অযাচিত অনাকাঙ্ক্ষিত বেদনাবহ ঘটনাই দুর্ঘটনা। বিভিন্ন ধরনের দুর্ঘটনা আছে। কিন্তু সড়ক দুর্ঘটনা এখন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতি দিন খবরের কাগজ হাতে নিলেই দেখবেন কোথাওনা কোথায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ও আহত হওয়ার দুঃসংবাদ। এমন কোন দিন বাদ নেই যে সড়ক দুর্ঘটনায় মানুষ মারা যাচ্ছে না। সড়ক দুর্ঘটনার মাত্রা এখন এমন এক পর্যায়ে এসে দাড়িয়েছে যে রীতিমত জাতীয় সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে। এই সমস্যা কিন্তু এক দিনে সৃষ্টি হয়নি। এই সমস্যা অনেক অনেক আগ থেকেই চলে আসছে। সূচনাতে তেমন তীব্র ছিল না। সহনীয় মাত্রায় ছিল। কালে কালে সমস্যাটি জমে জমে এখন ভয়ঙ্কর আকার ধারন করেছে।
এখন সড়ক ও মহাসড়কে যানবাহন ও যাত্রীসংখ্যা এমন বিপুল হারে বৃদ্ধি পেয়েছে যে আমাদের সড়ক সেবাখাত অনেক অনেক পেছনে রয়ে গেছে। ঐ সময় কিন্তু কেউই বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখেননি। ভাবার সময় গুরুত্ব দিয়ে ভাবেননি। সবাই তখন সড়ক, মহাসড়কের ফুটপাত দখলে মত্ত ছিলেন। স্বাধীনতা পূর্ব এই সব সড়ক যে অবস্থায় ছিল স্বাধীনতার এত বছর পরও একই অবস্থায় আছে কোন পরিবর্তন হয় নি। বরঞ্চ ভূমি দস্যুরা বার বার সড়কের ফুটপাত জবর দখল করে সড়ক ক্রমশঃ সংকুচিত করেছে, এতে পথচারীরা বাধ্য হয়ে ফুটপাত ছেড়ে মূল রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। ফলে দুর্ঘটনা ঘটেই যাচ্ছে।
আমাদের শহরের কোর্ট রোডস্থ সড়কের প্রায় তিন শতক পরিমান ফুটপাত জবর দখল করে দোকান কোটা নির্মান করে ভাড়া দেয়া হয়েছে। অনুরুপ ভাবে এই শহরে আরও প্রায় অর্ধশতক পরিমান ফুটপাত জবর দখলে আছে। এই সব জবর দখল উচ্ছেদের ব্যাপারে কাহারও কোন উদ্যোগ নেই। ফুটপাত দখল মুক্ত করার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে বলা হয় যে, এরা খুব প্রভাবশালী লোক!
কোন স্বাধীন দেশে প্রভাবশালী বলে কোন শব্দ থাকতে পারে না। সড়ক দুর্ঘটনার প্রসঙ্গ আসলেই এক তরফা ভাবে গাড়ীর চালক ও মালিকের ঘাঁড়ে দোষ চাপিয়ে দিয়ে রতি- মহারতিরা ভাল মানুষ সাজার চেষ্টা করেন। নিরাপদ সড়ক করতে হলে প্রভাবশালী হওয়ার মানসিকতা ত্যাগ করে সুশীল চিন্তা নিয়ে কিছু কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে। সড়ক পরিবহনের সাথে জড়িত একজন বিদগ্ধ সুশীল নাগরীকের মতে, গাড়ীর চালকদের নূন্যতম শিক্ষা থাকতে হবে। চালকদের প্রশিক্ষন দিতে হবে। ত্রুটিপূর্ণ গাড়ী রাস্থায় নামানো নিষিদ্ধ করতে হবে। অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই, মাল বোঝাই করা নিষিদ্ধ করতে হবে। ট্রাফিক পুলিশের উপরি কর আদায় বন্ধ করতে হবে। গাড়ীর মালিক ও পরিবহন শ্রমিকদের আইনের বিষয়ে জ্ঞাত ও শ্রদ্ধাশীল হওয়ার জন্য ধারাবাহিক প্রশিক্ষনধর্মী বৈঠক চালিয়ে যেতে হবে। দুর্ঘটনার কারণ সনাক্তকরণে দীর্ঘমেয়াদি পথ পরিহার করে স্বল্পসময়ে সঠিক কারণ সনাক্ত করার ব্যবস্থা নিতে হবে। এ লক্ষ্যে অত্যাধুনিক বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার বাড়াতে হবে। কারণের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের প্রশিক্ষন ও সচেতনকরণের পাশাপাশি শাস্তিযোগ্যদের শাস্তির বিষয় নিশ্চিত করতে হবে। গাড়ী চলন্ত অবস্থায় মোবাইল ফোন ব্যবহারে বিধিনিষেধ আনতে হবে। যথাযথ স্থানে জেবরা ক্রসিং ও স্পিড ব্রেকার দিতে হবে এবং দেশের সকল ফুটপাত পর্যায়ক্রমে দখল মুক্ত করতে হবে। উল্লেখিত বিষয় গুলি বাস্তবায়ন করা খুব যে ব্যয়বহুল বা বিশাল কোন বিজ্ঞানের পাঠ নেয়া তা নয়। প্রয়োজন সদ্দিচ্ছার। এই সদিচ্ছা নিয়ে এগিয়ে আসলে সড়ক দূর্ঘটনার হার কমে আসবে এবং অকাল মৃত্যুর হাত থেকে দেশবরন্য ব্যক্তি, কোমলমতি শিক্ষার্থী ও সাধারন মানুষ রক্ষা পাবে। এটি নিশ্চিত করে বলা যায়।