বাংলাদেশ আগর অ্যান্ড আতর ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের তথ্যমতে, ২০১৯ সালে বৈধ ও লাগেজ পথে জেলা থেকে সাত হাজার লিটার আতর বিদেশে পাঠানো হয়েছে। প্রতি লিটারের গড় দাম ছয় লাখ টাকা হিসেবে যার বাজার মূল্য প্রায় ৪২০ কোটি টাকা। অন্যদিকে, আগর কাঠ রপ্তানি হয় প্রায় ১০ হাজার কেজি। যার বাজার মূল্য প্রায় ২০০ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ আগর অ্যান্ড আতর ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আনসারুল হক জানান, বৈধ পথে যে পরিমাণ আতর রপ্তানি হয়, তারচেয়ে বড় অংশ চলে যায় বিভিন্ন যাত্রীদের লাগেজে করে। বছরে আনুমানিক সাত হাজার লিটার আতর এবং ১০ হাজার কেজি কাঠ রপ্তানি হয়। তবে এর সরকারি কোনো হিসেব নেই। এমনকি রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর কাছেও এ সম্পর্কিত পর্যাপ্ত কোন তথ্য নেই।
তিনি বলেন, সম্ভাবনাময় এই শিল্প ‘চলতি বছর করোনার কারণে আগর তেমন রপ্তানি করা যায়নি। করোনার কারণে বিশ্বব্যাপী যে অর্থনৈতিক মন্দা তৈরি হয়েছে, তাতে বিমান চলাচল স্বাভাবিক হলেও বিলাসবহুল এই পণ্য বিক্রিতে মানুষের আগ্রহ কতটা থাকবে, সে ব্যাপারে তিনি সন্দেহ প্রকাশ করেন।
গত বছর তিনি নিজেই বিদেশে আগর আতর পাঠিয়েছেন প্রায় ৩০ লিটার। কিন্তু এই বছর বিভিন্নভাবে সামান্য পাঠাতে পারলেও তা গত বছরের তুলনায় নগণ্য। এছাড়াও তিনি জানান,আগর-আতর শিল্পের সাথে জড়িত ব্যবসায়ীরা ইনকাম ট্যাক্স এর নামে কিছু অসাধু সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীর হয়রানীর কারেণে অনেকেই আগর উৎপাদনে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন।
আগর আতর উৎপাদনে দীর্ঘদিন ধরে জড়িত ব্যবসায়ী সুজানগর পারফিউমারি কোম্পানির পরিচালক আব্দুল কুদ্দুস জানান, ২০১৯ সাল থেকে মধ্যপ্রাচ্যের বাজারে আগর-আতরের চাহিদা কমতে শুরু করে। ২০২০ সালে মার্চ মাস থেকে করোনা পরিস্থিতি শুরু হলে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে আগর-আতর চাহিদা একবারে কমে যায়। যে কারণে তরল আতর রপ্তানী প্রায় শুন্যের কৌটায় নেমে আসে। তার কারখায় উৎপাদিত প্রায় দুই কোটি টাকা মূল্যের আগরকাঠ ও আতর পড়ে আছে। বর্তমানে তার ফেক্টরী থেকে কাতারে শুধু আগরকাঠ যাচ্ছে।
আব্দুল কুদ্দুস আরও জানান করোনাকালীন সময়ে ব্যক্তি মালিকানাধীন আগরগাছ চুরি বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ছাড়াও তিনি জানান, ২০১৩ সালে আগর-আতরকে শিল্প হিসেবে ঘোষণা করা হলেও এখনও তাদের বাণিজ্যিক হারে গ্যাসবিলের টাকা পরিশোধ করতে হচ্ছে। নতুন করে দেয়া হচ্ছেনা গ্যাসের সংযোগ। এছাড়াও বাড়ির আঙ্গিনায় নিজেদের লাগানো পরিপক্ষ আগরগাছের সংখ্যা কমে আসায় সামাজিক বনায়নের আগরগাছ দ্রুত অকশনের দাবী করেন।
মৌলভীবাজার বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোঃ রেজাউল করিম চৌধুরী জানান, আগর-আতর একটি সম্বাবনাময় শিল্প, এ অঞ্চলের আগর গাছ থেকে উৎপাদিত আতর বিদেশে রপ্তানি হয়ে থাকে। চলতি বছরে করোনার কারণে কিছু সমস্যায় পড়েছে শিল্পটি। আগর-আতর রপ্তানির ক্ষেত্রে সাইটিস সনদ প্রায় ১ মাস লেগে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, স্থানীয় বনবিভাগ আবেদন যাছাই বাছাই করে দ্রুত ঢাকাস্থ প্রধান কার্যালয়ে পাঠিয়ে দেয়। তিনি সাইটিস সনদ দ্রুত পাওয়ার ব্যাপারে প্রধান কার্যালয়ে যোগাযোগ করে এ ব্যাপারে উদ্যেগ নেয়ার কথা জানান।
মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান বলেন, আগর আতরের নতুন নতুন বাজার তৈরি করার জন্য, বিশেষ করে ইউরোপের বাজার ধরার জন্য আমরা উদ্যোগ নিয়েছি। এ ছাড়া ব্যবসায়ীদের যে সকল প্রতিবন্ধকতা রয়েছে, সেগুলো সমাধানের বিষয়েও আমরা কাজ করছি।
তিনি আরও বলেন, করোনাকালে তারা যে সমস্যায় পড়েছেন, তা নিয়ে গুরুত্ব সহকারে শিল্প মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হয়েছে। সম্প্রতি মন্ত্রণালয় থেকে টিম এসে সরেজমিন পরিদর্শন করে গেছেন।
বাড়ির আঙিনায়, রাস্তার পাশে, পতিত জমি, টিলার ঢালে, টিলা বা পাহাড়ে এমনকি পরিত্যক্ত জায়গায় আগর গাছ লাগানো যায়। পাহাড় বা টিলা জমিতে আগর গাছ ভালো জন্মে। তবে সব জমিতেই কমবেশি জন্মে।
সম্বাবনাময়ী আগর শিল্পের সাথে জড়িতদের দাবী নতুন করে সামাজিক বনায়নে আগরগাছ লাগানো বৃদ্ধি ও সামাজিক বনায়নের আগরগাছ দ্রুত অকশন, আতর পরীক্ষাগার স্থাপন, বাংলাদেশ বিমানে বহনের (কোটা ভিত্তিক) সুবিধেসহ নতুন করে গ্যাস সংযোগ দেয়া হলে রপ্তানীমুখি এ শিল্প দেশের অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য ভুমিকা রাখবে।
এছাড়াও চলমান করোনা পরিস্থিতিতে আগর-আতর রপ্তানি বন্ধ থাকায় এ শিল্পের সাথে জড়িতরা বেকার হয়ে পড়েছেন। তারা নতুন করে পুঁজি বিনিয়োগ করতে পারছেন না। আবার ছোট ছোট ব্যবসায়ীরা রপ্তানি করতে না পেরে আর্থিক সংকটের কারণে বড় বড় ব্যবসায়ীদের কাছে কম দামে বিক্রি করে দিচ্ছেন।
এ অবস্থায় শিল্পটি রক্ষায় সহজ শর্তে ঋণ প্রদানের দাবি জানিয়েছেন আগর-আতর শিল্পের সাথে জড়িতরা।
|