দেশের সর্বোচ্চ আদালত কর্তৃক ষোড়শ সংশোধনীকে অবৈধ বলে রায় দেয়াকে নিয়ে দেশের বিদগ্ধ সুশীল সমাজ, রাজনৈতিক মহল ও বিজ্ঞজন নিজেদের মত প্রকাশ করছেন। যদিও সাদা-মাটাভাবে বা আরো সুস্পষ্ট করে বললে এই ষোড়শ সংশোধনীর চলমান বিতর্কীত বিষয়টির সাথে দেশের ১৬কোটী সাধারণ মানুষের তেমন কোন সম্পর্ক নেই। বলতে গেলে সাধারণ মানুষের এতে কিছুই যায় আসে না। বিষয়টি কেবলমাত্র দেশের সর্বোচ্চ আদালতের বিচারপতিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা কে নিতে পারবে(?)। মোদ্দাকথা আসল বিষয়টি তাই।
ষোড়শ সংশোধনীর মধ্যদিয়ে যে বিবাদের সমাধান হয়ে গিয়েছিল হঠাৎ করে জাতীয়ভাবে কি এমন কারণ ঘটলো যে তাকে আবার সামনে টেনে এনে বিতর্কিত করা হলো! যেখানে দেশের হাজার হাজার কোটী টাকা বিদেশে চলে গিয়েছে এবং যাচ্ছে, বন্যায় দেশ ভেসে যাচ্ছে, মাঝে মাঝে শহরের রাস্তা নদী হয়ে যায়, দেশে সন্ত্রাসের অনেকটা অরাজকতা চলছে; ঠিক এমনি এক মূহুর্তে কি কারণে ষোড়শ সংশোধনীর বিষয়টি সামনে নিয়ে আনা হলো এর কারণ খুঁজতে অভিজ্ঞদেরও মাথা গুলিয়ে যাবার উপক্রম হয়েছে।
অত্যন্ত সংক্ষেপে যদি বলতে চাই, দেশ-বিদেশের কিংবা ব্যক্তিবিশেষের উদাহরণ না টেনে, সব ঝেড়ে ফেলে দিয়ে কোনরূপ পক্ষপাতি না হয়ে বিশুদ্ধ সুস্থমনে কেবল মাত্র আমরা নিজেদের সাধারণ জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা দিয়ে, যদি বিষয়টির দিকে মনযোগী হই তা’হলে অবশ্যই বুঝতে পারবো যে ‘জুডিশিয়েল কাউন্সিল’এর নামে মুষ্টিমেয় ৮-৯জন লোকের উপর সর্বোচ্চ বিচারপতিদের বিচারের ভার না দিয়ে, দেশের সাধারণ মানুষের প্রতিনিধি ৩শত সাংসদের উপর রাখা খুবই যুক্তিযুক্ত ও ন্যায্য হয়। জুডিশিয়েল কাউন্সিলের গুটি কয়েক মানুষের বিচার বিবেক আর ৩শত সাংসদের বিচার-বিবেক সর্বোবস্থায়ই শ্রেষ্ট ও ন্যায্য হতে বাধ্য। ‘জুডিশিয়েল কাউন্সিল’ থাকতেও পারে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে আমরা কি সে গুণাগুণের সত্যনিষ্ঠ মানুষ গড়ে তুলতে পেরেছি! জাতীয়ভাবে, সমাজের প্রায় সর্বক্ষেত্রে আমরা বহুভাগে এখনও বিভক্ত। অন্ততঃ যেসব বিষয়ে আমাদের বিভক্ত থাকা ঠিক নয় সেসব বিষয়েও আমরা বিভক্ত। শুধু কি বিভক্ত, হাতে গুনা হলেও এখনও আমাদের সুশীল সমাজের বেশ কিছু মানুষ জেনেশুনে দিনে-দুপুরে স্বাধীনতা বিরুধী শিবিরের ভোলাডিমে তা দিয়ে যাচ্ছেন। আমরা পক্ষপাত দোষে দোষি হয়ে আছি। আমরা নিজেরাইতো একে অন্যকে বিভিন্ন দোষে দায়ী করে আসছি সেই অনেক আগ থেকেই। গতানুগতিক ধারায় এই দোষি বলে গালি দেয়াও তো আমাদের জাগ্রত সুশীল মনের পরিচায়ক নয়।
মৌলবাদসহ বিভিন্ন যুক্তিসংগত রাজনৈতিক ও সামাজিক কারণেই আমরা এখনও ঐক্যমতে পৌঁছাতে পারিনি, সর্বজনগ্রাহ্য কোন সমতল ক্ষেত্রও তৈরী করতে পারিনি। এটি একটি বাস্তব সত্য। এ অবস্থায় ‘জুডিশিয়েল কাউন্সিল’ মনেহয় সঠিক সমাধান নয়। এমন গুণাবলী বিশিষ্ট সুধিসমাজের বিকাশ ও প্রকাশ না ঘটা পর্যন্ত জাতির বৃহত্তরে স্বার্থে সংসদের উপর দায়ীত্ব থাকাই মঙ্গলজনক হয়।
প্রকৃতি ও মানব সমাজে প্রতিটি বিষয়েরই পক্ষে-বিপক্ষে কথা থাকে এবং আছে। এই থাকাটাই স্বাভাবিক। কেউ সামনা পছন্দ করেন, কেউ আবার পেছনদিকে চেয়ে দেখতে বলেন। অনেকেই ডানদিকে তাকাতে ভালবাসেন আবার বহুলোক বামদিকে স্বস্তি দেখেন। এই বৈপরিত্ত্ব নিয়েই বিশ্বব্রহ্মের সৃষ্টি। এই পক্ষে ও বিপক্ষে থাকবেই। থাকাই বরং দরকারী। এই পছন্দ অপছন্দ আছে বলেই অগ্রগতি কাজ করতে পারে। এই বাদানুবাদের ভেতর দিয়েই আসল জিনিষটি মুক্ত হয়ে আসতে পারে। আমাদের আশা, ষোড়শ সংশোধনী নিয়ে জাতীয়ভাবে এই বাদানুবাদ আমাদের মঙ্গলেরই বার্তাবাহী হয়ে একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ রচনায় সহায়ক হবে।
