1. muktokotha@gmail.com : Harunur Rashid : Harunur Rashid
  2. isaque@hotmail.co.uk : Harun :
  3. harunurrashid@hotmail.com : Muktokotha :
পল্লীগীতি সম্রাট আব্বাস উদ্দীন - মুক্তকথা
রবিবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:৫৬ অপরাহ্ন

পল্লীগীতি সম্রাট আব্বাস উদ্দীন

সংবাদদাতা
  • প্রকাশকাল : বৃহস্পতিবার, ২৭ অক্টোবর, ২০১৬
  • ১১০৪ পড়া হয়েছে

440px-Abbasuddin_Fullহারুনূর রশীদ

লন্ডন, বৃহস্পতিবার
২৭শে অক্টোবর ২০১৬

আজ বৃহস্পতিবার ২৭শে অক্টোবর, কিংবদন্তীর সুর সাধক, ভাওয়াইয়া সুরের সম্রাট আব্বাস উদ্দীনের ১১৫তম জন্মদিবস।  ১৯০১ সালের এই দিনে বর্তমান ভারতের কোচবিহার জেলার তুফানগঞ্জ মহকুমার বলরামপুর গ্রামে এই ক্ষনজন্মা শিল্পীর জন্ম হয়।

আব্বাস উদ্দীন ছিলেন জন্মগায়ক। তার স্বর ও সুরে ছিল মানুষকে মোহিত করে দেয়ার এক বিরল ঐশী ঝিলিক। তার সঙ্গীত জীবনের সূচনায় ছিলনা কোন ওস্তাদ বা গুরুর তালিম। সঙ্গীতের প্রতি নিজের একাগ্রতা আর নিষ্ঠার সাথে তার অনুশীলনই তাকে ভাওয়াইয়া সুর শিল্পের তুঙ্গে পৌঁছে দিয়েছিল। তাইতো মানুষের কাছে তিনি ক্ষনজন্মা, পল্লীগীতির সুর সম্রাট! আব্বাস উদ্দীন তাই কালজয়ী। পল্লীগীতির মহাপুরুষ!

যাদুকরী সুরের অধিকারী মহান এই শিল্পীর জীবন বিষয়ে জানতে গিয়ে বিভিন্ন তথ্যসূত্র ঘাটিয়ে যতদূর জানা যায় তার বাল্যজীবনে তিনি যাত্রা, থিয়েটার ও স্কুল-কলেজের সংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গান শুনে শুনে গানের প্রতি আকৃষ্ট হন। হতেই পারে এমন আর এটিই হয়তো হবে। তবে আমাদের কাছে কেনো জানি মনে হয় তিনি জন্মসূত্রে সুর পেয়েছেন যা, তাকে নিয়ে যারা লিখেছেন তার কোথায়ও এমন ইঙ্গিত খুঁজে পাইনি। “ডেইলি সান” নামের একটি ‘অনলাইন’ সংবাদ মাধ্যম কালজয়ী এই  ভাওয়াইয়া সম্রাটকে নিয়ে লিখতে গিয়ে এক জায়গায় “gifted flair” শব্দটি ব্যবহার করেছে। এমন মায়াবী মোহনীয় স্বর আর সুর খুবই কম দেখা যায়। তার গলার মধুময় স্বর তার গীত সুরের জন্যই যেনো তাকে দেয়া হয়েছিল বলে মনে হয়। “আমায় এতো রাতে কেনো ডাক দিলি, প্রান কুকিলারে…” মানব মনের আবেগে ঝড় তুলা এসব গান আজও মানুষের মুখে শুনা যায়। এক অজানা মোহিনী সুরের ঐন্দ্রজালিক ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন আব্বাস উদ্দীন। অনুশীলনের মাধ্যমে নিজের মাঝে যা আছে তাকে ক্ষুরধার করা যায় কিন্তু এই “যা আছে” শব্দ কয়টির মাঝেই সকল রহস্য লুকিয়ে আছে। এই “যা আছে” অর্থাৎ কি নিয়ে একজনের জন্ম তারই ইংগিত করে। আর তাই, আমাদের কাছে, আব্বাস উদ্দীন জন্মেই পেয়েছিলেন পূর্বসূরি কারো মোহনীয় সুরশক্তি। শুধু তাই নয়, তিনি তাকে চিনতে পেরেছিলেনও বটে। নিজেকে চিনতে পেরেছিলন বলেই তিনি তার উত্তরণ ঘটাতে সক্ষম হয়েছিলেন। আর তাই তিনি ক্ষনজন্মা এক সুরসাধক।

