মৌলভীবাজার অফিস।। শুক্রবার, ১৭ই চৈত্র ১৪২৩।। মৌলভীবাজার পৌর শহরের বড়হাটে তিন দিন ধরে ঘিরে রাখা জঙ্গি আস্তানায় দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত অভিযান চলাকালে দূর থেকে গুলি ও বিস্ফোরণের আওয়াজ শোনা যায়। শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে একটি বড় বিস্ফোরণ ঘটে। পরে আবার দুপুর ১২টা থেকে টানা ৩০মিনিট গুলির শব্দ শোনা যায়। ওইসময় আরও তিন দফা বিস্ফোরণ ঘটে। দুপুর একটার দিকে অভিযানস্থল থেকে আহত এক পুলিশ সদস্যকে বের করে আনা হয়। আহত কাওসার আহমদ মৌলভীবাজার সদর মডেল থানার কনস্টেবলের দ্বায়িত্বে আছেন। তাকে মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কাওসারের গলায় বোমার স্প্রিন্টার লেগেছে বলে পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে। এর আগে শুক্রবার সকাল ৮টার দিকে সোয়াত ও বোমা নিস্ক্রিয়কারী দলের সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর কিছু সময় পর অভিযান শুরু হয়। পুলিশের পক্ষ থেকে এ অভিযানের নাম দেওয়া হয় ‘অপারেশন ম্যাক্সিমাস’। স্থানীয়রা জানান, সকাল ১০টা থেকে ওই এলাকায় গুলির শব্দ শোনা যাচ্ছিল। অভিযান শুরুর আগে আস্তানার আশপাশের লোকজনকে নিরাপদ স্থানে যেতে মাইকিং করে পুলিশ। এসময় স্থানীয়দের দরজা-জানালা বন্ধ করে ঘরে থাকতে বলা হয়। গণমাধ্যমকর্মীরা ঘটনাস্থল থেকে প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে অবস্থান করেন। অভিযানকে কেন্দ্র করে ওই এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। সোয়াত সদস্যরা আসার আগে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম এবং পুলিশের সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি কামরুল আহসানও ঘটনাস্থলে পৌঁছান। অভিযানের সময় উৎসুক জনতা যাতে অভিযানস্থলে ভিড় করতে না পারে- সে বিষয়টি সকাল থেকেই তদারক করেন মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাহজালাল।
এর আগে ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম গনমাধ্যমকে জানান, বড়হাট এলাকার জঙ্গি আস্তানায় প্রচুর বিস্ফোরক মজুদ রয়েছে। ওই আস্তানায় ‘অপারেশন ম্যাক্সিমাস’ শুরু হয়েছে। তবে অভিযান শেষ হতে বিলম্ব হতে পারে। পরিস্থিতি অত্যন্ত জটিল। শুক্রবার বড়হাট এলাকায় ব্রিফিংয়ের সময় সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান। মনিরুল বলেন, ভেতরে একাধিক জঙ্গি অবস্থান করছে বলে তারা জানতে পেরেছেন। গত বৃহস্পতিবার রাতেও তাঁরা গুলি ছুঁড়েছে। তিনি আরও বলেন, জঙ্গি আস্তানায় একাধিক কক্ষ রয়েছে। কক্ষগুলোতে বিস্ফোরক রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিস্ফোরক বিষয়ে বিশেষজ্ঞ কোনো জঙ্গি ভেতরে রয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে আছে।
কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান জানান, সিলেট জঙ্গিবিরোধী অভিযানকালে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনার সূত্র ধরে মৌলভীবাজার শহরের বড়হাট এলাকার জঙ্গি আস্তানার সন্ধ্যান পাওয়া যায়। বড়হাট এলাকার আবুশাহ দাখিল মাদ্রাসা গলির দোতলা ওই বাড়িতে দ্বিতীয় জঙ্গি আস্তানাটি অবস্থিত। গত মঙ্গলবার দিবাগত রাতে বাড়িটি জঙ্গি আস্তানা হিসেবে শনাক্ত করে ঘিরে রাখে পুলিশ। বুধবার ওই আস্তানা থেকে পুলিশকে লক্ষ্য করে গ্রেনেড ছোড়া হয়। বৃহস্পতিবার দিনভর বাড়িটি থেকে কোনো সাড়াশব্দ পাওয়া না গেলেও গভীর রাতে গুলি-বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়।