মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে এবারের পবিত্র ঈদুল আজহারের ছুটিতে কাঙ্খিত পর্যটক আসেননি। টানা ৬ দিন ছুটি থাকায় পর্যটক বরণের জন্য আগে থেকেই প্রস্তুত করা হয়েছিল উপজেলার হোটেল, মোটেল, ইকো রিসোর্ট ও গেস্ট হাউজগুলো। কুরবানির ঈদ ও বৃষ্টি থাকায় পর্যটক কম এসেছেন বলে পর্যটক সংশ্লিষ্টরা জানান। ঈদের দীর্ঘ ছুটিতে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে এবার নেই চিরচেনা দৃশ্য।
সরেজমিনে উপজেলার প্রধান পর্যটন কেন্দ্র লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান ঘুরে এবং খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে- সাধারণ ছুটির দিনের চেয়েও এবারের ঈদে লাউয়াছড়ায় পর্যটক সংখ্যা অনেক কম। এছাড়া মাধবপুর লেক, বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহি হামিদুর রহমান স্মৃতি কমপ্লেক্স ও সবুজ চা বাগানে দেখা যায়, ঈদের দিন পর্যটকের সংখ্যা কম থাকলেও এর পরেরদিন শুক্রবারে কিছু পর্যটক এসেছেন। শনিবারে সারাদিন বৃষ্টি হওয়ায় পর্যটকের সংখ্যা একেবারে কম দেখা যায়। তবে যেসব পর্যটক ঘুরতে এসেছেন এদের মধ্যে বেশিরভাগই স্থানীয় পর্যটক।
লাউয়াছড়া টিকেট কাউন্টারের দায়িত্বে থাকা শাহীন মাহমুদ বলেন- অন্যান্য বছরের তুলনায় ঈদের এই দুইদিন লাউয়াছড়ায় পর্যটকের সংখ্যা খুবই কম। অন্য সময় যেভাবে ভিড় থাকে এখন সে ভিড় নেই। যারা এসেছেন এরমধ্যে স্থানীয় পর্যটকের সংখ্যা বেশী। বাইরের পর্যটক কম এসেছে। ঈদের দিন বিদেশী পর্যটকসহ ২৯৪ জন, রাশিয়ান পর্যটক ছিলেন ২৭ জন। রাজস্ব আয় হয়েছে ২৬,০০০ টাকা। পরের দিন শুক্রবারে ১ হাজার ২০০ জন। রাজস্ব আয় হয়েছে ৫৫,৯৮২ টাকা ও শনিবার ৯৩২ জন দেশি-বিদেশি পর্যটক লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে প্রবেশ করেছেন। রাজস্ব আয় হয়েছে প্রায় ৫০,০০০ টাকা। শাহীন মাহমুদ বলেন- অন্যান্য সময় ঈদের মৌসুমে লাউয়াছড়ায় প্রতিদিন কমপক্ষে তিন থেকে পাঁচ হাজার পর্যটক প্রবেশ করেন। সে তুলনায় বর্তমান এই সংখ্যা খুবই কম।
কমলগঞ্জের বনগাঁও অরণ্যনিবাস ইকো রিসোর্টের পরিচালক মো. এহ্সান কবির সবুজ বলেন, এবারে ঈদে গত ঈদের তুলনায় অর্ধেক রুম বুকিং হয়েছে। অতি বৃষ্টি ও বিভিন্ন কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা থাকায় বাহিরের পর্যটক কম এসেছে। বিভিন্ন ছাড় দেওয়ার পরেও পর্যটকদের সাড়া নেই।
ঈদের ৩য় দিন শনিবার সকাল থেকে বৃষ্টি শুরু হওয়ায় দুপুর পর্যন্ত পর্যটনস্থানগুলো মানব শূন্য ছিল। ছুটি শেষ হয়ে যাওয়ায় পর্যটকরা বিভিন্ন পরিবহনে করে লাউয়াছড়া ত্যাগ করতে দেখা যায়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসা শিক্ষিকা রুসনা বেগম বলেন, ঈদের ছুটিতে পরিবারের সবাইকে সময় দেওয়া যায়। তাই ঈদের ২য় দিন লাউয়াছড়া আসলাম। যদিও কয়েক বছর আগেও একবার শীতকালে এসেছিলাম, আশা ছিলো এইবার নতুনত্ব কিছু পাবো, কিন্তু পেলাম না। নরসিংদী থেকে ঘুরতে আসা পর্যটক ব্যবসায়ী নাসির আহমদ বলেন, বৃষ্টির জন্য ঘুরে বেড়াতে সমস্যা হচ্ছে। হোটেল থেকে বিকেলে ঘুরতে এসেছি লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে। হবিগঞ্জ থেকে পরিবার নিয়ে ঘুরতে এসেছেন ডা: আব্দুল খালিক। তিনি বলেন, ঈদের ছুটি শুরুর পরের দিন ট্রেনে করে আমরা ভানুগাছ আসি। আসার দিন থেকে প্রতিদিন বৃষ্টি হচ্ছে এখানে। সবুজ প্রকৃতির মাঝে বৃষ্টি উপভোগ করছি। দর্শনীয় স্থানগুলো ঘুরে দেখছি। বৃষ্টির কারণে সাময়িক সুবিধা হলেও প্রকৃতির সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে পেরেছি।
ট্যুরিস্ট পুলিশ দায়িত্বে থাকা পুলিশ পরিদর্শক প্রবাল সিনহা বলেন- লাউয়াছড়ায় সাধারণ সময়ে যে ভিড় থাকে ঈদের ছুটিতে এইদুইদিন ভিড় নেই বললেই চলে। রাস্তাও ছিল ফাঁকা। তিনি বলেন- হয়তো দু’একদিন মধ্যে পর্যটকের সংখ্যা বাড়তে পারে।
কমলগঞ্জ জীববৈচিত্র্য রক্ষা কমিটির সভাপতি মনজুর আহমেদ মান্নার মতে মূলত টানা বৃষ্টির কারণে কমলগঞ্জে পর্যটক কম এসেছেন। এদিকে লাউয়াছড়া সংরক্ষিত জাতীয় উদ্যানে পর্যটশূন্যতাকে আশীর্বাদ হিসেবে দেখছেন পরিবেশ ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষকেরা। তারা মনে করেন সংরক্ষিত বনে পর্যটকের উপস্থিতি কম মানে জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি কম হবে। বনের বাসিন্দা পশুপাখি কম উত্যক্ত হবে। তারা ভালো থাকবে।
কমলগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ সঞ্জয় চক্রবর্তী বলেন, পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য টুরিস্ট পুলিশের পাশাপাশি কমলগঞ্জ থানা পুলিশ কাজ করছে। তবে গত ঈদের তুলনায় এবছর পর্যটক অনেক কম এসেছেন।