মৌলভীবাজারের সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রী এম সাইফুর রহমান’র ১৪তম শাহাদত বার্ষিকী পালিত হয়েছে। এ উপলক্ষে নানা কর্মসূচী পালন করেছে এম সাইফুর রহমান স্মৃতি পরিষদ, মরহুমের পরিবার, বিএনপি ও সহযোগী সংগঠন।
এ উপলক্ষে মঙ্গলবার স্মৃতি পরিষদ ও মরহুমের পরিবারের পক্ষ থেকে তাঁর গ্রামের বাড়ি সদর উপজেলার বাহারমর্দনে কোরান খতম, মরহুমের কবরে পুস্পস্তবক অর্পণের মধ্যদিয়ে শ্রদ্ধা জানানো, যোহরের নামাজের পর মিলাদ, দোয়া ও শিরণী বিতরণ করা হয়।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন এম সাইফুর রহমানের পুত্র বিএনপির নির্বাহী সদস্য, জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য এম নাসের রহমান সহ পরিবারের সদস্য ও বিএনপির নেতৃবৃন্দ।
এদিনই বিকেল ৫ টায় সদর উপজেলার নিতেশ্বর এলাকায় অবস্থিত পাঁচ তারকা মানের দুসাই রিসোর্টের সামনে এম সাইফুর রহমান স্মৃতি যাদুঘরের ভিত্তি স্থাপনের উদ্বোধন করা হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির সভাপতি এম নাসের রহমানসহ বিএনপির নেতা কর্মীরা।
উল্লেখ্য ২০০৯ সালের ৫ সেপ্টেম্বর এম সাইফুর রহমান মৌলভীবাজারের নিজ বাড়ি বাহারমর্দন থেকে ঢাকায় যাওয়ার সময় ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলার ঢাকা-সিলেট মহা সড়কের খড়িয়ালা নামক স্থানে এক মর্মান্তিক সড়ক দূর্ঘটনায় পানিতে ডুবে শাহাদত বরণ করেন।
এম সাইফুর রহমান বানিজ্য মন্ত্রী, একাধিকবার অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী হিসেবে ১২ টি বাজেট পেশ করেছেন। এছাড়াও তিনি ভ্যাটের প্রবর্তক ছিলেন।
মরহুম এম সাইফুর রহমান কর্মময় জীবনে তার অনন্য গুণে মানুষের হৃদয়ে ঠাঁই করে নিয়ে ছিলেন। তার সাদামাঠা ব্যক্তিগত জীবন মানুষের দৃষ্টি কাড়ত। ছিল না চাওয়া পাওয়ার অস্থিরতা।
এমনকি উচ্চ আকাঙ্খা উচ্চ বিলাসিতাও পচন্দ ছিলনা তার। কথা বলতেন মারপ্যাচের জটিলতা ছাড়াই সরল সহজ আর ইংরেজী মিশ্রিত আঞ্চলিকতায়। একারনেই দেশ বিদেশে সকল শ্রেণীর মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা ছিল তাঁর। দেশ দুনিয়ায় নাম কুড়ানো মৌলভীবাজারের বাহারমর্দনের সেই ছেলেটি দেশের অন্যতম অর্থমন্ত্রী যিনি একনাঘাড়ে ১২ বার সংসদে বেশ সফলতার সাথে বাজেট পেশ করেছেন। কর্মে তাঁর অনন্য গুণ তিনি উন্নয়নের যে স্বপ্ন দেখতেন তা বাস্তবায়নও করতেন।
এটাই তার অবিচল আস্থা বিশ্বাস আর কাজের প্রতি নিখাঁদ আন্তরিকতা ও কর্তব্যকর্মে দ্বায়িত্বশীলতার নজির। নিজ জন্মস্থান মৌলভীবাজার সহ পুরো সিলেট বিভাগেই রয়েছে তার চোখ ধাধাঁনো উন্নয়নের চোঁয়া।
সংক্ষিপ্ত জীবনী: জন্ম ১৯৩২ খ্রীষ্টাব্দের ৬ অক্টোবর, মৌলভীবাজার সদর উপজেলার বাহারমর্দনে। তার পিতা মোহাম্মদ আব্দুল বাছির, মাতা তালেবুন নেছা। ৩ ভাইয়ের মধ্যে সবার বড় ছিলেন তিনি, মাত্র ৬ বছর বয়সে তাঁর পিতা মারা যান। সে সময়ে তাঁর অভিভাবকক্ত গ্রহণ করেন চাচা মোহাম্মদ সফি।
