রাজনীতিবিদগন যখন অভিবাসনের বিষয়ে নেতিবাচক কথা বলেন, লেখা-পড়ায় বা গবেষণায় কিন্তু পাওয়া যায় তার পুরো উল্টো ছবি। অভিবাসীরা গড়পরতা উচ্চ দক্ষতার মানুষ, যৌক্তিকভাবেই দেশের অর্থনীতিতে স্বার্থক অবদান রাখছে এবং ঘরবাড়ীর জন্য স্থানীয়দের সাথে তাদের কোনরূপ দ্বন্ধ সংঘাত নেই। সবচেয়ে বড় কথা যে সাম্প্রতিক অভিবাসনের এতো বড় ঢেউয়ের পরও দেশের কোথায়ও অপরাধ মাত্রাতিরিক্ত বেড়েছে এমন কোন নজিরই নেই। তবে, এক্ষেত্রে আসল বিপদ হলো, এই অভিবাসন বিতর্ক এক সময় খুবই তিক্ততায় চলে যেতে পারে এবং অনাকাংঙ্খিত জায়গায় তার প্রভাব দেখা দিতে পারে। এভাবেই লিখেছেন এসেক্স বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানের প্রভাষক ড. নেলি দেমিরেভা।
তিনি লিখেছেন- “অভিবাসন বিতর্ক অবিরত ধারায় খুবই ক্ষিপ্রতার সাথে এদেশকে আচ্ছন্ন করেই চলেছে। এই অভিবাসন বিষয় দেশের অর্থনৈতিক উদ্বিগ্নতার সাথে এক হয়ে অগ্নিউদ্গীরণ করে চলেছে। আর এ কাজে শুধু ইউকেআইপি নয়, রক্ষনশীলদেরও একটি মতিভ্রমি অংশ কাজ করে যাচ্ছে।
উদাহরণ টেনে এনে তিনি লিখেছেন অদক্ষ অভিবাসি জনশক্তির ঢেউ একদিকে আর এদেশের “ওয়েলফেয়ার সিস্টেম” অন্যদিকে। কিন্তু হাল-আমলের কিছু কাগজাত পর্যালোচনায় দেখা যায় ওই ভয় একেবারেই অযথা আর অতিকথন।
ইউরোপের অন্যান্য দেশের অভিবাসিদের থেকে যুক্তরাজ্যের অভিবাসিগন আনুপাতিক হারে উচ্চ মাত্রার দক্ষতা সম্পন্ন।
খৃষ্টিয়ান ডাস্টমেন ও টমাসো ফ্রাতিনি লিখিতভাবে কাগজপত্রে দেখিয়েছেন যে যুক্তরাজ্যে শিক্ষার গড়পরতা মাত্রা অভিবাসি পরিবার গুলোর মাঝে ভাল ও অধিক এবং তা ধারাবাহিকভাবেই চলে আসছে। ২০০০ সাল থেকে এ পর্যন্ত নবাগত অভিবাসিগন এ মাত্রাকে আরো বাড়িয়ে নিয়ে গেছে।
চাকুরী হারের ক্ষেত্রে স্থানীয় অধিবাসীদের চেয়ে অভিবাসিদের কোন অংশেই কম নয় বরং সমানে সমান। তবে হ্যাঁ, রিফিউজি আর শ্রমঅভিবাসি একটি বিষয় হতে পারে। হতে পারে ইউরোপীয়ান অর্থনৈতিক এলাকা অথবা এর বাহিরের এলাকার অভিবাসিদের নিয়ে। যাই হোক, অভিবাসিশ্রমিকদের গড় নকশা সন্তুষজনক এবং “রিফিউজি” বিতর্ককে অভিবাসিদের সাথে এক করে মিশিয়ে দেখা ঠিক হবেনা।
যুক্তরাজ্যে অভিবাসিদের অর্থনৈতিক অবদান এবং সে অনুপাতে কল্যাণীভাতা গ্রহনের চিত্র খুবই পরিমিত দেশীয় জনগোষ্ঠীর অনুপাতে। কল্যাণভাতা গ্রহনকারীদের পরিমাণ মাত্র শতকরা ৬.৪ যুক্তরাজ্যের বাইরের অধিবাসী।
এই হারেও যথেষ্ট তারতম্য আছে কল্যাণভাতার নমুনার তারতম্যের কারণে। কাজখোঁজা মানুষের পরিমান শতকরা ৮.৫ যুক্তরাজ্যের বাহিরের। খুবই উল্লেখযোগ্য যে এই পরিমাণ যারা প্রথম তালিকাভুক্ত হয়েছিলেন পরে কিন্তু এদের শতকরা ৫৪ ভাগ বৃটিশ নাগরীকত্ব নিয়ে নেয়। বাকী যারা তারাও কোন না কোন রূপে সরকারী ভাতা দাবীর যোগ্যতা করে নেয়। গত ৫ বছরের হিসাবে যুক্তরাজ্যে নতুন অভিবাসী যারা সরকারী ঘর-বাড়ী দাবী করেছে সেই লোকজনের সংখ্যাও শতকরা ২ভাগ মাত্র। এই ঘর-বাড়ী দাবীকারী শতকরা ৯০ ভাগই যুক্তরাজ্যে জন্মগ্রহনকারী।
নবাগত অভিবাসিদের অধিকাংশই যারা সরকারী বাড়ী পেয়েছে তারা ‘রিফিউজি’ যাদের যুক্তরাজ্যে থাকার অনুমতি মঞ্জুর করা হয়েছে এবং এদের সংখ্যা খুবই নগন্য।
দেশান্তরীদের আগমনে দেশে অপরাধের সংখ্যা কোন একটি মাত্রায় বেড়ে গিয়েছে এমন কোন তথ্য প্রমাণ কোথায়ও নেই। উপরন্তু যেসমূহ এলাকায় দেশান্তরী অভিবাসিরা আশ্রয় নিয়েছে সেইসব এলাকায় সম্পদ সংক্রান্ত অপরাধ কমেছে।
২০০৮ সালে “এসোসিয়েশন অব চীফ পুলিশ অফিসারস”(এসিপিও) কর্তৃক পরিচালিত এক জরিপে পূর্ব ইউরোপীয়ান অভিবাসিগন কর্তৃক কোন অপরাধ সংগঠনের কোন হদিসই পাওয়া যায়নি।
তিনি আরো লিখেছেন ১০ লাখেরও বেশী বৃটিশ মানুষের বাড়ী রয়েছে স্পেনের উপকূল এলাকায়। ফলে বৃটিশ এই অবসরপ্রাপ্তরা অন্য ইইউ সদস্য রাষ্ট্রের কল্যাণভাতার ক্ষেত্রে কি হুমকির সৃষ্টি করতে পারে তা সহজেই অনুমেয়। দেশান্তর সবসময়ই একটি জটিল বিতর্কিত বিষয় যা খুব নাজুক ও সতর্কতামূলক ব্যাখ্যার দাবী রাখে।
(ড. নেলি দেমিরেভার লেখা অবলম্বনে অনুবাদ-হারুনূর রশীদ)