একটি বিষয় খুবই সত্য যে আমার কথা বলার ভাষা আমার বেড়ে উঠার পরিবেশের সাক্ষ্য দেয়। আমার ভাষা, আচার-ব্যবহার আমার বুনিয়াদি পরিচয়। এটি একটি মহামূল্যবান চরম কথা। আমাদের আলাপ-আলোচনা কিংবা লেখা-লেখিতে তারই প্রতিফলন ঘটে।
যেকোন বিষয়ে বিদেশের উদাহরণ দিতে পারি, কোন বিশেষ বিশেষজ্ঞের মতামতের কথা উল্লেখ করতে পারি। কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে আমাদের হুবহু সে সিদ্ধান্তকে অনুসরণ করতে হবে। আমাদের নিজেদের চলার পথকে কাঁটামুক্ত রাখতে আমাদের নিজেদের মত করেই দেখতে হবে ও ভাবতে হবে।
অনেকেরই জানার সুবিধার জন্য ষোড়শ সংশোধনী নিয়ে সাম্প্রতিক আলাপ-আলোচনার একটি সংক্ষিপ্ত চিত্র এখানে তুলে ধরা হলো-
ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে দেয়া পূর্ণাঙ্গ রায়ে সংক্ষুব্ধ সরকার। সচিবালয়ে সোমবার মন্ত্রিপরিষদের সভা শেষে এক অনির্ধারিত আলোচনায় এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন মন্ত্রীরা। একপর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রায়ের বিষয় জনগণকে জানানোর জন্য মন্ত্রিপরিষদের সদস্যদের নির্দেশ দেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রায় তো ওনারা দিয়েছেন। পূর্ণাঙ্গ রায়ের কপি আপনাদের হাতে এসেছে। এখন আপনারা রায়ের বিভিন্ন অনুচ্ছেদ নিয়ে কথা বলুন। এ বিষয়ে জনমত গড়ে তুলুন। জনগণ যেন বুঝতে পারে ষোড়শ সংশোধনীর পূর্ণাঙ্গ রায়ে তারা কী মন্তব্য করেছেন?’
তিনি আরও বলেন, “রায়ের কোথাও কোথাও সরকার এবং জনগণ সম্পর্কে ‘আপত্তিকর’ মন্তব্য করা হয়েছে। কাজেই আপনারা যেখানেই সুযোগ পাবেন সেখানে এসব বিষয় জনগণকে জানাবেন। কারণ, আমরা জনগণের প্রতিনিধি। জনগণের এসব বিষয় জানার অধিকার আছে।”
‘সংসদ যদি প্রশ্নবিদ্ধ হয় তাহলে যে সংসদ রাষ্ট্রপতিকে নির্বাচিত করেছেন সেই রাষ্ট্রপতিও প্রশ্নবিদ্ধ! আর সেই রাষ্ট্রপতির কাছে শপথবাক্য পাঠ করে যিনি প্রধান বিচারপতি হয়েছেন তিনিও প্রশ্নবিদ্ধ হন।’ সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ কক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ছাড়াও মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের পূর্ণাঙ্গ রায় নিয়ে ভুল ব্যাখ্যা দেয়া হচ্ছে- এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেছেন, রায় নিয়ে এখন কিছু বলবো না, যা বলার কোর্টে বলবো।
মঙ্গলবার সুপ্রিমকোর্টে ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে এক রক্তদান কর্মসূচির উদ্বোধন শেষে এ সংক্রান্ত এমন এক প্রশ্নের জবাবে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।
রক্তদান কর্মসূচি উদ্বোধনের প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসময় প্রধান বিচারপতি বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বিচার করতে গিয়ে আমি দেখেছি এর সঙ্গে অনেক রাঘববোয়ালরা জাড়িত।
তিনি বলেন, এই মামলার তদন্ত দুর্বলতার কারণে সেই রাঘববোয়ালদের আমরা কিছু করতে পারিনি। বঙ্গবন্ধু হত্যা ছিল একটি ফৌজদারি ষড়যন্ত্র।
প্রধান বিচারপতি বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যামামলা নিয়ে ইন্ডেমনিটি সুপ্রিম কোর্ট বাতিল করেছিল। আমি এ জন্য অত্যন্ত গৌরবান্বিত বোধ করছি। অনুষ্ঠানে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো: আবদুল ওয়াহহাব মিয়া বক্তব্য দেন। এসময় সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতিসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান বিচারপতি বলেন, এই রক্তদান কর্মসূচি গত দুই বছর যাবৎ আমি করে যাচ্ছি। আমার উদ্দেশ্য হলো বঙ্গবন্ধুর যে রক্ত ঝরেছে- এর মাধ্যমে অন্তত কিছুটা হলেও ঋণ পরিশোধ হবে। এসময় সেখানে অন্যান্য বিচারপতি, সিনিয়র আইনজীবী ও সুপ্রিমকোর্টের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন। সুত্র: যুগান্তর ও নয়াদিগন্ত
