শ্রীমঙ্গলে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সমাজসেবা অধিদপ্তর কর্তৃত বাস্তবায়িত “ক্যান্সার, কিডনী, লিভার সিরোসিস, স্ট্রোক প্যারালাইজড, জন্মগত হৃদরোগ ও থ্যালাসেমিয়া” রোগীদের এককালীন আর্থিক অনুদানের চেক বিতরণ করা হয়।
আজ বৃহস্পতিবার(২৪ আগস্ট) সকাল ১০টায় অনুষ্ঠিত এক অনাড়ম্বর আয়োজনে মোট ১৪ লক্ষ ৫০ হাজার টাকার চেক বিতরণ করা হয়।
অনুষ্টানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অনুমিত হিসাব সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি সাবেক চীফ হুইপ, বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব উপাধ্যক্ষ ড. মো: আব্দুস শহীদ এমপি।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী অফিসার আলী রাজীব মাহমুদ মিঠুন এর সভাপতিত্বে এবং সমাজসেবা অফিসার শোয়েব হোসেন চৌধুরীর সঞ্চালনায় অনুষ্টানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শ্রীমঙ্গল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ভানু লাল রায়, শ্রীমঙ্গল উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অর্ধেন্দু কুমার দেব বেভূল, সাধারণ সম্পাদক জগৎজ্যোতি ধর শুভ্র, মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার দীলিপ কুমার বর্ধন, কৃষকলীগের আহবায়ক আবু তালেব বাদশা, আওয়ামীলীগ নেতা মামুন আহমেদ, যুবলীগ নেতা সাবের আহমেদসহ উপকারভোগীগণ।
গত বৃহস্পতিবার (২৪ আগস্ট) অক্সফ্যাম ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এর সহায়তায় এবং ব্রেকিং দ্য সাইলেন্স এর উদ্যোগে ‘লিডারশীপ এমবডি এসোসিয়েশন ডিমানডিং টু এনশিওর রাইটস(লিডার)’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় শ্রীমঙ্গলের গ্র্যান্ড তাজ রেস্টুরেন্ট এন্ড পার্টিসেন্টারে সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়।
শ্রীমঙ্গলের বিভিন্ন সরকারি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান, জনপ্রতিনিধি, বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন, চা বাগান নারী চা শ্রমিক ও কিশোরী সংগঠন এবং চা বাগান কর্তৃপক্ষের উপস্থিতিতে ব্রেকিং দ্য সাইলেন্স এর উপ-পরিচালক ড. মোঃ তারেকুজ্জামানের সভাপতিত্বে এবং প্রকল্প কো-অডির্নেটর পারভেজ কৈরী’র সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শ্রীমঙ্গল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ভানু লাল রায়।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মিতালী দত্ত, কলকারখানা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের সহকারি মহাপরিদর্শক পপি রানী দে, কমলগঞ্জ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান রাম ভজন কৈরী, শ্রীমঙ্গল সরকারি কলেজের সহকারি অধ্যাপক সুর্দশন শীল, বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি পংকজ কন্দ ও সাধারন সম্পাদক নিপেন পাল, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সাহেদা আক্তার।
অনুষ্ঠানে লিডার প্রকল্পের অগ্রগতি পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপন করেন ব্রেকিং দ্য সাইলেন্স এর সিলেট বিভাগী সমন্বয়কারী পারভেজ কৈরী (প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর, বিটিএস, শ্রীমঙ্গল)। তিনি বলেন, প্রকল্পটির লক্ষ্য হলো লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা সম্মিলিতভাবে প্রতিরোধে চা বাগানের নারী শ্রমিক ও কিশোরী মেয়েদের সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে নেতৃত্বের বিকাশ ঘটানো এবং দায়িত্ব বাহককে জবাবদিহি করা। এর উদ্দেশ্যে হলো নারী শ্রমিক ও কিশোরী মেয়েদের জন্য মতামত প্রদানের সুযোগ সৃষ্টি করা। যাতে তারা সম্মিলিতভাবে তাদের অধিকার রক্ষার জন্য মতামত প্রদান করতে পারে।
চা বাগনের নারী শ্রমিক এবং কিশোরীদের জীবন দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে নেতৃত্বের বিকাশ ঘটবে এবং নিজেদের উন্নয়নে প্রয়োগ করতে পারবে। চা-বাগানের নারী শ্রমিকরা উপযুক্ত নেতৃত্বের দক্ষতা অর্জন করে বিভিন্ন স্তরে সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে পারবে।
শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজার সদর এবং কমলগঞ্জ উপজেলার ছয়টি চা বাগানের বিভিন্ন সমস্যা চিহ্নিত করে চা বাগানে উক্ত সমস্যাগুলোর সমাধানের সাথে সম্পর্কিত সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তর, স্থানীয় সরকার প্রতিনিধি, চা বাগান কর্তৃপক্ষের কাছে তুলে ধরা হয় এবং সবার পক্ষ থেকে উঠে আসা বিষয়গুলো সুপারিশ আকারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের গোচরীভুত করা হয়।
