রাজনগর উপজেলার পাঁচগাঁও ইউনিয়নের মো. আকমল আলী তালুকদারসহ চারজনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিচারক প্যানেল আজ মঙ্গলবার ১৭ই জুলাই এ রায় ঘোষণা করেন।
রায়ে বলা হয়, আসামিদের বিষয়ে আনা দুটি অভিযোগই প্রমাণিত হয়েছে। এর মধ্যে একটিতে সব আসামিকেই মৃত্যুদণ্ড এবং অপরটিতে সকলকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। জানা যায় যে গত ২৭শে মার্চ যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে মামলাটি রায় ঘোষণার জন্য সময় নেয়া হয়। মোহাম্মদ আকমল আলী তালুকদার(৭৯) ছাড়া মামলার অন্য আসামিরা হলেন- মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার আব্দুর নুর তালুকদার ওরফে লাল মিয়া(৬২), মোহাম্মদ আনিছ মিয়া(৭৬) ও মোহাম্মদ আব্দুল মোছাব্বির মিয়া। আকমল আলী ছাড়া বাকিরা পলাতক রয়েছেন। আজ রায়ে, পলাতক তিন আসামিকে গ্রেফতার করে সাজা কার্যকর করতে সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
এটি মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধ তথা যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে আনা মামলায় ৩৩তম রায়। ২০১৬ সালের ৩০শে মে এই চারজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নেয় ট্রাইব্যুনাল। একই বছরের ২৩ মার্চ তাদের বিষয়ে তদন্তের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশ করে তদন্ত সংস্থা। এর আগে ২০১৫ সালের ২৬ নভেম্বর চার আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে ট্রাইব্যুনাল। ওই দিনই জেলার রাজনগর উপজেলার পাঁচগাঁও গ্রাম থেকে আকমল আলীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এ আসামি মৌলভীবাজার টাউন সিনিয়র কামিল মাদ্রাসার অবসরপ্রাপ্ত উপাধ্যক্ষ।
এছাড়াও একটি মামলায় গত ৩০শে মে পটুয়াখালীর ৫ আসামির বিষয়ে যুক্তিতর্ক শেষে যে কোনো দিন রায়(সিএভি) ঘোষণা করবে বলে আদেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল। এটি হবে যুদ্ধাপরাধের মামলায় ৩৪তম রায়। ২০১৭ সালের ৮ই মার্চ এ আসামিদের বিষয়ে অভিযোগ গঠন করা হয়। আসামীদের সর্বোচ্চ সাজার আর্জি পেশ করে শুনানি করে প্রসিকিউশন। ২০১৫ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর ট্রাইব্যুনাল এই ৫ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। পরোয়ানা জারির পর ৫ জনকেই গ্রেফতার করা হয়। বাসস এর সূত্রে ইত্তেফাক সংবাদটি টুইট করেছে।
মৌলভীবাজার থেকে আমাদের প্রতিনিধি লিখেছেন, আদালতের রায়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন মৌলভীবাজারের মুক্তিযোদ্ধাসহ সর্বস্তরের মানুষ। মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দেয়া চারজনের ফাঁসির এ রায়কে কেন্দ্র করে বিভিন্ন স্থানে মিষ্টি বিতরণ ও আনন্দ উল্লাসসহ স্থানীয় শহিদ পরিবারের পক্ষ থেকে পাঁচগাঁও গণকবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়েছে। জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ইউনিটের পক্ষ থেকে রায় উপলক্ষে সংসদ কার্যালয়ে সংগঠিত হয়ে মিষ্টিমুখ করা হয়।
সাবেক জেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিট কমান্ডার মোহাম্মদ জামালউদ্দিন এই চার মানবতাবিরোধী অপরাধীর ফাঁসির রায়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, অবশিষ্ট তিন জনকে গ্রেফতার করে যেন রায় কার্যকর করা হয়।