আইন কমিশনের চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়কে অগণতান্ত্রিক ও পূর্বপরিকল্পিত বলে মন্তব্য করেছেন।
মঙ্গলবার বিকেলে জাতীয় আইন কমিশন কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।
খায়রুল হক বলেন, ষোড়শ সংশোধনীর রায়ে সংবিধানের অপব্যাখ্যা করা হয়েছে। তাই সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল ফিরিয়ে আনতে হলে আবার সংবিধান সংশোধন করতে হবে। সংবিধানে যেহেতু সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল ছিল না, সেহেতু এটা রাখা সংবিধান পরিপন্থী বলেও জানান তিনি।
তিনি বলেন, সংসদ সদস্যরা ভুল করলে সুপ্রিম কোর্ট দেখে সংশোধন করবেন। এই রায়ের মাধ্যমে জুজুর ভয় দেখানো হচ্ছে এবং সংসদ সদস্যদের হেয় করা হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
সংবিধান প্রণেতা ড. কামাল হোসেন বলেছেন, সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী সুপ্রিম কোর্টের মর্যাদা খাটো করেছে।সোমবার, ২৯ মে উচ্চ আদালতের বিচারকদের অপসারণ ক্ষমতা সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল থেকে সংসদের হাতে প্রদান করে আনা সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলে অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে মতামত প্রকাশের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব মন্তব্য করেন।
ড. কামাল হোসেন বলেন, হাইকোর্ট বিভাগ ইতোমধ্যে এটাকে (সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী) অবৈধ ঘোষণা করে রায় দিয়েছেন। কোনো আইন বা সংশোধনী যদি পরিপন্থি হয়, তখন সংবিধানই প্রাধান্য হয়। এটিই হাইকোর্ট বলেছেন। ষোড়শ সংশোধনী এ কারণে মৌলিক কাঠামোয় আঘাত করেছে। এটি বিচার বিভাগের স্বাধীনতাকে খর্ব করেছে। তিনি আরো বলেন, সংবিধান হলো দেশের সর্বোচ্চ আইন। সেখানে কার কি ক্ষমতা, তা নির্ধারণ করা আছে।
বিচার বিভাগ সম্পর্কে তিনি বলেন, বিচার বিভাগের দায়িত্ব হলো, সবাই নিজ নিজ সীমারেখার মধ্যে থাকছে কিনা তা দেখা। যদি কেউ সীমালঙ্ঘন করে থাকে, তখন বিচার বিভাগ বলে যে, এখানে সীমালঙ্ঘিত হয়েছে।
ষোড়শ সংশোধনী সংবিধানের পরিপন্থি কিনা এ বিষয়ে ড. কামাল হোসেন বলেন, এটা অবশ্যই পরিপন্থি। হাইকোর্টও পরিপন্থি বলেছেন। আমি এ সাবমিশন রেখেছিলাম, সেগুলো হাইকোর্ট মেনে নিয়েছেন। আজ আমি সেগুলোই বললাম (আদালতের শুনানিতে)’।
বিচারক অপসারণে কি বিধান থাকা উচিত- এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘যেটা ছিল সেটাই সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল। ষোড়শ সংশোধনী না থাকলে আমাদের যেটা ছিল সেটাই থাকবে। সেটার ওপর সর্বোচ্চ আদালতের রায়ও আছে।
১৫ আগস্টের পর সংবিধান প্রণেতা ড. কামাল হোসেনের ভূমিকার কঠোর সমালোচনা করেছেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী। একইসঙ্গে ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ের প্রেক্ষিতে প্রধান বিচারপতির নামোল্লেখ না করে তাঁকে ‘স্বেচ্ছাচারী’ বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
সোমবার দুপুরে খাদ্য ভবনে জাতীয় শোক দিবসের এক আলোচনা সভায় ড. কামাল হোসেন ও প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা প্রসঙ্গে তিনি এসব কথা বলেন।
কৃষিমন্ত্রী বলেছেন, ‘ড. কামাল হোসেন সত্যিকারের একজন ‘কাপুরুষ’। তিনি কথায় কথায় আইনের শাসনের কথা বলেন, কিন্তু যখন ১৫ আগস্টের খুনিদের দায়মুক্তি দেয়া হল তখন কোথায় ছিল তাঁর আইনের শাসন?’
কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করলেন জননেত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে ড. কামাল হোসেনের ইহুদি জামাতা ডেভিড বার্গমান সাংবাদিকতার ভিসা নিয়ে এসে যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে নির্লজ্জ দালালি শুরু করলেন। অথচ সেই কামাল হোসেন এখন আমাদের নীতিবাক্য শুনান।’
অতীতের স্মৃতিচারণ করে মতিয়া চৌধুরী বলেন, ‘১৫ আগস্টের পর দিন ১৬ আগস্ট ড. কামাল হোসেনকে শেখ রেহানা যখন বলল, ‘চাচা একটা আবেদন জানান বিশ্ববাসীর প্রতি যেন মোস্তাক সরকারকে সমর্থন না দেয়া হয়’। তিনি (ড. কামাল) রেহানার হাত ছাড়িয়ে দিয়ে চলে যেতে উদ্যত হলে তখন রেহেনা গিয়ে বলল, ‘আপনি কথা দেন মোস্তাকের মন্ত্রী হবেন না’। যখন ওসমানীকে প্রেসিডেন্ট ক্যান্ডিডেট করা হলো এই কামাল হোসেন ধমক খেয়ে ইলেকশনের আগের দিন পল্টন থেকে লেজ গুটিয়ে চলে গেলেন। আর উনারা আজ আসেন লম্বা লম্বা কথা বলতে। মনে রাখবেন ড. কামাল হোসেন- এই দেশ বীরবন্দনার দেশ, আপনাদের মত কাপুরুষরা ষড়যন্ত্র করে এদেশে বেশি দূর এগোতে পারবে না।’
সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ের প্রেক্ষিতে প্রধান বিচারপতির নামোল্লেখ না করে মতিয়া চৌধুরী বলেন, ‘নানান দিক দিয়ে হুঙ্কার আসছে। বেশ শক্তমত হুঙ্কার, কিন্তু হুঙ্কার যিনি দেন তিনি কে? আমি বলবো আমাদের শিল্পমন্ত্রীর ভাষায়, যে সংসদ রাষ্ট্রপতিকে নির্বাচন করে সেই রাষ্ট্রপতি কর্তৃক উনি নির্বাচিত। আর উনি সংসদের উপর ছড়ি ঘুরাতে আসেন। আর তার একাডেমিক দিকটার কথা আমি বলতে চাই না। সাংবাদিক সাহেবরা তার একাডেমিক দিকটা খুঁজে বের করুন। যাই হোক ‘তিন সেরে পাত্রে পাঁচ সেরে জিনিস’ দিলে যা হয় বর্তমান ঘটনা তাই হয়েছে। তিন সেরে পাত্রে পাঁচ সেরে জিনিস দিলে সেটা মানিয়ে উঠতে পারে না।’
নামোল্লেখ না করে প্রধান বিচারপতি সম্পর্কে তিনি আরও বলেন, ‘তিনি (প্রধান বিচারপতি) শেখ হাসিনা আর রাষ্ট্রপতির উদারতার সুযোগ নিয়ে একটা জায়গায় বসছেন। সেখানে উনি প্রথমে কি করলেন আপনারা কি দেখেন নাই। উনি প্রধান বিচারপতির চেয়ারে বসার পরেই উনার মানসীর মূর্তি (ভাস্কর্য) বানিয়ে ঠিক বাংলাদেশের মানচিত্রটা ঢেকে দেয়ার জন্য তা সর্বোচ্চ আদালত প্রাঙ্গণে স্থাপন করলেন। তাঁকে কয়েক দফা বুঝিয়ে সেই মূর্তি নামানো হল। তা না হলে ‘রায়ট’ হয়ে যেত। তিনি তাঁর স্বেচ্ছাচারিতার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন। তবে একটি কথা বলে দিতে চাই- সরকারের উদারতাকে দুর্বলতা ভাবলে বড় ভুল করবেন।’
ব্যারিস্টার আমিরুল ইসলাম প্রসঙ্গে মতিয়া চৌধুরী বলেন, ‘যাদের একটু বয়স তারা জানেন একটা ব্রিটিশ সংস্থা হয়েছিল সাহায্যের জন্য। তার নাম ‘জন স্টোন হাউজ’। জন স্টোন ব্রিটিশ পার্লামেন্টের এমপি ছিলেন। ওয়ান অ্যান্ড ওয়ান আমিরুল ইসলামকে দেখেছি তার সঙ্গে ছায়ার মত ঘুরে বেড়াত। পরবর্তীকালে এই জন স্টোন হাউজ টাকা চিট করার কারণে ব্রিটিশ কোর্টে তার সাজা হয়। এই হল আমিরুল ইসলামের সত্যিকারের চেহারা।’
খাদ্য সচিব মো. কায়কোবাদ হোসেনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন, খাদ্যমন্ত্রী অ্যাড. কামরুল ইসলাম, ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস এমপি, খাদ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. বদরুল হাসান প্রমুখ।
ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে প্রধান বিচারপতি পাকিস্তানের ফাঁদে পা দিয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) এর সভাপতি ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু।
সোমবার বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ শহীদ কর্নেল তাহের মিলনায়তনে ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে জাসদ আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ।
তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, এ রায় উদ্দেশ্যমূলক। রায়ে সরাসরি স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকার ১৯৭১ ও ৭৫ এর দোসরদের ষড়যন্ত্রের অংশ। ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে রায়ের পর্যবেক্ষণে বঙ্গবন্ধুকে কটাক্ষ করা হয়েছে। সংসদকে ছোট করা হয়েছে। তিনি বলেন, ১৫ আগস্টের ঘটনা কলঙ্কজনক অধ্যায়। এটি আর আমরা দেখতে চাই না। একইসঙ্গে আগামীতে ৭১ এর স্বাধীনতা বিরোধীকারীরা ১৫ আগস্টের খুনিদের সঙ্গে কোনো আপস না করারও অঙ্গীকার করেন তিনি।
আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন জাসদের সহ-সভাপতি মীর হোসাইন আক্তার, সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি শফিকুর রহমান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক মো. আনোয়ার হোসেন, জাসদের স্থায়ী কমিটির সদস্য ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হাবিবুর রহমান শওকত, জাসদ নেতা নুরুল আক্তার, জাসদের স্থায়ী কমিটির সদস্য নাদের চৌধুরী, সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট শাহ জিকরুল আহমেদ, ঢাকা মহানগর পূর্বের জাসদের সভাপতি শহিদুল ইসলাম, ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি শফিউদ্দিন মোল্লা প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করতে হলে তার কর্মকে স্মরণ করতে হবে। ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র তৈরি করতে হবে। ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় এক ধরনের ষড়যন্ত্রের অংশ। এটা জনগণের ম্যান্ডেডকে অস্বীকার করা হয়েছে। সংসদকে অস্বীকার করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুকে কটাক্ষ করা হয়েছে। এ রায়ের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নিতে হবে।
তারা আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুকে শুধু সাত মেজর হত্যা করেননি। এর পেছনে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র ছিল। আওয়ামী লীগের ভেতরে ও বাহিরে ষড়যন্ত্র ছিল। বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার নেতৃত্ব দিয়েছেন। এটি নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টির কোনো সুযোগ নেই। তাই ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় সংশোধন করার দাবি করেন বক্তরা। সূত্র: রিয়েলটাইমনিউজ
নৌ পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান বলেছেন, ‘ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় একটি ঐতিহাসিক দুর্ঘটনা। এর মাধ্যমে মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করে যে সংবিধান রচনা করা হয়েছে, তাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে। যারা এই প্রশ্নের সম্মুখীন করেছে, তারা একটি অর্বাচিনের মতো কাজ করেছে।’
সোমবার দুপুরে মাদারীপুরে একটি অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
নৌপরিবহন মন্ত্রী বলেন, ‘প্রধান বিচারপতি ষোড়শ সংশোধনী নিয়ে যে রায় দিয়েছেন, তাতে গোটা জাতিকে অপমান করা হয়েছে। যেখানে জাতির পিতাকে বঙ্গবন্ধু বলা হয়নি, একক নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন হয়নি, এসব কথা বলা হয়েছে। এমনকি ১৬ কোটি মানুষের রায়ে যে জাতীয় সংসদ গঠন করা হয়েছে, তাকে অপরিপক্ক বলা হয়েছে। এতে ১৬ কোটি মানুষকেও অপমান করা হয়েছে।’
ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ে বিএনপির উচ্ছ্বাস সর্ম্পকে মন্ত্রী বলেন, ‘বিরোধীদলের কাজই হলো বিরোধিতা করা। তারা ভালো কাজেও বিরোধিতা করে, খারাপ কাজেও বিরোধিতা করে। বিএনপি এখন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, তারা এখন নিজেরাই অপমানিত হচ্ছে। তারা এখন একটি কুঁজো দলে পরিণত হয়েছে।’
সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা পরিষদের প্রশাসক মিয়াজউদ্দিন খান। এসময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক ওয়াহিদুল ইসলাম, পুলিশ সুপার সরোয়ার হোসেন, জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী সৈয়দ ফারুক আহম্মেদ, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান পাভেলুর রহমান শফিক খান। সূত্র: রিয়েলটাইমনিউজ
ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ে প্রধান বিচারপতি যে পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন, তাতে ‘ইতিহাস বিকৃতি’ হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন আইন মন্ত্রী আনিসুল হক। সেক্ষেত্রে বিচারকের অসদাচরণ হয়েছে কি-না, তাও খতিয়ে দেখার অবকাশ আছে বলে আইনমন্ত্রী মনে করছেন।রোববার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) আয়োজনে মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি।
আইনমন্ত্রী বলেন, রায়ের ওই বক্তব্যে যে “ইতিহাস বিকৃতি হয়েছে- এর মধ্যে কোন সন্দেহ নাই।”
এর ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, “আপনারা জানেন, আমাদের স্বাধীনতা কিন্তু রাতারাতি আসে নাই। স্বাধীনতার ঘোষণাটাও রাতারাতি হয় নাই। একটা রাজনৈতিক আন্দোলনের মাধ্যমে জনগণের রায়ে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন। “এটাকে আমি বিকৃত করলেও আমি একটা অপরাধ করব।”
প্রশ্নকারী সাংবাদিককে উদ্দেশ্য করে আনিসুল হক বলেন, “অসদাচারণের কোনো সংজ্ঞা এখন পর্যন্ত নাই। সে ক্ষেত্রে এটা খতিয়ে দেখতে হবে, এটা অসদাচারণ কি-না। বা অন্য কিছু হয়েছে কি-না, সেটা খতিয়ে দেখার কিন্তু অবকাশ আছে।”
উচ্চ আদালতের বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে নিতে সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদের যে পরিবর্তন ষোড়শ সংশোধনীতে আনা হয়েছিল, তা ‘অবৈধ’ ঘোষণার রায় গত ১ অগাস্ট প্রকাশ করে সুপ্রিম কোর্ট।
ওই রায়ের পর্যবেক্ষণে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা দেশের রাজনীতি, সামরিক শাসন, নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি, সুশাসন ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতাসহ বিভিন্ন বিষয়ে সমালোচনা করেন।
ওই রায় প্রকাশের পর থেকেই বাদ-প্রতিবাদ চলছে। রায়ে সংক্ষুব্ধ হয়ে সরকারি দল আওয়ামী লীগ প্রধান বিচারপতির কড়া সমালোচনা করে আসছেন। আওয়ামী লীগ নেতারা বলে আসছেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা কোনো একক ব্যক্তির কারণে হয়নি’- এমন একটি বক্তব্য এসেছে প্রধান বিচারপতির বক্তব্যে, যার মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধুকে ‘অবমূল্যায়ন করা হয়েছে’ বলে তাদের অভিযোগ।
এমনকি অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমও আদালতের ওই পর্যবেক্ষণকে ‘বাপের নাম ভুলিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
৭৯৯ পৃষ্ঠার ওই রায়ের ৫৪তম পৃষ্ঠায় প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার পর্যবেক্ষণের অংশে বলা হয়েছে, “কোনো জাতি বা রাষ্ট্র একজন ব্যক্তিকে নিয়ে বা একজন ব্যক্তির মাধ্যমে সৃষ্টি হয় না। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্নের কথা বলে গেছেন, আমরা যদি সত্যিই তা বাস্তবায়ন করতে চাই, আমাদের অবশ্যই আমিত্ববোধের ওই আত্মঘাতী উচ্চাকাঙ্ক্ষা আর আসক্তি থেকে মুক্ত থাকতে হবে যে, কেবল একজন ব্যক্তি বা একজন মানুষই সব করেছে।”
বর্তমান পরিস্থিতিতে কোনো বিচারকের অসদাচরণের ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নেওয়ার কর্তৃত্ব কার হাতে- এমন প্রশ্নে আইনমন্ত্রী বলেন, “এর অথরিটি এখন মহামান্য রাষ্ট্রপতি। তার কারণ হচ্ছে, সুপ্রিম সুডিশিয়াল কাউন্সিল সম্পর্কে যদি (সংবিধানে) কোনো বক্তব্য না থাকে, আর ষোড়শ সংশোধনীও যদি না থাকে, তাহলে মহামান্য রাষ্ট্রপতি ছাড়া আর গতি নাই।
এক্সপাঞ্জ কীভাবে?