সুপারিশে বলা হয়- সাতগাঁও, মির্জাপুর, হোসনাবাদ, এমআরখান, রাজঘাট, মৌলভী চা বাগানের ভিতরে, চা সেকশনে নারীদের জন্য সৌচাগার ও টিউবওয়েল এর ব্যবস্থা করা। উক্ত চা বাগানে ডে-কেয়ার(ক্যারেজ ঘর) স্থাপন করা, ব্রেস্ট ফিডিং কর্ণার তৈরি করা। চা বাগানে বাল্য বিবাহ বন্ধ করতে বাগান কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা করা, চা বাগানে ইউনিয়ন পরিষদের বিভিন্ন সেবাগুলো যাতে বাগানের গরিব এবং সঠিক মানুষরা পায় তার জন্য সঠিক বাছাই এর ব্যবস্থা করা। চা বাগানের হাসপাতালগুলোতে ভালো চিকিৎসার ব্যবস্থা করা। সম্ভব হলে দুটি চা বাগান মিলে একটি এ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করা। উক্ত চা বাগানে স্থানীয় সরকারি হাসপাতালগুলোর মাধ্যমে নারী ও কিশোরীদের জন্য স্বাস্থ্য সচেতনমূলক প্রোগ্রাম আয়োজন করা। উক্ত চা বাগানগুলোতে পুষ্টির অভাবের ফলে বিশেষ করে নারী ও কিশোরীরা স্বাস্থ্য ঝুকিঁতে আছে, তাই পুষ্টি প্রোগ্রামগুলো জোরদার করার দাবী। চা বাগানে নিরাপদ পানীয় জলের অভাব রয়েছে। স্থানীয় চেয়ারম্যান এবং উপজেলা চেয়ারম্যানের মাধ্যমে উক্ত চা বাগানগুলোতে গভীর নলকূপের ব্যবস্থা করা।
উক্ত চা বাগানের যারা ঝুকিপূর্ন কাজে নিযুক্ত আছে তাদেরকে যথাযথভাবে সুরক্ষা সামগ্রী প্রদান করার ব্যবস্থা করা। উক্ত চা বাগানগুলোতে নারী শ্রমিকদের জন্য ছাউনি ঘরের ব্যবস্থা করা এবং নারী চা শ্রমিকদের পাতা তুলার জন্য রেইন কোট বা বড় ছাতাল এর ব্যবস্থা করা। চা বাগানগুলোকে অধিক গতিশীল করার লক্ষ্যে দক্ষ নারী চা শ্রমিক গড়ে তুলার জন্য দক্ষতা উন্নয়নমূলক প্রশিক্ষণ আয়োজন করা। শিশুশ্রম বন্ধ করে চা বাগানগুলোর শিশুদের বিদ্যালয় মুখি করা। চা বাগানের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য যে উপবৃত্তি দেওয়া হয় তার পরিমান বাড়ানো যাতে করে বেশি সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রীরা এর সুবিধা পায়। চা বাগানের শিক্ষার্থীদেরকে স্কুল ও কলেজগুলোতে ভর্তির বিশেষ ব্যবস্থা প্রয়োজনে কোটা চালু করা। চা বাগানের শিক্ষার্থীদেরকে কলেজ গুলোতে উচ্চ শিক্ষার পথ সুগম করতে অবৈতনিক ব্যবস্থা চালু করা এবং যাতায়াতের জন্য একটি বাস এর ব্যবস্থা করা। চা বাগানের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে ঝরে পড়া রোধ করতে বিশেষ মনিটরিং ব্যবস্থা চালু করা। চা বাগানগুলো থেকে চুলাই মদ ব্যবস্থার পাট্টা তুলে দেয়ার জন্য মালিকপক্ষ এবং স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের উদ্যোগ নেয়া। চা বাগানগুলোতে সমাজসেবা অফিস থেকে প্রদানকৃত এককালিন পাচঁ হাজার টাকা ভাতা প্রদানের সঠিক সুবিধাভোগী নির্বাচনে চা বাগানের নারী শ্রমিক ও কিশোরী দলের মতামত প্রদানের সুযোগ সৃষ্টি করা। চা বাগান গুলোতে সরকারি সেবা এবং ভাতা সম্পর্কিত তথ্য প্রচারের ব্যবস্থা করা।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন সহ-সভাপতি পংকজ কন্দ, সাধারন সম্পাদক নিপেন পাল, রাজঘাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বিজয় বুনাজী, মির্জাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিছলু আহমদ চৌধুরী, শ্রীমঙ্গল উপজেলা সমাজসেবা অফিসার মো: সুয়েব হোসেন চৌধুরী, কমলগঞ্জ উপজেলা সহকারি শিক্ষা অফিসার ইসহাক মিয়া, সাতগাঁও চা বাগানের সহকারী ব্যবস্থাপক মতিন আহমেদ, শ্রীমঙ্গল উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা অসীম কুমার কর, বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের ভ্যালি সভাপতি বিজয় হাজরা।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ভানু লাল রায় শ্রীমঙ্গল উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে উক্ত প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্রেকিং দ্য সাইলেন্স ও অক্সফ্যামকে এবং ইউরোপিয়ান ইউনয়নকে সকল ধরনের সহযোগিতা করার আশ্বাস প্রদান করেন। তিনি বলেন এখানে আজ যে বিষয়গুলো উঠে এসেছে এগুলো বাস্তবায়নের জন্য একটি পরিকল্পনা করা দরকার। অনুষ্ঠানে উপজেলার সংশ্লিষ্ট সরকারি বেসরকারি দপ্তরের প্রতিনিধি, সাংবাদিক এবং বিটিএস কর্মীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।