মৌলভীবাজার অফিস।। ভাষা সৈনিক রওশন আরা বাচ্চু’র চিরবিদায়ের কাজ সুসম্পন্ন হয়ে গেলো গত ৪ঠা ডিসেম্বর বুধবার। ৩ ডিসেম্বর, মঙ্গলবার ভোর রাতে রাজধানীর অ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৭ বছর। পরের দিন ৪ঠা ডিসেম্বর, বুধবার, মরহুমার জানাজার নামায সকাল ১১টায় কুলাউড়া উপজেলার নবীন চন্দ্র মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত হয়।
জানাজার নামাজের আগে উপস্থিত থেকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক বেগম নাজিয়া শিরিন, পুলিশ সুপার ফারুক আহমদ, ভাষা রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ডাঃ এম এ মুক্তাদির। এছাড়াও শ্রদ্ধা জানান জনপ্রতিনিধি, স্থানীয় রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। জানাজার নামাজ শেষে উপজেলার পার্শবর্তী উছলাপাড়া গ্রামের নিজ পৈতৃক বাড়িতে দাফন সম্পন্ন হয় তাঁর।
বিরহ বেদনা বিধুর মনে ভাষা সৈনিককে শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন। |
মৃত্যুকালে তিনি চার মেয়ে ও আত্মীয় স্বজনসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। ১৯৩২ সালের ১৭ই ডিসেম্বর মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া থানার উছলাপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন রওশন আরা। তাঁর বাবা এ এম আরেফ আলী, মা মনিরুন্নেসা খাতুন। পিরোজপুর গার্লস স্কুল থেকে ম্যাট্রিক, বরিশালের ব্রজমোহন কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করে ১৯৫৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শনে অনার্স ও পরে ইতিহাসে এমএ পাস করেন।
রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে তৎকালীন সময়ে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে ভাষা সৈনিক রওশন আরা বাচ্চু ভাষা আন্দোলনের মিছিলে যোগ দিয়েছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দিনগুলোতেই রওশন আরা গণতান্ত্রিক প্রোগ্রেসিভ ফ্রন্টে যোগ দিয়ে জড়িয়ে পড়েন ছাত্র রাজনীতিতে। সলিমুলাহ মুসলিম হল এবং উইম্যান স্টুডেন্টস রেসিডেন্সের সদস্যও নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি।
তিনি ঢাকার আনন্দময়ী স্কুল, লিটন অ্যাঞ্জেলস, আজিমপুর গার্লস স্কুল (খন্ডকালীন), নজরুল একাডেমি, কাকলি হাই স্কুল এবং পরে আলেমা একাডেমি সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতার সাথে যুক্ত ছিলেন। সবশেষে ২০০০ সালে বিএড কলেজে অধ্যাপনায় থাকাকালীন অবসর গ্রহণ করেন।
রওশন আরা বাচ্চুর মেয়ে তানভির ফারহানা ওয়াহিদ বলেন, রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির জন্য তার মা ভাষা আন্দোলন করেননি। দেশের ভাষার জন্য করেছেন। দেশের সর্বত্র বাংলা ভাষার প্রচলন হলে তার আত্মা শান্তি পাবে। মা বেশ ক’দিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন। অ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। মঙ্গলবার ভোর সাড়ে ৩টার দিকে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।