আব্দুল ওয়াদুদ।। মৌলভীবাজার: বুধবার, ২৮শে অগ্রহায়ণ ১৪২৩।। আসন্ন জেলা পরিষদ নির্বাচনে ৮ নং ওয়ার্ডের সদস্য পদপ্রার্থী রওনক আহমদ। যিনি রাজনগর উপজেলার ফতেপুর, উত্তরভাগ, পাঁচগাও, মুন্সিবাজার ও রাজনগর সদর ইউনিয়ন মিলে এই ৫টি ইউনিয়নে আরো প্রতিদ্বন্ধী মোট ৮ জন প্রার্থীর সাথে ৮ নং ওয়ার্ড নিয়ে ভোটের ময়দানে লড়াই করবেন আগামী জেলা পরিষদ নির্বাচনে।
জেলা পরিষদ নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই রাজনগর উপজেলাসহ পুরো জেলা নির্বাচনী আলোচনায় মুখরিত হচ্ছে। জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদ প্রার্থী থেকে শুরু করে ওয়ার্ড সদস্যরা ও নির্ঘুম রাত পার করছেন এই সময়ে। এমনি এক সদস্য প্রার্থী রওনক আহমদ। রওনক রাজনগর উপজেলার পাঁচগাও ইউনিয়নের বাদে কুবঝাড় (বানারাই) গ্রামের নাজির আহমদের পুত্র। ৪ বোন ২ ভাইয়ের মধ্যে তিনি প্রথম। রওনকের একমাত্র ছেলে ওমর আহমেদ বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার।
বালাগঞ্জ প্রাইমারী স্কুল থেকে স্কুল জীবনের এক ধাপ শেষ করে সিলেটের রাজা জিসি হাইস্কুল থেকে ১৯৭৬ সালে মাধ্যমিক শেষ করেন রওনক। এর পর সিলেট এমসি কলেজ থেকে ১৯৭৮ সালে আইএ এবং পরবর্তীতে ১৯৮২ সালে ১৪তম ব্যাচে চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইসলামের ইতিহাসে বিএ অনার্স পর্ব শেষ করেন। বর্তমানে একজন সফল ব্যবসায়ী।
তিনি ‘কয়ারেক্স প্রাইভেট লিমিটেড’এর চেয়ারম্যান, ‘আর এফ ও ফ্রুট্স এন্ড ভেবারেজ লিমিটেড’ ও ‘আর এফ ও একুয়া পিওর’ চেয়ারম্যানের দ্বায়িত্বে চালানোর পাশাপাশি ‘সিলকো’-এর প্রোপাইটর-এরও দ্বায়িত্বে আছেন। এতোগুলো দায়ীত্ব আর এতসব কাজের ফাঁকেও তিনি নিজ এলাকায় ওয়ার্ড সদস্য হবার জন্য অন্যান্য প্রার্থীদের সাথে ভোট লড়াইয়ের ময়দানে নেমেছেন। তাই কৌতুহলে ইচ্ছে জাগলো তার কাছ থেকে কিছু জানার। আসলে কি চান তিনি? আবার জনগণকেও বা কি দেবার ইচ্ছে আছে তার (?)।
এক সন্ধ্যায় তার সাথে আলাপচারিতা হলে জেলা পরিষদ নির্বাচন প্রসঙ্গ চলে আসে। তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, তিনি একজন ওয়ার্ড সদস্য প্রার্থী। তখন কিছুটা সময় চাই তার কাছে এবং প্রশ্ন করি। বিশাল বিশাল ব্যবসা বানিজ্য রেখে ও একজন স্ব শিক্ষিত মানুষ হয়ে জেলা পরিষদ নির্বাচনে তার দাড়ানোর কারনটা কি? রওনক জানালেন, রাজনগর তথা এলাকার মানুষের মৌলিক সমস্যাগুলি দেখে আমার হৃদপিন্ডে নাড়া দেয়, প্রতিনিয়ত আমাকে ভাবিয়ে তুলে। এই দৃষ্টিকোন থেকে আমার কাছে মনে হলো এলাকায় অভিভাবকের অভাব। তাই আমি একজন প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন চাই। এতে ৫টি ইউনিয়নের আমার বন্ধু-বান্ধবসহ সকলে মিলে আমাকে আরো অনুপ্রানিত করেন।
তিনি বলেন, জেলা পরিষদ স্থানীয় সরকারের একটি সর্বোচ্চ ফোরাম। এই ফোরামে অবশ্যই সুশিক্ষিত, পরিশ্রমি ও যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তি থাকা বাঞ্চনীয়। এদিক দিয়ে যিনি যত এগিয়ে থাকবেন নির্বাচিত হলে স্থানীয় চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যদের ‘প্রজেক্ট’গুলো এনে জেলা পরিষদে উপস্থাপন করবেন। এর আলোকে যে আঙ্গিকে তিনি উপস্থাপন করবেন সেই আঙ্গিকেই তাকে ‘স্ক্রিম’ দেয়া হবে। যদি তিনি শিক্ষিত হন তবে কাঙ্খিত ফল পাবেন।
