চিকিৎসা কাজে পশু প্রকৃতিনিয়ে দানবীয় ব্যবসার এ সমাজে
এক মানবিক ডাক্তারের নাম শংকর গৌড়
একজন ডাক্তার শঙ্কর গৌড়াকে নিয়ে আধুনিক অন্তর্জাল যুগের গণমাধ্যমে বিপুল সাড়া তুলেছে। ফেইচবুক আর ইউটিউব-এ তো বাদ যাবার কথাই নয়। যে যার মত করে কাহিনী লিখেছেন। অবশ্য কাহিনীটি পড়ে যে কেউ চমৎকৃত না হয়ে পারবেন না। মানুষের মনোজগতে সত্য-সুন্দর বিরাজমান থাকলে মানুষ কিই-না করতে পারে তার অখাট্য সত্য একটি প্রমাণ ডাক্তার শংকর গৌড়ার এ কাহিনীটি। কাহিনীটি পড়ে যে কেউই প্রভাবিত হতে বাধ্য। গভীরভাবে মনকে আন্দোলিত করে ভাবিয়ে তুলে। শ্রেষ্ট জীব হয়ে জন্ম নিয়ে মানুষ কি করছে এমন প্রশ্ন ক্ষনিকের জন্য হলেও মনিন্দ্রালোকে উদয় হবেই। ক্ষনিকের জন্য হলেও জাগিয়ে দিয়ে যাবে মানবিক গুণের ঘুমিয়ে থাকা অনন্তসুন্দর পরম সে জ্ঞানেন্দ্রিয়কে।
কাহিনীটি ভারতের কর্ণাটকের একজন ডাক্তারের। ডাক্তারের নাম শংকর গৌড়া। তিনি কর্ণাটকের মণ্ডিয়ার মানুষ। ডাক্তার শংকর গৌড়ার চিকিৎসা চর্চার পথ-পদ্বতি শুনলে অনেকটা বিস্মিত হতেই হয়! শুরুতে কেমন ছিল তার ডাক্তারী পেশার নমুনা শুনলে বিস্ময়াবিভুত হতেই হবে। অনেকে ভাবের আবেগে কেঁদে ফেলতেও পারেন। ডাক্তার হয়ে একজন মানুষ কখন এমন করতে পারে! এমন প্রশ্ন যে কোন পাঠকের মনে উদয় হতেই পারে।
ডাক্তার শংকর কোলকাতা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় থেকে এম.বি.বি.এস, এম.ডি পাশ করা একজন ডাক্তার। তিনি একজন চর্ম বিশেষজ্ঞ। যে কেউ শুনে অবাক হবেন যে শুরুতে এই ডাক্তার শংকর গৌড়ের কোন স্থায়ীভাবে বসার জায়গা(চেম্বার) ছিলনা। সুন্দর নমুনায় একটি ডাক্তারীর বসার জায়গা নির্মাণ করতে অনেক টাকার প্রয়োজন। ডাক্তার শংকর গৌড়া এতো টাকা কোথায় পাবেন এমনই ছিল অবস্থা! নিজের পৈত্রিক ভিটাখানাও মাত্র দুই কামড়ার আর অনেক দূরে প্রত্যন্ত অঞ্চলে। এতদূর সেখানে রোগী যাবে কি করে। এমন এমন অনেক প্রশ্ন। কিন্তু হাল ছাড়লেন না শংকর ডাক্তার। ফলে যেমন চিন্তা তেমন কাজ। প্রতিদিন সকাল প্রায় ৮টার কাছাকাছি সময়ে এসে যান কাছে থাকা পরিচিত এক ‘ফাস্ট ফুড’এর দোকানে। হেলান দিয়ে বসে পড়েন দোকানের ‘রক’-এ অর্থাৎ উঁচু বেদিতে! শুরু হয় রোগী দেখা। অতি সস্তা কাগজে ৩টাকার কলমে ঔষধের নাম লিখে দেন রোগীদের। লাইনে থাকা রোগী শেষ না হওয়া পর্যন্ত চলতে থাকে তার ব্যবস্থাপত্র লিখার কাজ।
বর্তমানের এ কঠিন হৃদয়হীন মানুষের সমাজে, যেখানে বিশ্বের দেশে দেশে বিশেষ করে আমাদের বাংলাদেশে চিকিৎসার নামে, নিরীহ সাধারণ মানুষ তথা বিত্তহীন মানুষের পকেট লুটপাট করা হয় ডাক্তার নামধারী কতিপয় পশুচরিত্রের মানুষের দ্বারা, অসহায় রোগীকে অস্ত্রোপচারের টেবিলে রেখে চিকিৎসার আগে টাকা আদায় করার মত বিভৎসতা নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে সেখানে ডাক্তার শংকর গৌড়ার রোগী দেখার পারিশ্রমিক কত জানলে কেউ বিশ্বাসই করবেন না। মহান এ মানুষ শংকার গৌড়া ব্যবস্থাপত্র লিখার জন্য রোগীদের কাছে থেকে গ্রহন করেন মাত্র ৫টাকা। অবশ্য অনেকেই লিখেছেন তিনি প্রতিদিন কম করে হলেও ৫০০ রোগী দেখেন।
দরিদ্র মানুষের চিকিৎসায় এমন দরদ দিয়ে কাজ করার কারণে ২০২২সালে ভারত সরকার তাঁকে ‘সামাজিক পরিবর্তন অধ্যায়ে’ “ইন্ডিয়ান অব দা ইয়ার” সনদে ভূষিত করেন। এর পরই গণমাধ্যমে শুরু হয় তাকে নিয়ে তোলপাড়। ডাক্তার শংকর গৌড় এখন দরীদ্র মানুষের কাছে দেবোতুল্য হয়ে উঠেছেন।