মোঃ আব্দুল কাইয়ুম:
মৌলভীবাজার শহরের পৌর এলাকায় জলাবদ্ধতা দিন দিন বেড়েই চলেছে। গত কাল সন্ধ্যায় মাত্র পনেরো মিনিটের বৃষ্টিপাতের ফলে শহরের এস আর প্লাজার সামনের সড়ক, পশ্চিম বাজার, সাইফুর রহমান সড়ক, গির্জাপাড়া, বেরীরচর সহ বেশ কিছু সড়ক বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যায়। এ সময় অনেকের ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান ও বাসা বাড়িতে ময়লা পানি ঢুকে যায়। রাস্তায় চলাচলকারী সাধারণ নগরবাসী পড়েন প্রচন্ড জন দুর্ভোগে। ময়লার পানিতে অনেকের কাপর নষ্ট হতেও দেখা গেছে। নষ্ঠ হচ্ছে নগরের পবিত্রতা।
তবে বর্ষা মৌসুমে পৌর এলাকায় জলাদ্ধতা নতুন কিছু নয় । জন দাবীর প্রতি লক্ষ্য না করে দীর্ঘ দিন পৌর কর্তৃপক্ষ নিরব ভুমিকা পালন করলেও, নতুন পরিষদ জলাবদ্ধতা নিরসনে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ।
বছরের পর বছর চলছে এই জলাবদ্ধতা। মৌলভীবাজার শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন বিভিন্ন সময়ে মানবন্ধন সহ বিভিন্ন কর্মসুচী পালন করে তা নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে যথাযত দাবী জানিয়ে আসলেও, কাজের কাজ কিছুই হচ্ছেনা !
এ বিষয়ে জানতে মৌলভীবাজার
পৌরসভার মেয়র ফজলুর রহমানের সাথে মুঠো ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তবে পৌরসভার কাউন্সিলর মনবির রায় মঞ্জুর সাথে মুঠো ফোনে কথা হলে তিনি জানান, আমরা পৌর এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য কোদালী ছড়া খাল খনন মোস্তফাপুর থেকে নাজিরাবাদ ইউনিয়ন পর্যন্ত প্রকল্প গ্রহন করেছি।
যদি এ প্রকল্পের আওতায় কুদালী ছড়া খনন না করা হয় তাহলে শহরের জলাবদ্ধতা দুর করা সম্ভব নয়। শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনে আমাদের পৌরসভার অনেক শ্রমিক কাজ করছে। কিন্তু তাতে কাজ হচ্ছেনা কারন বিভিন্ন সড়কের ড্রেনে ময়লার স্থুপ থাকার কারনে পানি নিরসন হচ্ছে না, যার কারনে ড্রেনের উপর দিয়ে পানি গিয়ে মুল সড়কে বাহিত হচ্ছে। যে কারনে মুহুর্তের মধ্যে সড়ক গুলোও তলিয়ে যাচ্ছে।
সন্ধ্যায় স্থানীয় লোকজনের কাছে জানতে চাইলে অনেকে বলেন, “পৌর নির্বাচনের পূর্বে নাগরিক সুবিধার বহুমুখি প্রতিশ্রুতি দিলেও নির্বাচনের পর মেয়র সাহেব ভূলে যান। দুর্ভোগ পোহাতে হয় সাধারণ মৌলভীবাজারবাসীর। জলাবদ্ধতা দ্রুত সমাধান না হলে দুর্ভোগ আরো বাড়বে।”
কোদালী ছড়ার সংস্কার প্রসঙ্গ:
মোঃ আব্দুল কাইয়ুম: মৌলভীবাজারে ‘কোদালী ছড়া দখলমুক্ত ও দূষণমুক্ত করার দাবীতে মানববন্ধন কর্মসূচী পালণ ও জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেছে দূর্ণীতি মুক্তকরণ বাংলাদেশ যুব ফোরাম। সংগঠনটির জেলা
সভাপতি সৈয়দ মাইনুল ইসলাম রবিনের সভাপতিত্বে ও সাধারন সম্পাদক এম এ সামাদের সঞ্চালনায় আজ ২৫ এপ্রিল সোমবার সকাল ১০টায় শহরের চৌমোহনা চত্বরে ঘন্টাব্যাপী মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন- ফোরামের জেলা সভাপতি মাহমুদুর রহমান, সিনিয়র সহ-সভাপতি ও হিউম্যান রাইটস রিভিউ সোসাইটির জেলা সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক শ. ই. সরকার জবলু, সহ-সভাপতি ও মৌলভীবাজার অনলাইন প্রেসক্লাব সদস্য সচিব সাংবাদিক মতিউর রহমান, সহ-সাধারন সম্পাদক ও মৌলভীবাজার অনলাইন প্রেসক্লাব আহবায়ক সাংবাদিক মশাহিদ আহমদ, সাংগঠনিক সম্পাদক চিনু রঞ্জন তালুকদার, মৌলভীবাজার জেলা আদর্শ সমাজকল্যাণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক এসএম মুত্তাকিন আলী, দূর্ণীতি মুক্তকরণ বাংলাদেশ যুব ফোরামের জেলা সিনিয়র সহ-সভাপতি ইকবাল হোসেন পাবেল, সাধারন সম্পাদক এম এ সামাদ, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল কাইযুম, নোমান আহমদ প্রমুখসহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন, বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার নানা বয়সী মানুষ এ মানবন্ধনে অংশ গ্রহন করেন।