জেলা পরিষদ শক্তিশালী করণে তিনি বলেন, জেলা পরিষদ স্থানীয় সরকারের একটি শক্তিশালী ফোরাম। যদি এই ফোরামে বিভিন্ন পেশাজিবীর সমন্বয় ঘটতো তবেই ফোরাম আরো শক্তিশালী হতো।
নিজ এলাকার সমস্যার কথা জানতে চাইলে রওনক বলেন, রাজনগরে চা শ্রমিকরা নানা সমস্যায় জর্জরিত। চা শ্রমিকরা তাদের ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। চা শ্রমিকদের ছেলে-মেয়েদের শিক্ষা-দিক্ষায় যেভাবে মনোযোগী থাকার প্রয়োজন ছিল, তারা তার থেকে আরো বিমূখ আরো অবহেলিত। তিনি বলেন, আমার মনে হয় চা শ্রমিকদের দু-একজন উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হলেও তাদের হেয় করে দেখা হয়। পড়াশুনার ব্যাপারে বাগান মালিকরা মনে করে তাদের দ্বায়িত্ব সরকার নেবে। সরকারের ধারনা যেহেতু এটি ব্যক্তি মালিকানাধিন বাগান, ওদের শ্রমে বাগান উপকৃত হচ্ছে তবে ওদের পড়াশোনা বাগান মালিকরাই চালাক।
রাজনগর একটি হাওর অধ্যুষিত উপজেলা উল্যেখ করে রওনক এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন, আমাদের উপজেলা হাওর বেষ্টিত এলাকা। এই জনপদে শিক্ষার আলো সঠিক মাত্রায় না পৌছায় যুগ যুগ ধরে অবহেলিত শত সহস্র নারী-পুরুষ। বিশেষ করে দিন মজুর আর জেলের দুঃখের অন্ত নেই। উপজেলার রাজনৈতিক বিভক্তিকে জনসাধারণের আরেকটি সমস্যা উল্যেখ করে তিনি বলেন, একটি দলে ৩/৪ টি গ্রুপিং থাকার কারণে উন্নয়ন গতি হারিয়ে ফেলে। এই বিভক্তি দুর করে সম্মিলিভাবে কাজ করতে হবে। আরেকটি সমস্যা উল্যেখ করতে গিয়ে তিনি মাদকাসক্তের প্রতি ইঙ্গিত দিয়ে বলেন, মাদকাসক্তি দিন দিন বেড়েই চলেছে। বিশেষ করে সুধখোরদের কাছ থেকে গ্রামের সাধারণ মানুষ ঋণ নিয়ে নিঃস্ব হয়ে পথে বসে। এদের আইনের আওতায় এনে গ্রামের সাধারণ মানুষকে রক্ষা কল্পে সরকারি তরফ থেকে আসা সকল বরাদ্ধ থেকে সঠিকভাবে দিন মজুর ও খেটে খাওয়া মানুষদের হাতে পৌছে দিলে ন্যুনতম পরমানে হলেও গ্রামের মানুষ উপকৃত হবেই।
রাজনগর বাজারকে কিভাবে ‘ডেভেলাপ’ করা যায় জানতে চাইলে তিনি বলেন, রাজনগর বাজারকে ব্যক্তি বিশেষের নিয়ন্ত্রনে রাখার চেষ্টা চলছে। এই নিয়ন্ত্রন অব্যাহত রাখার জন্য ওই ব্যক্তিরা সন্ত্রাসী লালন করছে। ওই কারণে রাজনগর বাজার ঝিমিয়ে আছে। এতে করেই সাধারণ মানুষ ব্যবসা-বানিজ্য নিয়ে মৌলভীবাজার মুখী হয়ে পড়ছেন।
বিজয়ী হলে সত্যি তিনি কি করবেন, এমন প্রত্যাশা রাখলে, আবেগময়ী কন্ঠে রওনক বলেন-“সামাজিক, আর্থিক এবং ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় আমি সচেষ্ট থাকবো। বর্তমান সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশের আলো প্রত্যেকের ঘরে ঘরে পৌছে দেবার চেষ্টা করবো। সন্ত্রাস ও মাদকের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেবো। প্রত্যেকটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের পরামর্শ নিয়ে স্ব-স্ব ইউনিযনের সমস্যা চিহ্নিত করে তাদের সাথে নিয়েই জেলা পরিষদে আমাদের দাবী তুলে ধরে বাস্তবায়ন করেই ছাড়বো ইনশাআল্লাহ।