বাল্যে কোন সুর শিক্ষকের কাছে যাবার সুযোগ তার হয়নি ঠিকই তবে কলকাতার জীবনে তিনি ওস্তাদ জমির উদ্দীন খাঁনের কাছে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত শিখেছেন। উইকিপিডিয়ায় যার নাম পাওয়া যায়নি তেমনি অপর একজন সঙ্গীত শিক্ষকের নাম পাওয়া গেল “ডেইলি সান” অনলাইন সংবাদ মাধ্যমে যার কাছে সুরের তালিম নিয়েছেন আব্বাস উদ্দীন আর তিনি ছিলেন মুর্শিদাবাদের উস্তাদ কাদের বক্স। উইকিপিডিয়া লিখেছে-“থিয়েটার ও স্কুল-কলেজের সংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গান শুনে তিনি গানের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েন এবং নিজ চেষ্টায় গান গাওয়া রপ্ত করেন।” আর ‘অনলাইন’ “ডেইলি সান” লিখেছে- “Abbasuddin earned fame during his school days through participation in musical soirees and cultural events.” এখানে অনুষ্ঠান শুনে আকৃষ্ট হওয়া এক কথা আর অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে যশঃখ্যাতি অর্জন সম্পূর্ণ ভিন্ন দু’টি কথা। এ পর্যায়ে আমরা আশা করবো, জীবনী বা ইতিহাস লেখকগন এসব বিষয়ে একটু খোঁজখবর নিয়ে লিখবেন, যাতে আমাদের মত পাঠককূল বিভ্রান্ত না হই এবং আমাদের উত্তরসূরিরা সত্য সঠিক ইতিহাসটি পড়তে পারে।

গীত গাইতে গিয়ে আব্বাস উদ্দীন সঙ্গীতের সকল ডালেই নিজের পদচিহ্ন আঁকতে সক্ষম হয়েছিলেন। তিনি জারি, সারি, ভাটিয়ালি, মুর্শিদি; বিচ্ছেদি, দেহতত্ত্ব, মর্সিয়া আর পালা গান কোনটাই তার বাদ যায়নি। এসব গানে সমানভাবেই তিনি জনপ্রিয় ছিলেন। তিনি তার দরদভরা সুরেলা চিকন কণ্ঠে পল্লি গানের সুরের যে উদাসীভাব ফুটিয়ে তুলতে পেরেছিলেন তা আজও অদ্বিতীয়।

আব্বাস উদ্দীন, বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম, কবি জসিম উদ্দীন ও কবি গোলাম মোস্তফার রচিত গানেও কন্ঠ দিয়েছেন। উইকিপিডিয়ায় পাওয়া যায় যে আব্বাস উদ্দিন ছিলেন প্রথম মুসলমান গায়ক যিনি আসল নাম ব্যবহার করে এইচ এম ভি থেকে গানের রেকর্ড বের করেছিলেন। রেকর্ডগুলো বাণিজ্যিকভাবে ভীষণ সফল হওয়ায় অন্যান্য হিন্দু ধর্মের গায়করা মুসলমান ছদ্মনাম ধারণ করে গান করতে শুরু করেছিল।

আব্বাস উদ্দীনের চাকুরী জীবনও ছিল। উইকিপিডিয়ায় আমরা দেখতে পাই, তিনি প্রথমে কলকাতার রাইটার্স বিল্ডিংয়ে ডিপিআই অফিসে অস্থায়ী পদে এবং পরে কৃষি দপ্তরে স্থায়ী পদে কেরানির চাকরি করেন। এ কে ফজলুল হকের মন্ত্রীত্বের সময় তিনি রেকর্ডিং এক্সপার্ট হিসেবে সরকারি চাকরিতে প্রবেশ করেন। চল্লিশের দশকে আব্বাস উদ্দিনের গান পাকিস্তান আন্দোলনের পক্ষে মুসলিম জনতার সমর্থন আদায়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। দেশ বিভাগের পর (১৯৪৭ সালে) ঢাকায় এসে তিনি সরকারের প্রচার দপ্তরে “এডিশনাল সং অর্গানাইজার” হিসেবে চাকরি করেন। পাকিস্তানের প্রতিনিধি হিসেবে ১৯৫৫ সালে ম্যানিলায় দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় সঙ্গীত সম্মেলন, ১৯৫৬ সালে জার্মানিতে আন্তর্জাতিক লোকসংগীত সম্মেলন এবং ১৯৫৭ সালে রেঙ্গুনে প্রবাসী বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলনে তিনি যোগদান করেন।

আব্বাস উদ্দীনের বাবা জাফর আলী আহমদ ছিলেন তুফানগঞ্জ আদালতের একজন আইন ব্যবসায়ী। সঙ্গীতের জগতে আব্বাস উদ্দীনের অসাধারণ কৃতিত্ব আর অমূল্য অবদানের জন্য ১৯৬০ সালে তিনি “প্রাইড অব পারফরমেন্স এওয়ার্ড” প্রাপ্ত হন। ১৯৭৯ সালে পান “শিল্পকলা একাডেমী পুরস্কার” আর ১৯৮১ সালে পেয়েছিলেন  “স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার”। মানুষের ভালবাসা ছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক সকল অর্জনই বা খ্যাতি তার এসেছিল মৃত্যুর পর। তিনি ১৯৫৯ সালের ৩০শে ডিসেম্বর পরলোকগমন করেন।

এ জাতীয় সংবাদ

তারকা বিনোদন ২ গীতাঞ্জলী মিশ্র

বাংলা দেশের পাখী

বাংগালী জীবন ও মূল ধারার সংস্কৃতি

আসছে কিছু দেখতে থাকুন

© All rights reserved © 2021 muktokotha
Customized BY KINE IT