লন্ডন: অভিন্ন ৫৪ টি নদীর মধ্যে ৪৭টি নদীর গতিপথে ছোট-বড় ৫ শতাধিক বাঁধ নির্মাণ করেছে ভারত। ভারতের দেয়া বাঁধের কারণে নদীর প্রবাহ চরমভাবে ব্যাহত হয়েছে। ফলে বাংলাদেশের নদ-নদী, খাল-বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। প্রাকৃতিক ও মৎস্য সম্পদ ধ্বংস হচ্ছে। ভবিষ্যতে এক ভয়াবহ বিপর্যয় অপেক্ষা করছে জাতির জন্য। গতকাল বুধবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত বাংলাদেশ ও ভারতের পানি সমস্যা শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা একথা বলেন।
তিস্তা চুক্তি স্বাক্ষরিত না হলে ভারতের সাথে অন্যান্য চুক্তি না করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি বক্তারা আহবান জানিয়েছেন। একই সঙ্গে সামরিক চুক্তি করার আগে চুক্তির বিষয় বস্তু জনসম্মুখে প্রকাশ করারও দাবি জানান তারা।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক পানি সম্পদ মন্ত্রী মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম বলেছেন, তিস্তা-গঙ্গা নদীর পানি আমাদের অস্তিত্বের সঙ্গে জড়িত। তিস্তা নদীর পানির অভাবে উত্তরবঙ্গ মরুভূমিতে পরিণত হতে চলেছে। কোটি কোটি মানুষ পানি থেকে বঞ্চিত। কৃষকরা হাহাকার করছে। সুতরাং পানির ন্যায্য হিস্যা না পেলে ভারতের সঙ্গে কিসের সম্পর্ক?
মেজর হাফিজ বলেন, ভারত আমাদের বন্ধু। একাত্তরে তারা আমাদের সাহায্য সহযোগিতা করেছে, সেজন্য জাতি কৃতজ্ঞ। কিন্তু এখন তো মনে হচ্ছে কেয়ামত পর্যন্ত এ-ঋণ শোধ করতে হবে, এটা তো সম্ভব নয়।
মেজর (অব.) হাফিজ বলেন, যৌথ নদী কমিশন প্রতিষ্ঠা হয়েছিল অভিন্ন নদীর পানি বণ্টনে ন্যায়ভিত্তিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য। সিদ্ধান্ত হয়েছিল প্রতি বছর চারটি মিটিং হবে। কিন্তু এখন ১০ বছরেও একটি মিটিং হয় না। অর্থাৎ এই কমিশন ব্যর্থ পানি সমস্যার সমাধান করতে।
গঙ্গা ব্যারেজ নির্মাণে চীনের কাছ থেকে অর্থ সহযোগিতা নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে মেজর (অব.) হাফিজ বলেন, গঙ্গার পানির ন্যায্য হিস্যার জন্য গঙ্গা ব্যারেজ নির্মাণে বাংলাদেশ সরকার বহুদিন ধরে চেষ্টা করে যাচ্ছে। এ প্রকল্পে চীন অর্থ সাহায্য করতে চেয়েছে। সেই সাহায্য বাংলাদেশের গ্রহণ করা উচিত। ভারতের অর্থ সাহায্যে গঙ্গা ব্যারেজ তৈরি করলে ভারত লাভবান হবে। বাংলাদেশ সুবিধা পাবে না।
বিশেষ অতিথি বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান বলেন, বিএসএফ প্রতিদিন সীমান্তে মানুষ হত্যা করছে। পানি সমস্যা জিইয়ে রাখছে। তারা সব সুযোগ সুবিধা নিলেও বাংলাদেশকে কিছুই দিচ্ছে না।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফর উল্লাহ চৌধুরী বলেন, পৃথিবীর জীবনযাত্রার জন্য পানির প্রয়োজন। পানির প্রবাহে বিঘ্ন সৃষ্টি করা অমানবিক অপরাধ। আর ভারত এই মানবতা বিরোধী কাজটি করছে।
‘সাউথ এশিয়া ইয়ুথ ফর পিচ অ্যান্ড প্রোসপারিটি সোসাইটি’ আয়োজিত সেমিনারে সংগঠনটির সভাপতি অধ্যাপক সাজ্জাদুল হকের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক দেলোয়ার চৌধুরী, কাদের গণি চৌধুরী, মঞ্জুর হোসেন ইশা, ফরিদ উদ্দিন আহমেদ প্রমুখ। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন শরিফুল আলম বাপ্পি। -ইত্তেফাক থেকে