আজ মহান বিজয় দিবস, বাঙালি জাতির ঘটনাবহুল ইতিহাসে একটি শ্রেষ্ঠ দিন। এই দিন হানাদার বাহিনী বাঙালী জাতির কাছে পরাজিত হয়। দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে ত্রিশ লক্ষ শহীদ ও ২ লক্ষ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে পাওয়া এই স্বাধীনতা।
পৃথিবীর কোন জাতি বোধহয় স্বাধীনতার জন্য এত ত্যাগ এত জীবন দান করেছে বলে মনে হয় না। বাঙালি জাতির স্বাধীনতা যুদ্ধ পৃথিবীর ইতিহাসে এক বিরল ঘটনা। ১৯৪৭ সালে যে স্বাধীনতা হয়েছিল তা ছিল আপোসরফার স্বাধীনতা। ধর্মীয় মূল্যবোধের ভিত্তিতে দুটি রাষ্ট্র প্রতিষ্টিত হয়। এর একটি পাকিস্তান ও অপরটি হিন্দুস্তান। এই স্বাধীনতা প্রকৃতপক্ষে বাঙালির কোন স্বাধীনতা ছিল না। মূলতঃ ব্রিটিশ ঔপনিবেশ থেকে পাকিস্তান নামক নব্য ঔপনিবেশের করতলগত হয় বাঙালি। পাকিরা কখনই বাঙালিদের মেনে নিতে পারেনি। সংগত কারনে বাঙালির স্বাধীনতা অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠেছিল। এবং ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধ তথা মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়। প্রায় এককোটী মানুষ দেশত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিল ভয়াবহ এ যুদ্ধের কারণে।
দীর্ঘ ৯ মাস পর এই দিনে বাঙালি বিজয় লাভ করে। পাকিরা বাঙালির কাছে পরাজিত হয়। কিন্ত এই বিজয় বেশী দিন টিকে থাকতে পারেনি(?)। ১৯৭৫ সালে ৭১-র ঘাতকরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বপরিবারে হত্যা করে এবং রাষ্ট্র ক্ষমতা স্বাধীনতা বিরোধীরা দখল করে নিয়ে বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরুদ্ধে চলতে বাধ্য করে। এর পর থেকে চলতে থাকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি। ঘাতকরা ইচ্ছামত তাদের নিজেদের মত করে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিকৃতভাবে নতুন প্রজন্মের কাছে প্রচার করতে থাকে।
এই প্রক্রিয়ায় দীর্ঘ সময়ে কয়েক প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানতে পারেনি। প্রজন্মকে বিকৃত বানোয়াট ইতিহাস শিখানো হয়েছে। এখন অবশ্য মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানার অবারিত সুযোগ আছে। ইচ্ছে করলে বর্তমান প্রজন্ম সে সুযোগ নিতে পারবে। অবশ্য সর্বাগ্রে মুক্তিযুদ্ধের স্থানীয় ইতিহাসকে প্রাধান্য দিতে হবে। নতুন প্রজন্মের কাছে আমাদের প্রত্যাশা থাকবে, তারা সঠিক ইতিহাস জানবে এবং সর্বক্ষেত্রে সে আলোকে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহন করবে। একটি কথা মনে রাখতে হবে রক্ত দিয়ে কেনা আমাদের এই স্বাধীনতা। আর এই স্বাধীনতাকে সমুন্নত রাখতে হলে স্বাধীনতা বিরোধী সকল অপশক্তির বিরুদ্ধে গণতন্ত্র প্রিয় মানুষের প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। এটাই হঊক মহান বিজয় দিবসে সকলের দৃঢ় অঙ্গিকার।