ওই রায় প্রকাশের দশ দিনের মাথায় গত বৃহস্পতিবার সরকারের প্রতিক্রিয়া জানাতে এসে প্রধান বিচারপতির ‘অগ্রহণযোগ্য’ বক্তব্য ‘এক্সপাঞ্জ’ করার উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলেছিলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
সরকার কীভাবে তা করতে চায় সে বিষয়ে মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে মন্ত্রীকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আদালতের মাধ্যমেই তা করা হবে।
“সুপ্রিম কোর্ট রুল বলে, রিভিউয়ের মাধ্যমে এর জন্য আবেদন করতে হয়। আমরা এখনো সিদ্ধান্তে আসিনি। এটা নিয়ে চিন্তা ভাবনা করছি।”
রিভিউ করার বিষয়ে এক প্রশ্নে আনিসুল হক বলেন, “এটা কিন্তু ৭৯৯ পাতার একটা রায়। রিভিউ করতে গেলেও পড়ে জায়গাগুলো চিহ্নিত করতে হবে। আজ-কাল-পরশুর মধ্যে হয়ে যাবে- সেটা আমি বলব না। ভীষণভাবে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। ওখানে আপত্তিকর, অপ্রীতিকর ও অপ্রাসঙ্গিক কথাবার্তা আছে, সেইগুলো এক্সপাঞ্জ করার কথা আমি বলেছি। সে বিষয়ে কাজ চলছে।
মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকের পর অনির্ধারিত আলোচনায় আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ষোড়শ সংশোধনীর পূর্ণাঙ্গ রায়ের বিষয়টি উপস্থাপন করেন। দুই ঘণ্টাব্যাপী এটি নিয়ে আলোচনা হয়, যা এর আগে কখনও হয়নি।
অনির্ধারিত বৈঠকে আইনমন্ত্রী রায়ের কপি উত্থাপন করেন। তিনি রায়ের বিভিন্ন পয়েন্ট মন্ত্রিপরিষদের সদস্যদের অবহিত করেন। আইনমন্ত্রী বলেন, “ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ে অপ্রাসঙ্গিক অনেক কিছু আনা হয়েছে, যা প্রয়োজন ছিল না। যেমন- রায়ে পঞ্চম ও ষষ্ঠ সংশোধনী টেনে আনা হয়েছে। এ রায়ে সংসদকে ‘ইমম্যাচিউর্ড’ বলা হয়েছে। এমনকি ২০১৪ সালে যে নির্বাচন হয়েছিল, সেটাকেও ‘প্রশ্নবিদ্ধ’ বলা হয়েছে। এছাড়া রায়ে আরও অনেক ‘আপত্তিকর’ বিষয় আনা হয়েছে।”
নাম প্রকাশ না করার শর্তে অপর এক মন্ত্রী বলেন, “রায়ে যেসব ‘আপত্তিকর’ মন্তব্য করা হয়েছে তা এক্সপাঞ্চ করতে আবেদন করা হবে।’’
ষোড়শ সংশোধনীর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রসঙ্গে মন্ত্রিসভার সদস্যরা বলেন, সংসদ যদি ইমম্যাচিউর্ড হয় তাহলে রাষ্ট্রপতিও ইমম্যাচিউর্ড। আর রাষ্ট্রপতি যে প্রধান বিচারপতিকে শপথবাক্য পাঠ করিয়ে প্রধান বিচারপতি করেছেন তিনি কি করে ম্যাচিউর্ড হতে পারেন- এমন প্রশ্ন রাখেন তারা।
এক প্রশ্নের জবাবে শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু জাগো নিউজকে বলেন, ‘পঞ্চম সংশোধনীতে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল বাতিল করা হয়েছিল।’ অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কোনো আইন হলে সুপ্রিম কোর্ট ব্যাখ্যা দিতে পারেন, সংশ্লিষ্ট আইন বাতিল করা যেতে পারে। কিন্তু সংবিধান বাতিল করতে পারেন না।’
প্রসঙ্গত, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের অপসারণ সংক্রান্ত সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে হাইকোর্টের দেয়া রায় বহাল রেখে আপিল বিভাগের দেয়া পূর্ণাঙ্গ রায় গত ১ আগস্ট প্রকাশিত হয়। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের বিধানটি তুলে দিয়ে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী পাস হয়। ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর ৯৬ অনুচ্ছেদে পরিবর্তন এনে বিচারক অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে দেয়া হয়; যেটি ১৯৭২ সালের সংবিধানে ছিল।
সংবিধানে এই সংশোধনী হওয়ায় মৌল কাঠামোতে পরিবর্তন ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ণ করবে- এমন যুক্তিতে ওই সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে একই বছরের ৫ নভেম্বর হাইকোর্টে একটি রিট দায়ের করা হয়।
ওই রিটের ওপর প্রাথমিক শুনানি শেষে হাইকোর্ট ২০১৪ সালের ৯ নভেম্বর রুল জারি করেন। গত বছরের ১০ মার্চ মামলাটির চূড়ান্ত শুনানি শেষে ৫ মে তা অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন আদালত।
পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হওয়ার পর ওইদিনই সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়কমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, পূর্ণাঙ্গ রায় পড়ার পর এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানানো হবে। সূত্র: রিয়েলটাইমনিউজ
