ফরহাদ হোসেন।। মৌলভীবাজারের রাজনগরে দীর্ঘদিন ধরে রাগীব আলীর দখলে থাকা কাশিপুর চাবাগানের দখল বুঝে পেয়েছে বাংলাদেশ চা বোর্ড। রবিবার সকালে জেলা প্রশাসন থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সঞ্জিত কুমার চন্দ বিজিবি, রাব, পুলিশ ও ডিবি পুলিশের বিশাল একটি দল নিয়ে এসে বাগান থেকে দখলদারদের উচ্ছেদ করে টিবোর্ডকে দখল বুঝিয়ে দেন। এসময় চা বোর্ড আতাউর রহমান নামে একজনকে ম্যানেজার নিয়োগ দিয়ে শ্রমিকদের নতুন ম্যানেজারের অধীনে কাজ করতে বলা হয়। পরে সেখানে বাংলাদেশ চা বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মোঃ জাহাঙ্গীর আল মুস্তাহিদুর রহমান পিএসসি এসে চা শ্রমিকদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য দেন। এছাড়াও চা বোর্ডের সচিব মোহাম্মদ নূরুল্লাহ নূরী, রাজনগর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রাখী আহমদসহ প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এসময় উপস্থিত ছিলেন।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও চা বোর্ড সূত্রে জানা যায়, রাজনগর উপজেলার রাজনগর চা বাগানটি বহুল আলোচিত ব্যবসায়ী রাগীব আলীর মালিকানায় রয়েছে। ওই বাগানের নিকটে ১৩৯.৪৩ একর আয়তনের কাশিপুর চা বাগান দীর্ঘদিন থেকে অবৈধভাবে দখলে রেখেছিলেন রাগীব আলী। অবৈধ দখল উচ্ছেদের জন্য প্রশাসন তার বিরুদ্ধে উচ্ছেদ মামলা করে। এর প্রেক্ষিতে বাগানের দখলদাররা মৌলভীবাজার সহকারী জজ আদালতে ২০১১ সালে স্বত্ত মামলা (৯৩/২০১১) করেন। দীর্ঘদিন পর গত ৩০ এপ্রিল ওই মামলা খারিজ করে রায় দেন আদালত। মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক আদালতের রায়ের কপি পাওয়ার পর রবিবার সকালে বাগানের দখল উচ্ছেদ ও চাবোর্ডকে বাগান বুঝিয়ে দেয়ার জন্য ৬২০ নং স্মারকে সঞ্জিত কুমার চন্দকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রট নিয়োগ করেন। ওই পত্রের প্রেক্ষিতে রবিবার সকালে নির্বাহী ম্যজিস্ট্রেট সঞ্জিত কুমার চন্দ পুলিশ, ডিবি পুলিশ, রাব ও বিজিবির সমন্বয়ে একটি টিম নিয়ে এসে ১২টার মধ্যে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করে টিবোর্ডকে বাগানের দখল বুঝিয়ে দিতে বাগানে যান। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বাগানে গেলে বাগানের শ্রমিকদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়।
পরে শ্রমিকদের বুঝিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে নিয়ে আসেন। এছাড়াও শ্রমিকদের সকল সুযোগ সুবিধা প্রদান এবং বাগানের সার্বিক ক্যলানে সহযোগিতা চাওয়া হয়। এসময় উপস্থিত ছিলেন, চা বোর্ডের সচিব নূরুল্লাহ নূরী, রাজনগর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রাখী আহমদ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(সদর সার্কেল) রাশেদুল ইসলাম, রাজনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শ্যামল বণিকসহ চা বোর্ড, জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসেনর উর্ধ্বতন বিভিন্ন কর্মকর্তা।
এদিকে বিকালে বাংলাদেশ চা বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আল মুস্তাহিদুর রহমান পিএসসি কাশিপুর চা বাগানে এসে শ্রমিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, এখানে যারা বাগানের শ্রমিক আছে সবাই বাগানে কাজের সুযোগ পাবে। কাজ থেকে ছাটাই করা হবে না এমন আশ্বাস দিয়ে তিনি বলেন, বহিরাগত কারো উষ্কানিতে কান না দিয়ে কাজে মনোযোগি হতে হবে। নির্ধরিত মুজুরীর পাশাপাশি শ্রমিকদের সকল সুযোগ-সুবিধা দেয়া হবে। বাগানের শ্রমিকদের জন্য দাবীর কথা শুনে এক সপ্তাহের মধ্যে ডাক্তার নিয়োগের আশ্বাস দেন।
এব্যাপারে জানতে রাজনগর চা বাগানের ম্যানেজার রেজুওয়ানুল হকের মোবাইল ফোনে কল করলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সঞ্জিত কুমান চন্দ বলেন, রবিবার সকালে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে নির্দেশনা পাওয়ার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় কাশিপুর চা বাগানের দখল উচ্ছেদ করে বাংলাদেশ চা বোর্ডকে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। দখলকারীদের মালামালের তালিকা করে তাদেরকে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ চা বোর্ডর সচিব নূরুল্লাহ নূরী বলেন, সরকারের পক্ষে আদালতের রায় পাওয়ায় জেলা প্রশাসন কাশিপুর চা বাগানের অবৈধ দখল উচ্ছেদ করে চা বোর্ডকে বুঝিয়ে দিয়েছে। শ্রমকিদের জন্য প্রয়োজনীয় সবকিছু করবে চা বোর্ড।