শিক্ষাজীবন, গ্রামের মক্তব ও পাঠশালা শেষ করে তিনি ১৯৪০সালে জগৎসী গোপালকৃষ্ণ উচ্চ ইংরেজী বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। এরপর ১৯৪৯সালে কৃতিত্বের সাথে মেট্রিকুলেশনে উর্ত্তীণ হন। সিলেটের এমসি কলেজ থেকে আইকম পাশ করে ১৯৫১ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৯৫৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রাজুয়েশন ডিগ্রী অর্জন করেন। এরপর তিনি ব্যারীস্টারী পড়ার জন্য লন্ডনে চলে যান সেখানে পৌঁছার পর মত পাল্টে ব্যারিষ্টারীর পরিবর্তে পড়েন চার্টার্ড একাউন্টেন্সি। ১৯৫৩-৫৮ সময়কালে পড়াশোনার পর ১৯৫৯ সালে ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড একাউন্ট্যান্টস ইংল্যান্ড এন্ড ওয়েলস ফেলোশীপ অর্জন করেন। এছাড়া তিনি আর্থিক ও মুদ্রানীতি এবং উন্নয়ন অর্থনীতিতে বিশেষায়িত শিক্ষা গ্রহণ করেন।
বিবাহঃ ১৯৬০ সালের ১৫ জুলাই বেগম দূররে সামাদ রহমানের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তিনি ৩ পুত্র ও এক কন্যা সন্তানের জনক। ২০০৩ সালে তার স্ত্রী দুররে সামাদ শেষ নিঃশ্বাসন ত্যাগ করেন।
২০০৯ সালের ৫ সেপ্টেম্বর তিনি এক মর্মান্তিক সড়ক র্দূঘটনায় শাহাদত বরণ করেন। তার শেষ ইচ্চানুযায়ী বাহারমর্দনে তাকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)র’ প্রতিষ্টা লগ্নে দলটির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান আহ্বান জানালে জাতীর কল্যাণে নিবেদীত হয়ে রাজনীতিতে এসেছিলেন এবং নিজেকে আলোকিত করার পাশাপাশি দেশ, জাতি ও নিজের এলাকাকে আলোকিত করে গেছেন।
১৯৯৬ সালে ষষ্ট ও সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মৌলভীবাজার-৩ আসন ও ২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে মৌলভীবাজার-৩ ও সিলেট-১ আসন থেকে বিপুল ভোটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০৬ সালের ৮ই জুন তিনি সংসদে দ্বাদশ বাজেট পেশ করে দেশের সংসদীয় ইতিহাসে সর্বাধিক সংখ্যক বাজেট পেশকারী হিসেবে রের্কড গড়েন।
তিনি দীর্ঘদিন দেশের অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন ছাড়াও দেশ-বিদেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোতেও নানা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন কৃতিত্বের সাথে। তাঁর জীবদ্দশায় দেশ ও বৃহত্তর সিলেট নিয়ে যে উন্নয়ন মহা পরিকল্পনা করেছিলেন তার অনেক গুলো বাস্তবায়ন হলেও পুরোটা বাস্তবায়ন করতে পারেননি। হঠাৎ করেই এক র্মমান্তিক সড়ক দূর্ঘটনায় নিভেযায় তার জীবন প্রদীপ, স্তব্ধ হয়ে যায় তার দেখা উন্নয়ন মহাপরিকল্পনার স্বপ্ন।