এর আগে সকালে অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে মতামতে এমআই ফারুকী বলেন, ‘পঞ্চম সংশোধনী বাতিলের রায়ে সুপ্রিম কোর্ট সামরিক শাসনামলে জারি করা সব ফরমান বাতিল করলেও সুপ্রিম জুডিসিয়াল ব্যবস্থাকে রেখে দিয়েছেন। এরপর সরকারও পঞ্চদশ সংশোধনীতে এ ব্যবস্থা রেখে দেয়। তারপর সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী করে’।তিনি আরো বলেন, ‘এই ষোড়শ সংশোধনী স্বাধীন বিচার বিভাগ ও গণতন্ত্রের মৌলিক কাঠামোর লঙ্ঘন। বিচারকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে তা তদন্ত হতে হবে বিচারকদের দিয়েই, রাজনীতিবিদদের দিয়ে নয়’।
এর আগে গত ২৫ মে দিনের শুরুতে আদালতে অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে নিজেদের মতামতের ওপর শুনানি করেন ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ। এরপর নিজ মতামত তুলে ধরে শুনানি করেন টিএইচ খান ও ব্যারিস্টার এম আমির-উল ইসলাম। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম লিখিত যুক্তিতর্কের ওপর আদালতে শুনানি করেন গত ২৪ মে। এরপর মামলার রিটকারী আইনজীবী মনজিল মোরসেদ তার বক্তব্যের ওপর শুনানি করেন।
এর আগে গত ৮ মে পেপার বুক থেকে রায় পড়ার মাধ্যমে এই মামলার আপিল শুনানি শুরু হয়। এরপর ৯ মে দ্বিতীয় দিনের মতো শুনানি হয়। এ দুদিন রাষ্ট্রপক্ষে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা হাইকোর্টের রায়ের ওপর আদালতে শুনানি করেন।
এরপর ওইদিনই আদালতে চারজন অ্যামিকাস কিউরি তাদের লিখিত মতামত জমা দেন। এই চারজন হলেন- সংবিধানের অন্যতম প্রণেতা ড. কামাল হোসেন, ব্যারিস্টার এম. আমীর-উল ইসলাম, এম আই ফারুকী ও আবদুল ওয়াদুদ ভূইয়া। সেদিনই আদালত ২১ মে শুনানির পরবর্তী দিন নির্ধারণ করেছিলেন।
এর আগে ৮ ফেব্রুয়ারি এই মামলায় আপিল শুনানিতে সহায়তার জন্য ১২ জন জ্যেষ্ঠ আইনজীবীকে অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে নিয়োগ দেন আপিল বিভাগ। অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত ১২ আইনজীবী হচ্ছেন- বিচারপতি টিএইচ খান, ড. কামাল হোসেন, ব্যারিস্টার রফিক-উল হক, ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম, এ এফ হাসান আরিফ, ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ, এ জে মোহাম্মদ আলী, ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ, ফিদা এম কামাল, ব্যারিস্টার আজমালুল কিউসি, আবদুল ওয়াদুদ ভূইয়া, এম আই ফারুকী।
বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা পুনরায় সংসদের কাছে ফিরিয়ে নিতে ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী পাস করা হয়। এরপর তা ওই বছরের ২২ সেপ্টেম্বর গেজেট আকারে প্রকাশ পায়। এ অবস্থায় সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ওই বছরের ৫ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের নয়জন আইনজীবী হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন।
এ আবেদনের ওপর প্রাথমিক শুনানি শেষে হাইকোর্ট ওই সংশোধনী কেন অবৈধ, বাতিল ও সংবিধান পরিপন্থি ঘোষণা করা হবে না-তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন। এ রুলের ওপর শুনানি শেষে গত ৫মে আদালত সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারকের মতামতের ভিত্তিতে ১৬তম সংশোধনী অবৈধ বলে রায় দেন। তিন বিচারকের মধ্যে একজন রিট আবেদনটি খারিজ করেন।
এর মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠদের রায় প্রকাশিত হয় গত ১১ আগস্ট এবং রিট খারিজ করে দেওয়া বিচারকের রায় প্রকাশিত হয় ৮ সেপ্টেম্বর। দুটি মিলে মোট ২৯০ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে পরে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করে।
স্মরণ করা যায় যে, গত ১ আগস্ট বিচারপতিদের অপসারণ-সংক্রান্ত সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে দেওয়া হাইকোর্টের রায় বহাল রেখে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাসহ সাত বিচারপতির স্বাক্ষরের পর ৭৯৯ পৃষ্ঠার এ রায় প্রকাশ করা হয়।
এর আগে গত ৩ জুলাই বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে আনা সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীকে অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করে দেওয়া হাইকোর্টের রায় বহাল রাখেন আপিল বিভাগ।
এ মামলায় নয়জন বিশিষ্ট আইনজীবীকে অ্যামিকাস কিউরি (আদালতের বন্ধু) হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। তাঁরা হলেন ড. কামাল হোসেন, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এম আই ফারুকী, আবদুল ওয়াদুদ ভূঁইয়া, সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ এফ হাসান আরিফ, ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম, বিচারপতি টি এইচ খান, ব্যারিস্টার রোকনউদ্দিন মাহমুদ, ফিদা এম কামাল ও এজে মোহাম্মদ আলী। সূত্র: যুগান্তর, রিয়েলটাইমনিউজ ও নয়াদিগন্ত