অভয় আশ্রম পরিচালনায় ব্যাংকে এফডিআর ২ কোটি টাকা
জেলায় মোট ১১টি অভয় আশ্রম
হাকালুকি ও বাইক্কা বিল অভয় আশ্রম পরিচালনাকারীদের
পাহাড়সম অভিযোগ
মিঠা পানি উধ্যুষিত মৌলভীবাজারের হাকালুকি, হাইল হাওর ও কুশিয়ারা নদীতে মিলে মাছের ১১ টি নিরাপদ অভয় আশ্রম রয়েছে। এসব অভয় আশ্রম পরিচালনা করতে পাহারাদার সংঙ্কট ও অর্থের অভাব ও মৎস নিধণের মত পাহাড়সহ অভিযোগ তুলেছেন অভয় আশ্রম পরিচালনাকারীরা। সম্প্রতি জেলা মৎস কার্যালয়ে একটি কর্মশালায় মৎস নিধনসহ নানা সমস্যার কথাও তুলে ধরেন তারা।
জানা যায়, মিঠা পানির অন্তর্ভুক্ত মৌলভীবাজারে দেশের বৃহত্তম হাওর হাকালুকিতে মাছের ৮টি ও হাইল হাওরের অন্তর্ভুক্ত বাইক্কা বিলে ১টি সহ স্থায়ী মোট ৯টি অভয় আশ্রম রয়েছে। এছাড়াও অস্থায়ী ২টি অভয় আশ্রমের মধ্যে কমলগঞ্জ উপজেলায় ১টি ও কুশিয়ারা নদীতে আরো ১টি আশ্রম রয়েছে। পাহাড়সহ সমস্যার কথা তুলে ধরে আশ্রম পরিচালায় নিয়োজিতরা বলেন,
অভয় আশ্রম পরিচালনা করার মত স্থায়ী কোন লোকবল না থাকা ও অর্থ সঙ্কটের কারণে আশ্রমগুলোকে ঠিকমত তদারকি করা যাচ্ছে না। যার কারণে প্রতিনিয়ত লুট হচ্ছে মাছ।
হাকালুকি হাওরের স্থায়ী ৮টি অভয় আশ্রমের মধ্যে বড়লেখা উপজেলার কইয়ারকোনা বিল,মইয়া জুরি বিল,নিমু বিল,তেকুনী বিল,টুলার বিল ও জুড়ি উপজেলার মাইছলার ডাক বিল, আগদার বিল ও কুলাউড়া উপজেলায় অবস্থিত কাংলি গবরকুরি বিল ও শ্রীমঙ্গল উপজেলায় বাইক্কা বিল নামের আরেকটি স্থায়ী অভয় আশ্রম রয়েছে।অস্থায়ী ২টি অভয় আশ্রমের মধ্যে জেলার কমলগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত গাইনা বিল ও মৌলভীবাজার সদর উপজেলার কুশিয়ারা নদীর মনূ মুখের ১৮ নং খন্ডে অবস্থিত ১২০ শতাংশ জলাভূমিতে আরেকটি অভয় আশ্রম।
এদিকে বাইক্কাবিল পরিচালনা করতে শ্রীমঙ্গল উপজেলায় জেলা প্রশাসক ও জেলা মৎস কর্মকর্তার যৌথ একাউন্টে ১ কোটি ৪৭ লাখ, ও জুড়ীতে ৯ লাখ বড়লেখায় ১৩ লাখ টাকাসহ অন্যান্য উপজেলা মিলে প্রায় ২ কোটি টাকার এফডিআর রয়েছে। এসব হিসেবের লভ্যাংশ থেকে অভয় আশ্রম পরিচালনার যাবতীয় ব্যয়ভার পরিচালিত হয়।
শ্রীমঙ্গল উপজেলার বাইক্কা বিল অভয় আশ্রম পরিচালনা কমিটির সভাপতি মিন্নত আলী বলেন, অর্থ সঙ্কটের কারণে জেলার এই বিশাল মৎস ভান্ডারখ্যাত বাইক্কা বিল অভয় আশ্রম পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে না। তিনি বলেন, বিল পরিচালনা করতে বড় একটি অংশের টাকা এফডিআর করে রাখা আছে। কিন্তু এই টাকা থেকে আগে আসতো ৮ থেকে ৯ শতাংশ লাভ। এখন আসে ৩ থেকে ৪ শতাংশ। তিনি এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, অর্থ সঙ্কটের কারণে আগের মত প্রয়োজনীয় পাহারাদার নিয়োগসহ ও বিল মনিটিরিং করা যাচ্ছে না। বিলে আগে বর্ষা মৌসুমে ৪ জন পাহারাদার নিয়োজিত থাকতো, এখন আছেন মাত্র ২জন। তিনি বলেন, একসময় একটি আলাদা মনিটরিং কমিটি পাহারাদারসহ সব কিছু দেখভাল করতো। এখন মনিটরিং কমিটিও বাদ পড়েছে। আমাদের নিজ খরচে মাঝে মধ্যে গিয়ে দেখে আসি।
হাকালুকির আগদার বিল অভয় আশ্রম সমিতির সাধারণ সম্পাদক মানিক আহমদ বলেন, বর্ষাকালে বিলে পাহারাদার রাখতে হয়। কিন্তু আমাদের বিলে পাহারাদার নেই। হাওরের মাইছলার ডাক বিল অভয় আশ্রমের সদস্য ফয়েজ মিয়া বলেন, আমরা নিজেরা ইঞ্জিন চালিত নৌকা দিয়ে নিজ খরচে মাঝে মধ্যে আশ্রম পাহারা দেই।
জুড়ী উপজেলা মৎস কর্মকর্তা মোঃ মনিরুজ্জামান বলেন, হাকালুকির আকদার বিল ও নিমু বিল খনন করা খুবই প্রয়োজন। এ দুটি বিল শুষ্ক মৌসুমে শুকিয়ে যায়। আমাদের জনবলের কারণে কাজের পরিধি কমে আসছে। তিনি বলেন, হাকালুকি অধ্যুষিত বড়লেখা, জুড়ী ও কুলাউড়া উপজেলা মৎস অফিসে ৬ জন করে মোট ১৮ জন কর্মকর্তা-কর্মচরী প্রয়োজন। কিন্তু ৩ উপজেলায় আছেন মাত্র ৬ জন।
মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক ডক্টর উর্মি বিনতে সালাম বলেন, অভয় আশ্রমের সংশ্লিষ্ট সবাই ও জেলা কমিটিকে নিয়ে শিগরই আমরা একটি সভা করছি। সভায় হাওরের সমস্যা গুলো জেনে যথাযত ব্যবস্থা নেয়া হবে।