মুক্তকথা নিবন্ধ।। গত সোমবার ২৪শে জুন গভীর রাতে স্মরণকালের ভয়াবহ রেল দূর্ঘটনা ঘটে কুলাউড়া উপজেলার বরমচাল বড়ছড়া রেলসেতুতে। এই রেল সেতু থেকে ৫টি বগি ছিটকে খালে পড়ে যায় এবং দু’টি বগি লাইনচ্যুত হয়ে উল্টে যায়। ভয়াবহ এই দুর্ঘটনায় ৫ জন নিহত ও কয়েক’শত মানুষ আহত হয়ে বিভিন্ন চিকিৎসা কেন্দ্রে এখনও চিকিৎসা নিচ্ছেন। বিভিন্ন মাধ্যমে আসা খবর থেকে অনুমান নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
স্বাধীনতার অর্ধ শতাব্দীর মধ্যে রেলের এমন ভয়াবহ দূর্ঘটনা এর আগে ঘটেনি। বড়ছড়া সেতু বলে পরিচিত রেলের এই সেতুর কাছেই ছোট একটি গ্রামীন বাজার থাকায় রাতের গভীরে দূর্ঘটনাটি ঘটলেও আর্ত মানুষের চিৎকারে আশপাশের মানুষ এসে স্বেচ্ছায় উদ্ধারকাজ শুরু করেন। ফলে বহু মানুষ নেহাৎ মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে যান।
ভয়াবহ এই দুর্ঘটনা নিয়ে রেলমন্ত্রী বলেছেন-“মানুষ হুমড়ি খেয়ে ট্রেনে উঠে, এজন্যই এ দূর্ঘটনা।” রেল সচিব বলেছেন-“অতিরিক্ত যাত্রী ও দ্রুতগতিতে চলার কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছে।” অভিজ্ঞদের কেউ কেউ বলছেন সচিব ও অন্যান্য কর্মকর্তারা নিজেদের দায় এড়ানোর জন্য এসব নানা নমুনার বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন। এসব বক্তব্যের সত্যতার ভিত্তি খুবই দূর্বল ও অনেকটা দখলদার আমলের অনুকরণ মাত্র। সেই আদ্যিকালের কথায় “উদুর পিন্ডি বুধুর ঘাড়ে” চাপিয়ে দিয়ে পার পাওয়ার নমুনা।
এতো নমুনার কথার ফলে একটি প্রশ্ন খুব বড় হয়ে দেখা দিয়েছে যে তা’হলে ভয়াবহ এ দূর্ঘটনাটি ঘটলো কি করে? দু’টি তদন্ত কমিটির কোন তদন্ত প্রতিবেদন এখনও কোথায়ও প্রকাশিত হয়নি। তাই জল্পনা-কল্পনা ও গুজব রটে যাওয়া খুবই স্বাভাবিক। ইতিমধ্যেই দেশের কয়েকটি সংবাদ মাধ্যম ২০১৭সালে প্রকাশিত দূর্ঘটনাকবলিত এই রেলসেতুর কয়েকটি চাঞ্চল্যকর খবর ছবিসহ পুনঃপ্রকাশ করেছে। এতেকরে মন্ত্রী, সচিবসহ রেল কর্তৃপক্ষের বক্তব্যকে সাজানো তৈরীকরা মন্তব্য বলেই প্রতিয়মান হচ্ছে। রেলমন্ত্রীর কথায় যদি আসা যায়, তিনি বলেছেন-‘অতিরিক্ত যাত্রী’। সচিব বলেছেন অতিরিক্ত যাত্রী ও দ্রুতগতি। অতিরিক্ত যাত্রী ও অতিরিক্ত গতি এ দু’টোর নিয়ন্ত্রন, রেল ব্যবস্থাপনার দায়। রেলের বগি, আসন, চালক নিয়োগ, রেল লাইনের সার্বিক দেখাশুনা এসবকিছু ব্যবস্থাপনার মধ্যদিয়ে রেলকর্তৃপক্ষকেই করতে হয়। এসব কাজের ব্যবস্থাপনায় ব্যর্থতা থাকলে সে দায় মিথ্যা কথা দিয়ে বা অন্যের ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা কোনভাবেই সৎচিন্তা প্রসূত নয়।
সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত ২০১৭সালের সচিত্র খবর এতই চাঞ্চল্যকর যে রীতিমত পাথর হয়ে যেতে হয়। বাঁশ দিয়ে রেলসেতু মেরামত এমন কাজ সম্ভব কেবল বাংলাদেশেই। যাত্রী মানুষের জীবন নিয়ে এমন গাফিলতি ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ। এর বেশী কিছু বলার নেই। দু’টি তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন কি বলে সে প্রতিক্ষায় সকলেই উদগ্রীব হয়ে আছেন।