থ্যকে নিয়ে আমেরিকার মত চুটিয়ে ব্যবসা করবে। তেরেসা মে’র বর্তমান রক্ষণশীল সরকার তাদের সূচনাতেই খুব জোরেসুরে বৃটেনের মহান এই ‘জাতীয় স্বাস্থ্য সেবা’ খাতটিকে বিভিন্ন নমুনায় বেসরকারীকরণের অনেক প্রচেষ্টা চালায়। কিন্তু বিরুধী শ্রমিকদলের ঘোর বিরুধীতায় সরকারকেই শেষাবধি এই দুষ্ট চিন্তা থেকে সরে আসতে হয়েছে। এখনও যে একেবারেই সরে এসেছে তাও বলা যায় না। ঝোপ বুঝে কোপ মারার ইচ্ছায় মুখ লুকিয়ে আছে।

সার হেনরি আর্মস্টন উইললিংক। রক্ষণশীল দলীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী ১৯৪৩-৪৫সাল

সারা বিশ্বে হাতেগোনা যে কয়টি দেশে সকল নাগরীকের জন্য নিখরচায় চিকিৎসা সেবা রয়েছে বৃটেনের এই চিকিৎসা সেবা তার মধ্যে একটি। এখানে যে কোন নাগরীক একেবারেই নিখরচায় উন্নততর বহুব্যয়ের চিকিৎসা পেয়ে থাকেন। এই কয়েকবছর আগেও যেকোন বৈধ ভ্রমণকারী নিখরচায় এই স্বাস্থ্য সেবা পেয়ে আসছিলেন। এখনও অনেকেই পেয়ে থাকেন। তবে ইদানিং কিছু কিছু ভ্রমনকারীদের বিষয়ে এ সেবার কিছুটা শিথিল করা হয়েছে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯৪৮সালে এ সেবা খাতের জন্ম হয়েছিল। কেবলমাত্র চোখ ও দাঁতের চিকিৎসা বাদে বাকী সকল প্রকার স্বাস্থ্যসেবা বিনামূল্যে দেয়া হয়ে থাকে। ওয়েলশ এর একজন কয়লা শ্রমিকের সন্তান এনেউরিন বিভান এই স্বাস্থ্য সেবার প্রবক্তা ও প্রতিষ্ঠাতা বলে জানা যায়। এই বিভান যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্য মন্ত্রীও ছিলেন ১৯৪৫ থেকে ১৯৫১পর্যন্ত। সামাজিক ন্যায় বিচার ও গণতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি নিবেদিত প্রান সৈনিক ছিলেন। শ্রমিক দলের বাম ঘরানার তিনি ছিলেন প্রধান প্রবক্তা। বৃটেনকে কল্যাণধর্মী রাষ্ট্র গঠনেও তার ভূমিকা ছিল অনন্য। 
এরও আগে, সমাজতান্ত্রিক চিকিৎসা সমিতি’র(Socialist Medical Association) সভাপতি ডাঃ সমারভিল হাসটিংস ১৯৩৪সালের শ্রমিক দলীয় সম্মেলনে রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্যসেবার এক প্রস্তাবনা করেছিলেন। এরপর রক্ষণশীল দলের এমপি, নিজের সময়ের স্বাস্থ্য মন্ত্রী হেনরি উইললিংক ১৯৪৪সালে একটি ‘জাতীয় স্বাস্থ্য সেবা’র প্রস্তাবনা করেন। এবং তারপর আর বৃটেনের মানুষকে পেছনে তাকাতে হয়নি। এভাবেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বর্তমান সময়ের “এনএইচএস” বা জাতীয় স্বাস্থ্য সেবা ব্যবস্থা। 
মানুষের সাধারণ কর ও ন্যাশনেল ইন্সুরেন্স সঞ্চয় থেকে এ স্বাস্থ্য সেবার খরচ চালানো হয়। এখানে স্বাস্থ্য খাতের কর্মী সংখ্যা ২০১৪ সালে ছিল ২১,৬৫,০৪৩জন। এতো চমৎকারীত্বের পরও বৃটেনের স্বাস্থ্যসেবা খাতকে নিয়ে আলোচনা সমালোচনার শেষ নেই। বৃটেনের স্বাস্থ্যসেবা খাত উন্নত বিশ্বের ২১টি দেশের তুলনায় বিভিন্ন খাতে ঘাটতিতে আছে। পশ্চিমাবিশ্বের তুলনায় এখানে ডাক্তার, নার্স, রোগী বিছানা উল্লেখযোগ্য হারে কম রয়েছে। কেন্সার, ষ্ট্রোক কিংবা হার্ট ডিজিজ থেকে রোগীদের রক্ষায় বৃটেন হাসপাতালের হার খুবই কম। অধুনা ইউরোপীয়ান ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে আসার রাজনৈতিক প্রচেষ্টা স্বাস্থ্য সেবা খাতের জন্য বিশাল এক হুমকি।

এ জাতীয় সংবাদ

তারকা বিনোদন ২ গীতাঞ্জলী মিশ্র

বাংলা দেশের পাখী

বাংগালী জীবন ও মূল ধারার সংস্কৃতি

আসছে কিছু দেখতে থাকুন

© All rights reserved © 2021 muktokotha
Customized BY KINE IT