বক্তারা বলেন- মৌলভীবাজার শহরের পানি নিষ্কাষনের একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে কোদালী ছড়া। উজান থেকে মৌলভীবাজার শহরের মধ্য দিয়ে গিয়ে এ ছড়াটি হাইল হাওরে পতিত হয়েছে। পৌরসভা কর্তৃক পৌর এলাকায় পাকা ড্রেন নির্মানের পূর্ব পর্যন্ত সময়ে কোদালী ছড়াটি ছিল দূষণমুক্ত। সেসময় কোদালী ছড়ার পানি মানুষের প্রাত্যহিক নানা কাজে ব্যবহার উপযোগী ছিল। কিন্তু, পৌরসভা কর্তৃক পাকা ড্রেন নির্মানের পর থেকে কোদালী ছড়া দূষণ শুরু হয় এবং মাত্র বছরখানেকের মধ্যেই তা সম্পূর্ণ দূষিত হয়ে যায়। বর্তমানে কোদালী ছড়াটি বিষাক্ত এবং ময়লা, আবর্জনা ও মলমূত্রের ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। কোদালী ছড়ার বিষাক্ত দূর্গন্ধে এর সংলগ্ন উভয় তীরবর্তী এলাকায় বসবাসরত নাগরিকদের জীবন হয়ে পড়েছে বিপর্যস্ত। বক্তারা আরো বলেন- পৌরসভার সভ্য নাগরিকরা তাদের লেট্রিনের সেফটি ট্যাংকের পানি নিষ্কাষন এমনকি কিছু কিছু সভ্য নাগরিক সরাসরি তাদের মলমুত্র নিষ্কাষণ করছেন পৌরসভার নির্মিত পাকা ড্রেনগুলোতে। অন্যান্য ময়লা, আবর্জনা তো আছেই। কোদালী ছড়ার এ ময়লা, আবর্জনা ও মলমূত্রসহ বিষাক্ত পানি পতিত হয়ে প্রতিনিয়ত দূষিত হচ্ছে জেলার মৎস্যভান্ডারখ্যাত হাইল হাওর। এছাড়াও, গতিপথের বিভিন্ন এলাকায় কোদালী ছড়ার তীর এমনকি ছড়ার অংশও চলে গেছে ভূমিখেকো/নদীখেকোদের জবরদখলে। এমতাবস্থায়, অতি জরুরী ভিত্তিতে কোদালী ছড়াকে সংস্কার ও দূষণমুক্ত করা না হলে অচিরেই তা মৌলভীবাজারবাসীর বিশেষকরে পৌরবাসীর জন্য চরম অভিশাপ হিসাবে আবির্ভূত হবে। আর, সংস্কার ও দূষণমুক্ত করতে হলে, পৌরসভার পাকা ড্রেনে ময়লা, আবর্জনা, লেট্রিনের সেফটি ট্যাংকের পানি ও মলমুত্র নিষ্কাষণ করা থেকে পৌরসভার সভ্য নাগরিকদেরকে বিরত করতে হবে। প্রয়োজনে আইন করে হলেও তা করতে হবে। এরপর জবরদখলকারীদেরকে উচ্ছেদ এবং খননের মাধ্যমে সেটেলমেন্ট নক্সা অনুযায়ী গভীর, প্রশস্থ ও তীরের বাঁধকে শক্তিশালী করার মাধ্যমে কোদালী ছড়াকে সংস্কার করতে হবে। কোদালী ছড়া দূষণমুক্ত ও দখলমুক্ত করার দাবীটি মৌলভীবাজারবাসীর অনেকদিনের পুরনো ও যৌক্তিক দাবী। এ দাবী নিয়ে ইতিপূর্বেও বিভিন্ন কর্মসূচী পালণ করা হয়েছে। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় লেখালেখি হয়েছে একাধিকবার।
মৌলভীবাজার পৌরসভা নির্বাচনে ওয়ার্কাস পার্টির মেয়র পদপ্রার্থী কমরেড সৌমিত্র দেব তার নির্বাচনী ইশতেহারে এই বিষয়টি নিয়ে আলোকপাত করেছেন। সম্প্রতি মৌলভীবাজার শহরে জলাবদ্ধতা ও সমাধানের উপায় শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্টিত হয়েছে স্থানীয় একটি অভিজাত রেষ্টুরেন্টে । বাংলাদেশের ওয়ার্কাস পার্টি’র কমরেড সৌমিত্র দেব টিটু’র সভাপতিত্বে ও কমরেড আব্দুলকাইযুম এর সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন- ব্যাংক অফিসার্স এসোসিয়েশন মৌলভীবাজার এর সভাপতি এডভোকেট আবু তাহের। বিশেষ অতিথিহিসাবে উপস্থিত ছিলেন- বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দেলন(বাপার) জাতীয় পরিষদ সদস্য নাট্য সংগঠক আ.স.ম ছালেহ সোহেল। মৌলভীবাজার পৌরসভাসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বার বার আশার বাণী শোনালেও, কোদালী ছড়া দূষণমুক্ত ও দখলমুক্ত করা হয়নি আজও। তাই, মৌলভীবাজার শহরবাসী/পৌরবাসীর ও ইউনিয়ন বাসীর পরিবেশগত অস্তিতের¡ স্বার্থে সর্বোচ্চ জরুরী ভিত্তিতে কোদালী ছড়া দূষণমুক্ত, দখলমুক্ত, সংস্কার, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও সংরক্ষণের ব্যাপারে সর্বোচ্চ জরুরী ভিত্তিতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আশু দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। প্রায় ঘন্টাব্যাপি এ মানববন্ধন শেষে মিছিল সহকারে গিয়ে এ ব্যাপারে মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারক্ লিপি প্রদান করা হয়। (রেডটাইম বিডি থেকে)
(দূর্ণীতি মুক্তকরণ বাংলাদেশ যুবফোরাম, মৌলভীবাজারের ছবিখানা দেরিতে পাওয়ায় এই নিবন্ধের সাথে যুক্ত করে দেয়া হল।)